নিউজবাংলা: ২৩ নভেম্বর-সোমবার:
সি এম মাসুদ রানা, বরগুনা জেলা সংবাদদাতা :
ধান নদী খাল প্রবাদের এই তিনের মধ্যে বরিশাল থেকে ধান উৎপাদন কমে গেলেও নদী খাল রয়ে গেছে এখনও মাকরশার জালের মত।
তাই বর্ষকাল আসলেই প্রয়োজন হয় নৌকার। নৌকা তৈরির পেশাকে ঘিরে জীবিকার তাগিদে গড়ে উঠেছে চুনাখালী গ্রামের মানুষের পেশা। পেশাটি হচ্ছে নৌকার কারিগড়। দেড়শ বছর ধরে বংশ পর¯পরায় এ পেশাটি ধরে রেখেছে এ গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবার। এগ্রামটি এখন সবার কাছে নৌকা তৈরীর গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৫শতাধিক মানুষের।—আমতলীর কুকুয়া ইউনিয়নে চুনাখালী গ্রামের অবস্থান। এগ্রামে প্রায় শতাধিক পরিবার বসবাস করে এর মধ্যে অর্ধশতাধিক পরিবার নৌকা তৈরী পেশার সাথে জড়িত। পূর্ব পুরুষদের প্রায় দেড়শ বছরের পুরানো এপেশাটি বর্তমান প্রজন্ম ধরে রেখছে। বর্ষাকাল আসলেই কর্মমুখর হয়ে ওঠে চুনাখালীগ্রামটি। সকাল হলেই হাতুরি বাটাল আর কাঠের খুট খাট শব্দে মুখরিত হয় এ গ্রামটি। সব সময় ক্রেতা বিক্রেতাদের আনাগোনায় কোলাহল মুখরিত গ্রামের মোরে মোরে অবস্থিত দোকানীরাও ব্যস্ত থাকে চা পান আর সিগারেট বিক্রিতে। চুনাখালী গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবারের সাথে মাসিক কিংবা দৈনিক মজুরিতে আশ পাশের গ্রামের আরও প্রায় ৫শতাধিক কারিগরের কর্মসংস্থান হয়েছে নৌকা তৈরির পেশায় এই গ্রামে। বর্ষাকালের ৩ মাস কাজ করে আবার ফিরে যাবে তাদের পুরানো পেশায়। এ গ্রামের অর্থনৈতিক অবস্থাও ভাল বলে জানালেন এই গ্রামের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সামসুদ্দিন আহম্মেদ ছজু। দুরু দুরান্তের মানুষ এই গ্রামকে নৌকা গ্রাম হিসেবে চেনে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনায় পলিথিন টানিয়ে আবার কেউ খরের ছাপরা দিয়ে নৌকা তৈরীর জন্য অস্থায়ী ঘর বানিয়ে নিয়েছেন। দুজন কাঠ মিস্ত্রী মিলে গড়ে প্রতিদিন একটি করে নেীকা তৈরী করতে পারেন তারা। প্রতিদিন কাজ করে কারিগড়রা পান ৩ থেকে সাড়ে তিনশ টাকা। এখান কার তৈরী নৌকাকে এ এলাকায় ডিঙ্গী নৌকা বলে। সহজেই এবং অল্প পানিতে এ নেীকা চলাচল করতে পারে। এ নৌকায় সহজেই খেত থেকে কাটা ধান এবং হালের লাঙ্গল জোয়াল ও মারাই করা ধান, চাল হাট বাজারে পরিবহন করা যায়। তাই এ নৌকার চাহিদা এলাকায় বেশী। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া থেকে ছত্তার এসেছেন নৌকা ক্রয় করতে। তিনি বলেন, এখানকার নৌকা খুব ভাল টিকে বেশী দিন। তাই অনেক দুর থেকে এখানে এসেছি। চুনাখালী গ্রামের কারিগড় মো: আব্দুল বারেক জানান, প্রায় দেড়শ বছর পূর্বে লালু মিস্ত্রী প্রথম এ গ্রামে নৌকা তৈরী শুর করেন। তার হাত ধরে কমদ মিস্ত্রী, জবেদ মিস্ত্রী রাজ্জাক মিস্ত্রী, শাহআলম, আলাউদ্দিন, মতলেব, নুরু মবিন, রশিদ মিস্ত্রী সহ দেখাদেখি অনেকেই এ পেশায় কাজ শুরু করেন। লালু মিস্ত্রী আরো জানান, তিনি ৫০ বছর ধরে এ পেশার সাথে জড়িত। তার বাবা এবং তার দাদা সহ পুর্বপুরষ থেকে এপেশার সাথে জড়িত। তার ছেলে রাশেলও এ পেশায় যুক্ত হয়েছেন। আব্দুর রাজ্জাক মিস্ত্রী জানান, তার বাবার হাত ধরে এ পেশায় এসেছেন। তার ছেলেও এ পেশায় যুক্ত হয়েছেন। আলাউদ্দিন মিস্ত্রী জানান, একটি ছোট সাইজের নৌকা তৈরী করতে খরচ হয় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। বিক্রি হয় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। বড় সাইজের একটি নৌকা তৈরী করতে খরচ হয় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। বিক্রি হয় সাড়ে তিন থেকে চার হাচার টাকা। রশিদ মিস্ত্রী জানান, চুনাখালী গ্রামে বছরে কয়েক হাজার নৌকা তৈরী হয়। এবং তাদের তৈরী নৌকা আমতলী, কলাপাড়া, গাজীপুর ও পটুয়াখালী হাট বাজারে বেশী বিক্রি হয়।তিনি আরো বলেন, নৌকা তৈরীর সাথে সাথে বাড়ি থেকেই বিক্রি হয় বেশী। খলিল মিস্ত্রী জানান, স্থানীয় ভাবে নৌকা তৈরীর কাঠ সংগ্রহ হয় বলে এখানকার নৌকা তৈরীতে খরচ কম পড়ে তাই লাভ বেশী হয়। মতলেব মিস্ত্রী এ পেশাকে টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারী সহযোগিতা কামনা করেন। কুকুয়া ইউপি চেয়ারম্যান কায়েসুর রহমান ফকু জানান, পূর্ব চুনাখালী গ্রামটি নৌকার তৈরীর জন্য এ অঞ্চলে খ্যাতি অর্জন করেছে। তাদের এ পেশাটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া প্রয়োজন।
নিউজবাংলা/একে
Comments
comments