নিউজবাংলা: ২৪ নভেম্বর-মঙ্গলবার:
ঢাকা: স্থানীয় সরকারের পৌরসভা আইন-২০১৫ (সংশোধন) পাসের পর ডিসেম্বরেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে আজ (মঙ্গলবার) তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেক্ষেত্রে মনোনয়ন দাখিল থেকে ভোট পর্যন্ত সময় পাওয়া যাচ্ছে মাসখানেক। আর এর মধ্যে প্রচারণার জন্য প্রার্থীরা সময় পাচ্ছেন মাত্র ১৪ দিন!
ইসি সূত্রে জানা যায়, রোববার স্থানীয় সরকার পৌরসভা আইনের সংশোধনীর গেজেট কমিশনে এসে পৌঁছায়। এর পরেই কমিশনাররা বৈঠক করে নির্বাচন পরিচালনা ও আচরণ বিধিমালা চূড়ান্ত করে। পরে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠান।
সোমবার সন্ধ্যায় বিধিমালার ভেটিং সম্পন্ন হয়ে ইসিতে আসে। বিধিমালা আরেকবার দেখে আবার রাতেই এসআরও নম্বরের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আজ সকালে বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। আর আজই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে ইসি।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ৩০ ডিসেম্বর পৌরসভা ভোটগ্রহণ। তফসিলে মনোনয়ন দাখিলের জন্য অন্তত ৮ দিন, বাছাই ২ দিন, আপিল ও নিষ্পত্তির জন্য ৭ দিন, প্রত্যাহারের জন্য ১ দিন, প্রতীক বরাদ্দের জন্য ১ দিন ধরা হয়েছে। আর প্রচারণার জন্য প্রার্থীরা ন্যূনতম ২ সপ্তাহ সময় পাবেন।
এ সপ্তাহের মধ্যে তফসিল ঘোষণা দিতে না করতে পারলে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ভোট আয়োজনে জটিলতার মুখে পড়তে হতো ইসিকে। এ কারণে ডিসেম্বরেই নির্বাচনটি শেষ করতে তোড়জোড় করে দ্রুত তফসিল দিচ্ছে ইসি।
এদিকে, এবারই প্রথম স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে হচ্ছে। প্রথমবারের মতো ভোট আয়োজন করতে গিয়ে নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালা জারিতে বিলম্বের কারণে একেবারে শেষ সময়ে ইসিকে বেশ বিপাকে পড়তে হচ্ছে। অনেকটা তাড়াহুড়ো করে আজ তফসিল ঘোষণা করা হলেও নির্বাচন আয়োজনে খুব কম সময় পাচ্ছে কমিশন। ফলে প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণার জন্য কম সময় পাবেন। এক্ষেত্রে তাদের আগে থেকেই সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।
এ বিষয়ে হাতিয়া পৌরসভার সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী মো. শাহিন বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমরা আগে থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। তবে ইসি আগে তফসিল ঘোষণা করলে আমাদের জন্য সুবিধা হতো। প্রচারণার জন্য ২১ দিনের মতো সময় পাওয়া যেত। এখন অল্প সময়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে নানা ভুলভ্রান্তির সম্মুখীন হতে পারি।’
প্রচারণার জন্য অল্প সময় পেলে জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছাতে বেশি সময় পাওয়া যাবে না। মনোনয়ন কোনো কারণে বাতিল হলে আপিলের ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হবে। সবকিছু মিলে প্রার্থীদের সময় ম্যানেজ করা কষ্টকর হবে বলে জানান তিনি।
তবে প্রার্থীদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকেও অবশ্য অনেক ঝামেলায় পড়তে হবে। কারণ ১৫-২০ দিনের মধ্যে মনোনয়ন জমা, বাছাই, প্রতীক বরাদ্দ, মনোনয়ন প্রত্যাহার, আপিলসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে ইসিকে। আর এবারই প্রথম দলীয় ও নির্দলীয়ভাবে পৌর নির্বাচনের বিধান থাকায় বাড়তি ‘চ্যালেঞ্জ’ থাকবে বলে জানান কমিশনের কর্মকর্তারা।
অবশ্য ভোট আয়োজনে ভোটার তালিকা ও সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত, ব্যালট পেপার ও আনুষঙ্গিক সামগ্রী মুদ্রণসহ নানা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে কমিশন।
প্রার্থীদের প্রচারণার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার শাহ নেওয়াজ বাংলামেইলকে বলেন, ‘পৌর নির্বাচনের বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালা নিয়ে জটিলতার কারণে ইতিমধ্যে অনেক সময় ব্যয় হয়েছে। আমাদের অল্প সময়ের মধ্যে সবকিছু করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রার্থীরা প্রচারণার জন্য বেশি সময় হয়তো পাবে না। তবে প্রচারণার সময় কম হওয়ায় প্রার্থীদের জন্য লাভ হয়েছে। এতে তাদের নির্বাচনী ব্যয় কম হবে।’
নির্বাচন পরিচালনা বিধি অনুযায়ী, নির্বাচনী প্রচারণার জন্য প্রার্থীদের সর্ব্বোচ ২১ দিন সময় দেয়ার বিধান রয়েছে। প্রতীক বরাদ্দ দিন হতে ভোট গ্রহণের ৪৮ ঘণ্টা আগে পর্যন্ত প্রচারণা করতে পারবেন প্রার্থীরা। এ হিসাবে এবার পৌর নির্বাচনে ১৪ দিনের মতো প্রচারণা চালাতে পারবেন প্রার্থীরা।
প্রসঙ্গত, গত ১২ অক্টোবর দলভিত্তিক পৌরসভা ভোট করতে মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্তের পর ৩ নভেম্বর এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি হয়। দলীয়ভাবে সব পদে পৌর নির্বাচনের অধ্যাদেশ হাতে পেয়ে বিধিমালায় সংশোধন এনে ইসি তা ৫ নভেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠায়। কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অধ্যাদেশ বাতিল করে পৌরসভা আইন ২০১৫ (সংশোধন) বিল সংসদে উত্থাপন করে ।
গত ১৯ নভেম্বর শুধু মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নের বিধান রেখে পৌরসভা সংশোধন আইন ২০১৫ বিল পাস হয়। পরে রাষ্ট্রপতি এতে সম্মতি দিলে ২১ নভেম্বর পৌরসভা সংশোধন আইন গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।
নিউজবাংলা/একে
Comments
comments