Breaking News

আমি ঋণখেলাপি নই। সরকার যাই করুক আমাদের দল নির্বাচনে যাবে।…… কাদের সিদ্দিকী’

নিউজবাংলা: ১৯ অক্টোবর, সোমবার:

ঢাকা: অগ্রণী ব্যাংকের যে ঋণের জন্য বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে খেলাপি হিসেবে অভিযুক্ত করে মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে, সেই অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন তিনি।
সোমবার বিকেলে কাদের সিদ্দিকী মতিঝিলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি করেন করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংকের চিঠি দেখিয়ে এই দাবি করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীর সর্বাধিনায়ক বীরউত্তম কাদের সিদ্দিকী আক্ষেপ করে বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। তারাও আপিল ও রিভিউয়ের সুযোগ পাচ্ছে। আমি কি যুদ্ধাপরাধীদের চেয়েও অপরাধী যে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাব না।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগকারী এই নেতা আরও বলেন, ‘আমি ঋণখেলাপি নই। আমরা দায়মুক্ত। সরকার যাই করুক আমাদের দল নির্বাচনে যাবে।’
প্রসঙ্গত, ১৩ অক্টোবর টাঙ্গাইল-৪ আসনের উপনির্বাচনের প্রার্থী কাদের সিদ্দিকীর প্রার্থিতা ঋণখেলাপির অভিযোগে বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। এর বিরুদ্ধে কাদের সিদ্দিকী নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন। নির্বাচন কমিশন ১৮ অক্টোবর কাদের সিদ্দিকীর আপিল খারিজ করে দেয়।
নির্বাচন কমিশনের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মঙ্গলবার অথবা বুধবার আদালতে যাওয়ারও ঘোষণা দেন কাদের সিদ্দিকী, একাত্তরের রণাঙ্গনে যাকে বাঘা সিদ্দিকী নামেও ডাকা হতো।
সংবাদ সম্মেলনে কাদের সিদ্দিকী বাংলাদেশ ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংকের চিঠির কপি সাংবাদিকদের দেন।
১৩ সেপ্টেম্বর কাদের সিদ্দিকীকে দেওয়া অগ্রণী ব্যাংকের চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে যে, ‘আপনার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সোনার বাংলা প্রকৌশলী সংস্থা প্রাইভেট লিমিটেডের ১২/০৮/২০১৫ ইং তারিখের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৬/০৮/২০১৫ ইং তারিখের ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় সোনার বাংলা প্রকৌশলী সংস্থা প্রাইভেট লিমিটেডের টার্ম লোন ও ওডি কার্যাদেশ হিসাবদ্বয়ের কস্ট অব ফান্ড সংরক্ষণপূর্বক এবং রুগ্ন শিল্পের ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক আয়খাত ডেবিট না করার বিধান থাকায় আয়খাত ডেবিট না করে মওকুফ অবশিষ্ট ১০,৮৮,২৬,৪২৩ (দশ কোটি আটাশি লক্ষ ছাব্বিশ হাজার চারশত তেইশ) টাকা ১০% হার সুদে ১০ (দশ) বছর মেয়াদে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনসাপেক্ষে পরিশোধের বিষয়টি অনুমোদন করা হলো।’
অগ্রণী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. রুহুল আমিন খান স্বাক্ষরিত চিঠিতে কাদের সিদ্দিকীকে আরও জানানো হয়, ‘ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক মওকুফ অবশিষ্ট দায় পরিশোধের জন্য ১০ বছর সময় প্রদানে অনাপত্তি প্রদান করা হয়েছে। ফলে আপনার প্রতিষ্ঠানের নামীয় বর্ণিত ঋণ হিসাব পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্তের সময় অর্থাৎ ২৬/০৮/২০১৫ তারিখ হতে অশ্রেণীকৃত বলে বিবেচিত হবে।’
কাদের সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) উপনির্বাচন অংশ নেওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিলে ১২ অক্টোবর অগ্রণী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক এস এম জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে কাদের সিদ্দিকীকে আবার জানানো হয়, ‘১৩/০৯/২০১৫ ইং এর মাধ্যমে আপনাকে জানানো বিষয়টি সদয় অবগত করা হয় এবং ভুলবশত উক্ত পত্রে ঋণটি ২৬/০৮/২০১৫ ইং তারিখ থেকেই অশ্রেণীকৃত বলে বিবেচিত হবে বলে উল্লেখ করা হয়, যা ছিল আমাদের ধারণাগত ভুল।’
এই চিঠির প্রসঙ্গে কাদের সিদ্দিকী হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘ঋণ পুনঃতফশিলের পর কাউকে ঋণখেলাপি বলার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন চিঠিতে আমরা খুশি হয়েছিলাম। এমন পরিস্থিতিতে অগ্রণী ব্যাংক যে এমন কাজ করবে এটা আমাদের কল্পনাতেও ছিল না। ’
তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠি দেখিয়ে বলেন, ‘এই চিঠির মাধ্যমে অগ্রণী ব্যাংক মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক অগ্রণী ব্যাংকে জরিমানা করেছে।’
চিঠিতে দেখা যায়, ১১ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. নাজমুল হক স্বাক্ষরিত চিঠিতে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বলা হয়, কাদের সিদ্দিকীর ঋণ হিসাবদ্বয়ের খেলাপি স্ট্যাটাস পুনঃ পুনঃ পরিবর্তন করে সিআইবি ডাটাবেইজে ভুল তথ্য অন্তর্ভুক্ত করার কারণে সিআইবি সার্কুলার নং-০২/২০১১ তারিখ ০৪/০৫/২০১১ এর অনুচ্ছেদ ৪ অনুযায়ী আপনার ব্যাংকে কেন জরিমান করা হবে না তার ব্যাখ্যা আগামী ১৪/১০/২০১৫ তারিখের মধ্যে অত্র ব্যুরোকে অবহিত করার জন্য আপনাকে নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে।’
তবে কাদের সিদ্দিকীর সংবাদ সম্মেলনের পর সোমবার সন্ধ্যায় টেলিফোনে দ্য রিপোর্টকে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক নাজমুল হক জানান, ‘কাদের সিদ্দিকীর ঋণের বিষয়ে আমরা যে চিঠি অগ্রণী ব্যাংককে দিয়েছি তার মাধ্যমে এটা বোঝায় না যে, কাদের সিদ্দিকী ঋণখেলাপি নন। তিনি ঋণখেলাপি। বার বার কেন খেলাপি স্ট্যাটাস পরিবর্তন করা হয়েছে এ জন্য কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’
এই চিঠির পরও নির্বাচন কমিশন তার আপিল খারিজ করায় কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘ব্যাংক ও নির্বাচন কমিশনের এমন সিদ্ধান্ত আইনের শাসনকে মিন করে না। ব্যাংক চালানোর এটা ভাল পথ না। এই ঘটনা গভর্নরের পুরস্কারপ্রাপ্তিতে কালিমা লেপন করবে। প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কারপ্রাপ্তিকেও কালিমা লেপন করবে।’
এই ঘটনার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাচন কমিশনের ইচ্ছানুযায়ী সুষ্ঠু নির্বাচনের মস্তবড় সুযোগ হাতছাড়া হবে বলেও মন্তব্য কাদের সিদ্দিকীর।
সংসদ অকার্যকর ও জনগণের আস্থা নেই সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে দেওয়া এমন মন্তব্যের পরও কেন নির্বাচনে অংশ নিতে চাচ্ছেন? এর জবাবে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘মানুষের আস্থা নেই এটা প্রমাণের জন্যই সংসদে যাব।’
তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনের জন্য এতদূর অগ্রসর না হলে ব্যাংক যে এত ছলনা করতে পারে তা বুঝতাম না। ১০ নভেম্বরের নির্বাচনে কালিহাতীতে যে ব্যাপক ভোট কারচুপি হবে বা হবে না এটা প্রমাণেরও সুযোগ পেতাম না।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন— কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক বীরপ্রতীক হাবিবুর রহমান তালুকদার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক প্রিন্সিপাল ইকবাল সিদ্দিকী, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার ও ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক রিফাতুল ইসলাম দিপ।

নিউজবাংলা/একে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*