নিউজবাংলা: ১৭ নভেম্বর, মঙ্গলবার:
ঢাকা : দেশে গণতন্ত্র ফিরে না এলে বাংলাদেশ অচিরেই ‘জঙ্গি’ রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
তিনি আজ সোমবার এক সভায় বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করতে চাই, বর্তমান সরকার যদি দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে সুযোগ না দেয়, জনগণের মৌলিক অধিকার প্রয়োগ করার যদি সুযোগ না দেয়, তাহলে এদেশ অচিরেই সত্যি সত্যি একটি জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত হবে। সেইসাথে লন্ডনে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে ফিরে এলেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলনের ডাক আসবে বলেও ইঙ্গিত দেন দলটির এই নেতা।
তিনি বলেন, বিএনপি একটি জনসমর্থনপুষ্ট দল। আমরা বিশ্বাস করি, শতকরা ৮০ জন মানুষ বিএনপি ও বেগম খালেদা জিয়ার সমর্থনে রয়েছে। তাদের এই সমর্থনকে যদি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় জনগণের ক্ষমতায় জনগণের সেবায় রূপান্তরিত করা না যায়, তাহলে সত্যি সত্যি আজকে সিরিয়ায়, লিবিয়ায়, ইয়েমেনে, ইরাকে, ইরানে যে ধরণের পরিস্থিতি হয়েছে, এই শেখ হাসিনার বাংলাদেশ অচিরেই সেরকম একটি জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতা ইয়াসিন আলী, আশরাফুর রহমান আশরাফ, জিল্লুর রহমান খোকন, এমএ সায়েম, খান মুনিরসহ নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে আজ এই আলোচনা সভা হয়।
সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি মুনির হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাইফুল ইসলাম পটু, মারুফ আল হাসান, আসাদুজ্জামান নেসার, সাদরেজ জামান, আনু মো. শামীম, লিটন মাহমুদ, সাহাবুদ্দিন মুন্না, রফিক হাওলাদার, আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, নজরুল ইসলাম প্রমুখ নেতারা বক্তব্য রাখেন।
দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে আজ গণতন্ত্র নেই। মানুষের বাক স্বাধীনতা নেই, আইনের শাসন নেই। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে পুলিশ বাহিনী। তাদের (সরকার) কোনো জনসমর্থন নেই। জাতীয় সংসদে কোনো নির্বাচিত সদস্য নেই। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিনাভোটে একটি স্বৈরাচারি সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারি (২০১৪) নির্বাচনের সময়ে আমি জেলখানায় ছিলাম। তখন পত্রিকায় দেখেছি, ক্ষমতাসীনদের নেতা-কর্মীরা বলেছিলেন, এটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। কোথায় গেলো সেই নিয়ম রক্ষার নির্বাচন? আজকে তারা দীর্ঘদিন, পারলে কিয়ামত পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার অভিলাষ ব্যক্ত করে যাচ্ছেন। গুম-খুনের মাধ্যমে তারা কিয়ামত পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে-এধরণের একটা দুরাশা তাদের মনে স্থায়ীভাবে বাসা বেঁধেছে। এহেন দুরাশার বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবানও জানান তিনি।
গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে আবার আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে- এমন ইঙ্গিত দিয়ে হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি জনসমর্থনপুষ্ট অত্যন্ত শক্তিশালী একটি গণতান্ত্রিক দল। আমরা আইনসম্মতভাবে আন্দোলনে বিশ্বাসী। বেগম খালেদা জিয়া এসে যেদিন আন্দোলনের ডাক দেবেন, ইনশাল্লাহ অতি অল্প সময়ের মধ্যে এই সরকারের কবর রচনা আমরা করবো।
বাংলাদেশে সব অর্জনের জন্য আমাদের রাজপথে নামতে হয়েছে। তাই আমি আশা করবো, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা আপনারা প্রস্তুত হোন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে এমন গণআন্দোলন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন গড়ে তুলবে যার ফলে সরকারের তখতে-তাউস খান খান হয়ে ভেসে যাবে।
বর্তমান সরকার ‘ভোটবিহীন’ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকার কঠোর সমালোচনা করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, আজ জাতীয় ঐক্য সময়ের দাবি। জাতীয় ঐক্য না করে কেবলমাত্র আপনারা (সরকার) যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন, দেশের মানুষ কখনোই মেনে নেবে না। আজ দেশের মানুষের ভোটাধিকার নেই। রাজধানীতে ঢাকায় সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ভোটডাকাতি করেছেন, ইতিহাসে এক কলঙ্কময় অধ্যায় রচিত হয়েছে।
দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আইনের সংশোধন প্রসঙ্গে সাবেক এমপি হাফিজউদ্দিন বলেন, এজন্য আইনের সংশোধন আনছেন যাতে করে প্রশাসনকে ব্যবহার করে কারচুপির মাধ্যমে বিনাভোটে নিজেদের দলের প্রার্থীদের বিজয়ী করে আনতে পারেন।
আমরা দৃঢ়তার সাথে সরকারকে হুশিয়ার করে দিতে চাই- জাতীয় সংসদ ও ঢাকা-চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন যেভাবে করেছেন, আগামী দিনে এ ধরনের নির্বাচনের বিরুদ্ধে আমরা শক্তভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলবো। আগামী দিনে আপনাদের অত্যাচার-নির্যাতনের উপযুক্ত জবাব বিএনপি রাজপথে দেবে। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবণতির জন্য ক্ষমতাসীন দলের ‘অস্ত্রধারী ক্যাডারদের’ অভিযুক্ত করেন তিনি।
নিউজবাংলা/একে
Comments
comments