নিউজবাংলা: ১৬ মে, সোমবার:
বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি:
বিশ্বনাথের শহরতলীতে এক লন্ডন প্রবাসীর ৩য় বিয়ে নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। লন্ডন প্রবাসী আবিদ আলী উরফে আকদ্দুছ আলী (৬২) এবার ৩র্য় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করেছেন তার নাতনীর বয়সী নাবালিকা স্বপ্না বেগমকে।
এই ৩য় বিয়ে রেজিষ্ট্রি হয়নি বলে বিয়ের বৈধতা নিয়েও নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অথচ লন্ডনে প্রথম স্ত্রী ও দেশে ২য় স্ত্রী থাকা স্বত্ত্বেও তাদের বিনা অনুমতিতে ৩য় বিয়ে করে বেশ ভাল ভাবেই ঘর সংসার করছেন বিয়ে পাগল এই লন্ডন প্রবাসী।
এদিকে, মানবাধিকার সহ বিভিন্ন সংস্থা এই বিয়ে নিয়ে যেমন অনুসন্ধান চালাচ্ছে, ঠিক তেমনি নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে প্রবাসী আকদ্দুছ আলীর বিরুদ্ধে তার ২য় স্ত্রী রাহেলা বেগম বিশ্বনাথ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এবং শীঘ্রই বৃটিশ হাই কমিশনে এব্যাপারে অভিযোগ করবেন বলে জানা গেছে।
জানাগেছে, বিশ্বনাথ উপজেলার বিশ্বনাথ ইউনিয়নের মুফতিরগাঁও গ্রামের মৃত হরমুজ আলীর পুত্র আবিদ আলী উরফে আকদ্দুছ আলী জনৈক ইদ্রিস আলীকে বাবা ডেকে দীর্ঘ প্রায় ৩দশক পূর্বে লন্ডনে পাড়ি জমান। আর সেই সুবাদে বর্তমানে তিনি বৃটেনের একজন স্থায়ী নাগরিক। যুবক বয়সে আকদ্দুছ আলী দেশে এসে বিয়ে করেন বিশ্বনাথের কল্যানপুর গ্রামের জনৈকা কাছামালা বেগমকে। উক্ত কাছামালা বেগমের ঘরে বর্তমানে আকদ্দুছ আলীর রয়েছে ৬ সন্তান ও প্রায় এক ডজন নাতি-নাতনী। সন্তানদের প্রায় সকলেই বিবাহিত। এরপর আকদ্দুছ আলী ১ম স্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে আপন খালাতো বোন জনৈকা রাহেলা বেগমকে বিয়ে করেন। এই স্ত্রীর ঘরে রয়েছে তার ৩ সন্তান। পূর্বেও স্ত্রীর সন্তানদের মতো এই স্ত্রীর সন্তানরাও বৃটেনের স্থায়ী নাগরিক। ২ স্ত্রী থাকা স্বত্ত্বেও গত প্রায় ৩বছর পূর্বে আকদ্দুছ আলী দেশে এসে ৩য় বারের মতো বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। এবার তার পচন্দ হয় নাতনীর বয়সী সুন্দরী কিশোরী স্বপ্না বেগমকে। দিনমজুর পরিবারের মেয়ে স্বপ্না প্রবাসী আকদ্দুছ আলীর মিষ্টি কথায় আর স্বপ্নের দেশ লন্ডনের কথা ভেবে বিয়েতে সম্মতি দেয়। প্রবাসী আকদ্দুছ আলী এই স্ত্রীকে উপজেলার নতুন বাজারে নিজ বাসায় তুলতে না পারায় ৩য় স্ত্রীর বাবার বাড়ি বিশ্বনাথের পূর্ব শ্বাসরাম গ্রামে বাথরুমে অত্যাধুনিক টাইলস ফিটিংস করে সেখানে বসবাস করতে থাকেন। এক সময়ে পূর্ব শ্বাসরাম গ্রামে আকদ্দুছ আলীর এমন ঘন ঘন আসা যাওয়া ও রাত্রী যাপন বিষয়টি এলাকায় কানাঘোষা শুরু হলে নিরবে বিলাতে পালিয়ে যান আকদ্দুছ আলী। এবার মাস দুয়েক আগে দেশে এসে ৩য় স্ত্রীকে নিয়ে তার বাবার বাড়ি থাকার সুযোগ করতে না পারায় ২য় স্ত্রীর কাছে ৩য় বিয়ের জন্য লিখিত অনুমতি চান বিয়ে পাগল এই প্রবাসী। এতে ২য় স্ত্রী রাহেলা বেগম রাজি না হওয়ায় নানান ফন্দি ফিকির শুরু করেন তিনি। ২য় স্ত্রীর সাথে বাসায় না থেকে কখনও ৩য় স্ত্রীর বাড়িতে, আবার কখনও মুফতিরগাঁও গ্রামের নিজ বাড়িতে ভাড়াটিয়েদের সাথে বসবাস করছেন।
বিশ্বনাথ থানায় দায়েরকৃত লিখিত অভিযোগে প্রবাসী আকদ্দুছ আলীর ২য় স্ত্রী রাহেলা বেগম উল্লেখ করেন, গত কয়েক বছর ধরে আকদ্দুছ আলী বিয়ের অনুমতি দেওয়ার জন্য তাকে (রাহেলা) চাপ দিয়ে আসছেন। এতে তিনি সম্মতি না দেওয়ায় তাকে লন্ডনে থাকা তার ৩ বৃটিশ সন্তানদেরকে যোগাযোগের কোন সুযোগ দিচ্ছেন না আকদ্দুছ আলী। বরং বিভিন্নভাবে মানষিক নির্যাতন করছেন এবং তাকে তালাক দিয়ে বাসা ছাড়ার হুমকি এমনকি মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছেন। এতে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন।
এদিকে, আকদ্দুছ আলীর ৩য় স্ত্রী স্বপ্না বেগমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার স্বামী বিয়ের পূর্বে আমাকে লন্ডন নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এবং বর্তমানে আমি ছাড়া তার আর কোন স্ত্রী নেই। ১ম স্ত্রী কিছু দিন পূর্বে ইন্তেকাল করেছেন বলে আমি শুনেছি। বিয়ে কোথায় রেজিষ্ট্রি হয়েছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এব্যাপারে প্রবাসী আকদ্দুছ আলীর সাথে মোবাইল ফোনে তার একাধিক বিয়ের প্রসঙ্গে ও ৩য় বিয়ের রেজিষ্ট্রি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বিশ্বনাথের এক সাংবাদিককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ও বিভিন্ন ব্যক্তির মোবাইল ফোন থেকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।
লিখিত অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বিশ্বনাথ থানার এসআই মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
নিউজবাংলা/ একে
Comments
comments