নিউজবাংলা: ২৪ নভেম্বর-মঙ্গলবার:
ঢাকা: বিশ্বের বেশিরভাগ মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে চলমান গোলযোগের প্রসঙ্গে টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ আমেরিকার চেয়েও নিরাপদ।
এই দেশে যাতে আইএসের মতো জঙ্গিগোষ্ঠী স্থান না পায় সে জন্য সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। এরআগে প্রধানমন্ত্রী অভিযোগের সুরে বলেছেন, কিছু দেশ এক সঙ্গে বসে, এমনকি আমাদের মন্ত্রীদের সঙ্গে বসে বলে- বাংলাদেশে আইএস আছে। তাদের বলতে চাই, অল্প ভুখণ্ডে যে বিশাল মানুষ বসবাস করছে, সেখানে আমরা শাস্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে পেরেছি, এটাই বড় ঘটনা।
দশম সংসদের অষ্টম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে সোমবার রাতে তিনি এসব কথা বলেন।
সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আরো বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে একাত্তরে স্বজনহারা যারা আছেন তারা শান্তি পাবেন। আমরা যদি এ বিচার করতে না পারি দেশ অভিশাপ মুক্ত হবে না। তাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকরের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ অভিশাপ থেকে মুক্তি পাচ্ছে।
রাত ৮টায় বক্তব্য শুরু করে ৮টা ৫২মিনিটে শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী। গত ৮ নভেম্বর শুরু হওয়া সংসদের এই অধিবেশন সোমবার ১২ কার্যদিবসে শেষ হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার ও রায় কার্যকর করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছি, রায়ও কার্যকর করছি। যুদ্ধাপরাধী রাজাকার আলবদররা যে অপরাধ করেছি সেই অপরাধের সীমা নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জনগণের ভোটের অধিকার অর্জন করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করে আজ দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়েছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় যারা বিশ্বাস করতো না, বাংলাদেশকে যারা পরাধীন করে রাখতে চেয়েছিল, যারা বাংলাদেশের বিজয় মেনে নিতে পারেনি, তারাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। যারা হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করেছিল, তাদের সহায়তায় বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল। তারপর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এক রাতে ১০ জনকে পর্যন্ত ফাঁসি দেয়া হয়েছিল। সামরিক ক্যু হয়েছে, বিচারের নামে প্রহসন করে সামরিক অফিসারদের হত্যা করা হয়েছে। এর ২১ বছর পর প্রথম সরকার গঠন করি।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল, বিচারও শুরু হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য, ৭৫-এর পর হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সংবিধান লঙ্ঘন করে জিয়াউর রহমান একাধারে সেনা প্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধান পদ নিয়ে ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের হাত থেকে মুক্তি দিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠিত করেন।
শাহ আজিজুর রহমান, আব্দুল আলিমের নাম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রীয় পতাকা তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে সুযোগ দেয়া হয়েছিল। এরশাদের সময় তাদের প্রতিযোগিতা এমনকি রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিযোগিতার সুযোগ দেয়া হয়। খালেদা জিয়ার সময় নির্বাচনের সুযোগ দিয়ে খুনি রশীদকে সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশকে জঙ্গিদের স্থান হতে দেব না। বিদেশি কূটনীতিকদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, কিছু দেশ এক সঙ্গে বসে, এমনকি আমাদের মন্ত্রীদের সঙ্গে বসে বলে- বাংলাদেশে আইএস আছে। তাদের বলতে চাই, অল্প ভুখণ্ডে যে বিশাল মানুষ বসবাস করছে, সেখানে আমরা শাস্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে পেরেছি।
জেএমবির সিরিজ বোমা হামলা, ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, খালেদা জিয়ার সময় খুন-খারাবি লেগেই থাকতো। সেই অবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হচ্ছি। আইন-শৃংখলা বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে আন্দোলনের নামে মানুষ খুন করেছিল। ৫৮২টি স্কুল পুড়িয়েছে, প্রিসাইডিং অফিসার, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যকে হত্যা করেছে, নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে।
২০১৫ সালেন জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৬৫ জন নিয়ে তিনি নিজ অফিসে অবরুদ্ধ করে রাখলেন। অবরোধ এখনো প্রত্যাহার করেননি। অবরোধ-হরতালের নামে তিনি প্রায় ৫০৮ জন মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছেন। এভাবে ধবংসযজ্ঞ চালিয়েছেন বাংলাদেশে। কিন্তু আন্দোলন আমরাও চালিয়েছি। আন্দোলনের নামে মানুষকে মারা, হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন তিনি। আবার বিদেশে যাওয়ার পর বিদেশি মারা শুরু। দুইজনকে হত্যা করা হয়েছে। যারা হত্যা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি আমরা। যারাই হত্যা করেছে খুঁজে বের করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিজয়ী জাতি। আমরা কারো কাছে মাথানত করবো না। মাথা উঁচু করে চলার জন্য যা যা করার করবো। আমরা মুক্তিযুদ্ধের মধ্যমে বিজয় অর্জন করা জাতি। সেই জাতি কেন অন্যের কাছে হাত পাতবে?
পদ্মা সেতুর অর্থায়নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন যেমন আইএস আইএস বলা হচ্ছে, তখন দুর্নীতির কথা বলা হয়েছিল। দুর্নীতি করতে আসেনি, নিজের ভাগ্য গড়তে আসিনি, এসেছি দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে। মানুষকে শোষন-নিপীড়ন থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য এসেছি। যে যতই ষড়যন্ত্র করুক, যে যতই কাজ করুক বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা কেউ রোধ করতে পারবে না। আমাদের নিম্ন আয়ের দেশ বলা হচ্ছে। আমরা নিম্ন থাকবো না । আমরা বাঙালি জাতি, আমরা উপরে উঠবো। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হবে।
নিউজবাংলা/একে
Comments
comments