নিউজবাংলা: ১৭ নভেম্বর, মঙ্গলবার:
ঢাকা : ‘কোথায় শান্তি পাব, কোথায় গিয়ে, বলো কোথায় গিয়ে…’ মৌসুমী ভৌমিকের গাওয়া এই গানের লাইনটি নিজের অজান্তেই গেয়ে উঠলাম। তবে সুরে নয়, এক ক্ষোভমিশ্রিত কণ্ঠে।
তখন আমি প্রচণ্ড জ্যামে থমকে থাকা তিল ঠাঁইহীন এক বাসে। হেমন্তের শীতল পরশকে উপেক্ষা করে মানুষের উত্তাপে ঘেমে একাকার অফিসের পথে, প্রায় ঝুলন্ত আমারই মতো বহুমানুষের সাথে। এদিকে অফিসে পৌঁছার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, তাই অস্থির সবাই। কিন্তু ট্রাফিকের অনিয়মতান্ত্রিক বাঁশিতে স্থির শত শত বাহন। ভেতরের সে অস্থিরতা আর ট্রাফিক পুলিশের প্রতি ক্ষোভ ঢাকতেই গুণ গুণ করে ওই শান্তির গান গেয়ে মনটাকে শান্ত রাখার ব্যর্থ চেষ্টা! তবে সবাই আমার মতো নয়, কেউ কেউ গালাগালি করে ট্রাফিক পুলিশের গোষ্ঠী উদ্ধার করছে।
বলছিলাম রাজধানীর শান্তিনগর দিয়ে অফিসগামী মানুষের প্রতিদিনের দুঃখগাঁথা। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রামপুরা টু মালিবাগ, প্রায় পুরো রাস্তা ফাঁকা। মালিবাগ টু কাকরাইল, রাস্তাজুড়ে যানজট। আর এই জটের উৎস শান্তিনগর সিগন্যাল। আধা ঘণ্টায়ও ছাড়ছিলো না ট্রাফিক সিগ্ন্যালটি। ভাবতে ভাবতে যানজটের লেজ আরো দীর্ঘ হচ্ছে। ততোক্ষণে পৌঁছে গেছে মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত। কেউ কেউ অবশ্য গাড়ি ছেড়েই হাঁঠতে শুরু করেন গন্তব্যের উদ্দেশে।
কিছুদূর এগিয়েই দেখা গেলো দীর্ঘ জটের কারণ। শান্তিনগরের অশান্তি বলে পরিচিত বেইলি রোডের ‘ভিআইপি’ সড়কের কারণেই এ সড়ক ধরে চলা মানুষের এতো দুর্ভোগ। কারণ বেইলি রোড ধরে ভিআইপিরা চলাচল করে বলে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ ওই রাস্তা বেশি সময় খোলা রাখে। আর এতে ভোগান্তিতে পড়ছে মালিবাগ থেকে কাকরাইলের পথে চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীরা। বেইলি রোড ১০ মিনিট খোলা রাখলেও ট্রাফিক তার বাঁশির জোরে এই রাস্তাটি মিনিট দুয়েক খোলা রেখেই আবার বন্ধ করছে ‘ভিআইপি’দের সুবিধার্থে।
এই অল্প একটু রাস্তায় যখন আধা ঘণ্টারও বেশি সময় যানজটে থাকতে হয় তখনই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন যাত্রীরা। হৈ চৈ করে অনেকেই গালমন্দও করতে থাকেন ট্রাফিক পুলিশকে। আবার নিরুপায় হয়ে অনেকেই গাড়ি ছেড়ে হাঁটতে শুরু করেন।
বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন ইমরান আহমেদ। তিনি বাংলামেইলকে বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে অফিসে যাওয়ার কথা। হিসাব করেই ৮টায় বাসা থেকে বের হয়েছি। কিন্তু এখন প্রায় ১০টা বাজে। নির্ধারিত সময়ে অফিসে পৌঁছতে পারবো না। মৌচাক-মালিবাগ-শান্তিনগরে কিছুটা জ্যাম থাকে মাথায় রেখেই বাসা থেকে বের হই।’
তিনি বলেন, ‘ফ্লাইওভার নির্মাণের কারণে এমনিতেই শান্তিনগরে প্রচণ্ড জ্যাম থাকে। এর মধ্যে আবার বেইলি রোডকে কেন ভিআইপি রোড ঘোষণা করা হয়েছে? বরং বেইলি রোড নয় এই মুহূর্তে শান্তিনগর রোডকেই ভিআইপি রোড ঘোষণা করা দরকার। কারণ এ রোড ধরেই সবচেয়ে বেশি মানুষ চলাচল করে।’
এদিকে অসহনীয় যানজটে আটকা পড়ে অনেকেই নিজেদের মোটরসাইকেল নিয়ে ফুটপাত দিয়ে চলাচল করেন। ফলে সড়কটিতে ফুটপাত আছে কি না তার চিহ্নও খুঁজে পাওয়া যায় না। তার উপর ফ্লাইওভারের চলমান কাজে সৃষ্টি হওয়া খানাখন্দে হারিয়েছে ওই রাস্তার প্রশস্ততাও।
নিউজবাংলা/একে
Comments
comments