নিউজবাংলা: ১২ জুন, রোববার:
ঢাকা: এবার বিশেষ অভিযানের আওতায় আনা হচ্ছে মোবাইল সিম। এর নেতৃত্বে থাকবে র্যাব ও পুলিশ। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন না করার পরও সচল রয়েছে কি না তা দেখা হবে এ অভিযানে। আবার বাজারে নিবন্ধিত সিম কিভাবে পাওয়া যাচ্ছে তাও খতিয়ে দেখবে র্যাব ও পুলিশ।
টানা কয়েক দিন এ অভিযান চলবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। বাজারে অনিবন্ধিত সচল সিম পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট অপারেটরকে জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মোবাইল সিম নিয়ে এ ধরনের অভিযানের উদ্যোগ বাংলাদেশে এটাই প্রথম। এদিকে বাজারে নিবন্ধিত সিম কিনতে পাওয়া যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ৩শ’ থেকে ৪শ টাকায় এসব সিম বিক্রি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব সিমের বেশিরভাগ পাওয়া যাচ্ছে মফস্বল এলাকায়। কম পড়াশোনা জানে এমন গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে তাদের নামে সিম নিবন্ধন করেছেন অসাধু রিটেইলরা। সেগুলোই এখন বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। মূলত অপরাধীদের আগ্রহ এখন এসব সিমের ওপর। বিষয়টি নিয়ে কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এখন পর্যন্ত অন্যের নামে নিবন্ধিত হয়েছে এমন মোবাইল সিম দিয়ে অপরাধের অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ ধরনের অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে অপরাধীদের খুঁজে বের করার কথা জানানো হয়েছে। সম্প্রতি এসব বিষয় নিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে সকল মোবাইল অপারেটরদের সিইও, বিটিআরসির প্রতিনিধিদল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিদল এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো ফেসবুকে স্ট্যাটাসে প্রকাশ করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। তিনি স্ট্যাটাসে জানান,
আমি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে সকল মোবাইল অপারেটরদের সিইও, বিটিআরসির প্রতিনিধিদল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিদল এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে একটি আলোচনা সভা করি। উক্ত সভার কিছু সিদ্ধান্ত আপনাদের মাঝে তুলে ধরলাম- সিম নিবন্ধনের কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ১১ কোটি ৬০ লাখ গ্রাহক তাদের সিম বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন করে তাদের নাগরিক দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রতিমন্ত্রী লিখেছেন, এখন আমাদের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে- আমরা ৭ই জুলাই হতে সকল মোবাইল অপারেটরদের মাধ্যমে কার কতটি সিম, কোন্ অপারেটরর তার জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে নিবন্ধিত হয়েছে তা প্রতিটি গ্রাহককে জানিয়ে দেয়া হবে। অনিবন্ধকৃত সিমের জরিমানা বিষয়ে তারানা লিখেছেন, আগামী সপ্তাহ থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর (পুলিশ-র্যাব) বিশেষ অভিযান পরিচালনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হবে- কোথাও কোনো প্রকার প্রিএক্টিভ সিম, অথবা ভেরিফাইড না করা সিম বন্ধ না পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট অপারেটরকে সিম প্রতি ৫০ ইউএস ডলার করে জরিমানা করা হবে। সিম পুনর্নিবন্ধন করার পরে অপরাধের পরিমাণ কমে গেছে বলে উল্লেখ করে তিনি লেখেন, এছাড়া আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, এক গুলশান থানাতেই মোবাইল ফোন ব্যবহার করে সংগঠিত অপরাধের অভিযোগ আগে যেখানে প্রতিদিন সর্বনিম্ন ২০টি করে আসতো সেখানে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন সম্পন্ন করার পর গত ১লা জুন থেকে ৭ই জুন এ ধরনের একটি মাত্র অভিযোগ দায়ের হয়েছে। যা আসলেই আমাদের আনন্দিত করে। এতে সরকারের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে লেখেন, ‘পাশাপাশি বিটিআরসির হিসাব মতে ১লা জুন থেকে ৭ই জুন অবৈধ ভিওআইপির পরিমাণ নজিরবিহীনভাবে কমে গেছে যার ফলে সরকারের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে বাজারে নিবন্ধিত সিম বিক্রি হচ্ছে এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অপারেটরের মুখপাত্র গতকাল মানবজমিনকে বলেন, রিটেইলারদের মাধ্যমে আমরা অল্প সময়ের মধ্যে বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের সিম নিবন্ধন করেছি। এখন রিটেইলরা যদি কিছু সংখ্যক গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করে তার পরিচয়পত্র দিয়ে একাধিক সিম নিবন্ধন করে তাহলে আমরা কি করতে পারি। তবে এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে কারও জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে বাংলালিংকের হেড অব কর্পোরেট কমিউনিকেশনস আসিফ আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, ‘বায়োমেট্রিক প্রজেক্ট বাস্তবায়নে বাংলালিংক দ্রুত এগিয়ে যায়। তাই এ প্রজেক্টের সঠিক মান বজায় রাখতে যে কোনো কার্যক্রমে বাংলালিংক পূর্ণ সহযোগিতা করবে।’ ভুয়া পরিচয়ে অথবা নিবন্ধন ছাড়া সিম কিনে নানা অপরাধে ব্যবহারের অভিযোগ বাড়তে থাকায় গ্রাহকদের তথ্য যাচাই ও সিম পুনঃনিবন্ধনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এরপর মোবাইল গ্রাহকদের সিমের তথ্য যাচাইয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ভাণ্ডার ব্যবহারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। গত ১৬ই ডিসেম্বর সিম নিবন্ধনে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু হওয়ায় আঙুলের ছাপ না দিয়ে এখন আর নতুন সিম কেনা যাচ্ছে না। পাশাপাশি বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে পুরনো সিমের পুনঃনিবন্ধন চলছে। সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে দেশে ব্যবসার পাশাপাশি সেবা দিয়ে যাচ্ছে ৬টি মোবাইল ফোন অপারেটর। এগুলো হচ্ছে- টেলিটক, গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি, এয়ারটেল ও সিটিসেল। এমজমিন –
নিউজবাংলা/একে
Comments
comments