Breaking News

লাদেন হত্যা নিয়ে মার্কিন মিথ্যাচার। তোলপাড় বিশ্ব মিডিয়াতে !

নিউজবাংলা: ২১ অক্টোবর, বুধবার:

ঢাকা: বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদার সাবেক শীর্ষ নেতা ওসামা বিন লাদেনের হত্যাকাণ্ড ও এর আগে-পরের ঘটনা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে মার্কিন গণমাধ্যমগুলোতে। চলছে নতুন নতুন তথ্যের উপস্থাপন। নতুন এসব তথ্য সত্যি হলে বদলে যাবে লাদেন হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস। আর এই ঘটনায় ওয়াটার গেটের মতো বড় কেলেঙ্কারিতে জড়াতে পারে ওবামা প্রশাসন। আর তত্কালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের আচরণও অস্কার পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। গত ১৫ অক্টোবর দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন এমনই এক বিতর্ক তৈরি করেছে। ওই প্রতিবেদন নিয়ে রবিবার সিএনএনে একটি মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেছেন গণমাধ্যমটির জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক পিটার বার্গেন। তাঁর লেখাতেই উঠে এসেছে এসব কথা।
বার্গেন লিখেছেন, নিউইয়র্ক টাইমস বিশ্বের শীর্ষ দৈনিক। তাই তাদের সর্বশেষ প্রকাশিত ম্যাগাজিনের ‘আমরা ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যু নিয়ে প্রকৃতপক্ষে কি জানি?’ শিরোনামের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন অবশ্যই পাঠকদের আকৃষ্ট করবে। কারণ লাদেনের মৃত্যু নিয়ে শুধু মার্কিনিদের নয় সারা বিশ্বের মানুষের মধ্যেই তীব্র আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু টাইমসের রিপোর্টার জনাথন মাহলার তার প্রায় সাত হাজার শব্দের প্রতিবেদনে লাদেনের অনুসন্ধান ও হত্যা নিয়ে তেমন কোনো নতুন তথ্য উপস্থাপন করতে পারেনি।
প্রতিবেদনে মাহলার বলেছেন, লাদেনের মৃত্যু ঘটনা কতটা সত্য বা অসত্য ছিল এটা জানা প্রায় অসম্ভব ছিল। ওই ঘটনা এখন তথ্য আর পৌরানিক কাহিনীর মতো ভেসে বেড়াচ্ছে। এক্ষেত্রে তিনি গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের অনুসন্ধানী সাংবাদিক সিমুর হার্শের র লন্ডন রিভিউ অব বুকস-এ ১০ হাজার শব্দের নিবন্ধে লাদেনের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিও তুলে এনেছেন। হার্শের এই বই বলা চলে ওসামা বিন লাদেনের হত্যা নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। যেখানে মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের অজানা জ্যেষ্ঠ, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তথ্যের উপর ভিত্তি করা হয়েছে।
হার্শের বক্তব্য হলো, পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে লাদেন হত্যার অভিযানটি ছিল অনেকটা যাওয়া আর আসার মতো। নেভি সিলের সদস্যরা একজন নিরস্ত্র ও অক্ষম লাদেন গুলি করে হত্যা করেছেন মাত্র। পাকিস্তানি কর্মকর্তারাই বিন লাদেনকে হত্যার জন্য নেভি সিলের সদস্যদের হাতে তুলে দেয়। অ্যাবেটাবাদের বাড়িতে লুকিয়ে থাকা ওসামা বিন লাদেনকে ২০০৬ সাল থেকে দেখভাল করছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ২০১১ সালে অর্থের কাছে নতজানু হয়ে আড়াই কোটি ডলারের বিনিময়ে লাদেনকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিক্রি করে দেয় তারা। যোগসাজশে ছিলেন পাকিস্তানের জ্যেষ্ঠ জেনারেলরা। এমনকি লাদেনকে ধর্মীয় রীতিতে সাগরেও সমাহিত করা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের দাবি ছিল ইসলামাবাদে মার্কিন দূতাবাসের একজন তথ্যদাতা সিআইকে আভাস দেন যে বিন লাদেন অ্যাবোটাবাদ কম্পাউন্ডে বাস করছেন। সাংবাদিক হার্শ বলেছেন, এমন দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এছাড়া পাকিস্তানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের নেভি সিলের অভিযানের আগে জানানো হয়নি মার্কিন কর্মকর্তাদের এ দাবি সত্য নয়।
এ বিষয়ে সিএনএনের পিটার বার্গেনের বক্তব্য হলো, সাংবাদিক হার্শের দাবি মানলে বলতে হবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, তার শীর্ষ উপদেষ্টারা বিন লাদেনের অভিযান নিয়ে ব্যাপক মিথ্যাচার করেছে। যদি হার্শের দাবি সত্য হয় তবে বারাক ওবামা ও তার উপদেষ্টাদের জাতির সঙ্গে ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারির মতো বিরাট বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে।
পিটার বার্গেন নিজেও লাদেনকে অনুসন্ধান ও হত্যা নিয়ে একটি বই লিখেছেন। তিনি জানান, বইটি লিখতে তিনি মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বক্তব্য নিয়েছেন। যাদের নামও প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া নাম না প্রকাশের শর্তে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের অনেক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। এসব ব্যক্তিদের বর্ণনা অভিন্ন ছিল বলা চলে। তাহলে কি তারা গত চার বছর ধরে এই বড় সত্যকে সমন্বিতভাবে গোপন রেখেছেন।
যদি ধরা হয় এরা সবাই মিথ্যা বলেছে তবে তাদের মধ্যে একজন নারীও রয়েছেন হিলারি ক্লিনটন, যিনি আগামীতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টও হতে পারেন। তাদের তথ্য মানলে ভালো অভিনয়ের জন্য হিলারিকে অস্কার দেয়া যেতে পারে। কারণ বিন লাদেনকে হত্যার অভিযান চলাকালে হোয়াইট হাউস থেকে তার একটি ছবি তোলা হয়েছিল। যেখানে দেখা যায়, হিলারি এক ধরনের অবিশ্বাস ও উদ্বেগ নিয়ে মুখের উপর একটি হাত দিয়ে রেখেছেন।
পিটার বার্গেন বলেন, হার্শের দাবি অনুযায়ী লাদেনকে অ্যাবোটাবাদ কম্পাউন্ডে একটি মাত্র গুলি করা হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানি সেনারা গুঁড়িয়ে দেয়ার আগে আমি নিজে ওই কম্পাউন্ডে গিয়েছি। সেখানে ভাঙাচোরা কাঁচ পড়েছিল। অসংখ্য গুলির নিশানাও মিলেছে। এসব থেকে বোঝা যায় একটি নয় বরং অসংখ্য গুলিতে বিন লাদেনের মৃত্যু হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্ক
একটা প্রশ্নের উত্তর পাওয়া খুব সহজ। তা হলো পাকিস্তান যদি লাদেনকে আটকে রাখে এবং যুক্তরাষ্ট্র সেই তথ্য জানতে পারে তাহলে সবচেয়ে সহজ কাজ ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে লাদেনকে হস্তান্তর করা। এজন্য তো যুক্তরাষ্ট্রের পাকিস্তানে অভিযানের কোনো প্রয়োজন ছিল না। কারণ এই কাজটি পাকিস্তান অনেকবারই করেছে। বিশেষ করে আল-কায়েদার অন্যান্য নেতাদের ক্ষেত্রে। এই যেমন আল-কায়েদা নেতা খালিদ শেখ মোহাম্মদের কথাই ধরা যাক। তিনি ছিলেন নাইন ইলেভেন হামলার কমান্ডার (অপারেশন)। ২০০৩ সালে রাওয়ালপিণ্ডিতে এক অভিযানের পর তাকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে হস্তান্তর করা হয়। দুই বছর পর একইভাবে আরেক আল-কায়েদা নেতা আবু ফারাজ আল-লিবিকেও হস্তান্তর করে পাকিস্তান।
অন্যদিকে লাদেনের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছিল। কারণ ওই সময় দুইজন পাকিস্তানিকে হত্যার জন্য মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টিলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) কন্ট্রাক্টর রেমন্ড ডেভিসকে আটক করা হয়। কিছু মার্কিন কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, অভিযানের রাতে মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা কায়ানি এবং পাশার যোগাযোগ ব্যবস্থায় নজরদারি করছিলেন। আর এতে তারা যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন যাতে বোঝা যায়, তারা লাদেনের অ্যাবোটাবাদে লুকিয়ে থাকার বিষয়টি জানতেন না। হার্শ একটা বিষয় দাবি করেছেন, লাদেন অভিযানের পর হোয়াইট হাউস শুরুতে কিছু মিথ্যা বিবৃতি দেয়। ওই সময় তত্ক্ষণাত বলা হয়, লাদেন তার স্ত্রীকে মানব বর্ম হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু দ্রুত সেটা সংশোধন করা হয়।
হার্শের পক্ষে সমর্থন সামান্য
হার্শ তার ১০ হাজার শব্দের বক্তব্যে একটা নামের কথা বলেছেন। তিনি হলেন আসাদ দুররানী। তিনি ১৯৯০ এর দশকে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিস ইন্টিলিজেন্সের (আইএসআই) প্রধান। লাদেন হত্যাকাণ্ডের দুই দশক আগে। হার্শ তার বক্তব্যের সমর্থনের দুররানীর তথ্যকে সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।দুররানীকে ই-মেইল করা হয়েছিল তাকে নিয়ে হার্শের বক্তব্য সম্পর্কে জানতে। দুররানী জানান, তার কাছে এমন কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই যে, আইএসআই অ্যাবোটাবাদে লাদেনের লুকিয়ে থাকার বিষয়টি জানতো। তার কাছে এটা আপাতদৃষ্টিতে যুক্তিসঙ্গত মনে হয়েছে। দুররানী জানান, তার কাছে মনে হয়েছে, আমাদের সহযোগিতা ছাড়া লাদেন অভিযান চলতে পারে না। তবে কিছু মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, লাদেন অভিযান চালানোর সময় নেভি সিল বাহিনী স্টিলথ হেলিকপ্টারে ছিল। তারা পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বিভাগের রাডারকে ফাঁকি দিয়েই এই অভিযান চালিয়েছিল। আর কার্যত ওই রাতে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ওড়ার সামর্থ্য ছিল না। তাই পাকিস্তানের সহযোগিতা ছাড়াই লাদেনের বিরুদ্ধে অভিযান সম্পন্ন হয়েছিল খুব ভালভাবেই।
টাইমস ম্যাগাজিনে লাদেন অভিযান নিয়ে সাংবাদিক মহলের একটি প্রচ্ছদ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে আমির লতিফ নামের এক সাংবাদিককে উদ্ধৃত করা হয়। ৪১ বছর বয়সী এই সাংবাদিক জানান, অভিযানের পর তিনি স্থানীয় অনেক বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা তাকে জানিয়েছেন, অভিযানের আগে পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী তাদেরকে রাতে আলো নিভিয়ে বাড়ির ভেতরে অবস্থান করতে বলেছেন। এটা সত্যিই মজার। কারণ একমাত্র লতিফই এ ধরনের তথ্য জানিয়েছেন। অথচ আরো অনেক সাংবাদিক সেখানে গিয়েছেন যাদের রিপোর্টে এ ধরনের তথ্য পাওয়া যায়নি। আমি নিজেও অ্যাবোটাবাদে অনেক দিন কাটিয়েছি। স্থানীয় সাংবাদিক ইহসান খানের সঙ্গে কথা বলেছি। এই সাংবাদিকই প্রথম অ্যাবোটাবাদে একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার কথা প্রচার করেছিলেন। এই হেলিকপ্টারটি ছিল নেভি সিল বাহিনীর। তিনিই প্রথম এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। কিন্তু তিনিও এমন কোনো তথ্য পাননি যে, পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী বাসিন্দাদের বাড়ির ভেতরে অবস্থানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সূত্র :দৈনিক ইত্তেফাক

নিউজবাংলা/একে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*