নিউজবাংলা: ১৭ নভেম্বর, মঙ্গলবার:
ঢাকা : প্যারিস হামলার মূল পরিকল্পাকারি বলে যাকে চিহ্নিত করেছেন গোয়েন্দারা, সেই আবদেলহামিদ আবাউদ পুলিশের কাছে অচেনা নয়। এর আগে বেশ কয়েক বার পুলিশ তাকে ধরতে চেষ্টা করেছে কিন্তু কোনও না কোনও ভাবে চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়েছে সে। ২৭ বছরের আবাউদ বেলজিয়ামের নাগরিক, আদতে মরক্কোর অধিবাসী।
ফরাসি গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, অপরাধ জগতে আবাউদ আদৌ অচেনা মুখ নয়। এ বছর জানুয়ারি মাসে পূর্ব বেলজিয়ামের ভারভিয়ার্স শহরে আইএস ডেরার খোঁজে তল্লাশি চালানো হলে জঙ্গিদের সঙ্গে পুলিশের গুলির লড়াই বাধে। দু’জন জঙ্গি মারাও যায়। কিন্তু পালিয়ে গিয়েছিল নেতা আবাউদ। নিহত জঙ্গিদের ফোন রেকর্ড ঘেঁটেই পুলিশ তার নাম জানতে পারে। সেই মামলায় পলাতক আবাউদকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেয় বেলজিয়াম আদালত। কিন্তু আবাউদকে ধরে জেলে ঢোকানো আর হয়নি। বেলজিয়ামের জনবহুল এলাকা মোলেনবিকে আবাউদের বাড়িতেও তল্লাশি চালিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। পরে জানা যায়, গত বছর জানুয়ারি মাসে প্রথম বার সিরিয়া গিয়েছিল সে। সেখানকার একটি ভিডিও নিরাপত্তা কর্মীদের হাতে আসে। তাতে দেখা যায়, পশ্চিমী দেশগুলোতে হামলা চালানোর জন্য নতুন ছেলেদের তৈরি করছে আবাউদ। ছোট ভাই ১৩ বছরের ইউনুসকেও ওই দলে টেনে নিয়েছে সে। অথচ আবাউদের বাবা একটি ছোট দোকান চালান। ছয় ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার। সেখানে জঙ্গিযোগের নামগন্ধ নেই। আবাউদ যখন ইউনুসকে ফুসলে নিয়ে যায়, তখন পুলিশের কাছে ছেলে নিখোঁজ হওয়ার ডায়েরি করেছিলেন বাবা। আবাউদের দিদি ইয়াসমিনা সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, সিরিয়ায় যাওয়ার আগে ধর্মকর্ম নিয়ে মাথা ঘামাতে দেখা যায়নি আবাউদকেও। ব্রাসেলসের অভিজাত ‘স্যাঁ পিয়ের দ্য ইউসেল’ স্কুলের হাসিখুশি সরল ছাত্রটিই যে আজকের জঙ্গি আবাউদ, জেনে অবাক তার শিক্ষকেরাও। আইএস সংস্পর্শে এসে একেবারেই বদলে গিয়েছিল আবাউদ। আইএসের মুখপত্র ‘দাবিক’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হাতে কোরান ও আইএসের পতাকা নিয়ে তার ছবি প্রকাশিত হয়েছিল। ওই সাক্ষাৎকারে আবাউদ দাবি করে, গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দিয়ে বারবার পালিয়েছে সে। ওই সাক্ষাৎকারেই সে বলেছিল, ‘আমার খোঁজে গ্রিস, স্পেন, বেলজিয়াম ও ফ্রান্স বহু মুসলিমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের অনেকে আমাদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্তই নন। আল্লার কাছে প্রার্থনা করি, এই ধর্মযুদ্ধে আটক সব মুসলিম ভাই যেন রেহাই পায়।’ বেলজিয়ামের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জুড়ে তার ছবি ও নাম বহু বার প্রকাশ হওয়া সত্ত্বেও পুলিশ তাকে ধরতে পারেনি, গর্ব করে বলেছিল আবাউদ। গত বছর শরৎ কালেই আবাউদের বাড়িতে ফোন করে আইএস-এর তরফে জানানো হয়, আবাউদ নাকি শহিদ হয়েছে। ভুল খবর রটানোর লক্ষ্যেই যে এমন করা হয়েছিল, সেটা এখন পুলিশের কাছে স্পষ্ট। কারণ আবাউদ আরও বড় ঘুঁটি সাজাচ্ছিল। এ বছরে গ্রিস হয়ে ফের ইউরোপে ঢোকে সে। এপ্রিলে একটি চার্চে এবং অগস্টে প্যারিসগামী ট্রেনে হামলার ঘটনাতেও আবাউদ জড়িত ছিল বলে ধারণা গোয়েন্দাদের।
নিউজবাংলা/একে
Comments
comments