Breaking News
  • ‘সুন্দরবন’ আগামী পূজার আগেই পশ্চিমবঙ্গের নতুন জেলা হচ্ছে
  • স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পর খুলা হবে ফেসবুকসহ যোগাযোগ মাধ্যম : তারানা হালিম
  • আইএসে নিয়োগের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে নারী
  • পাষণ্ড স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন
  • শারীরিক পরীক্ষা শেষে কাশিমপুর কারাগারে বাবর

সাকার সাথে স্বজনদের শেষ সাক্ষাতের কথোপকোথন!

নিউজবাংলা: ২২ নভেম্বর-রবিবার:

ঢাকা: ঘড়ির কাটায় রাত তখন ৯:৩৫ মিনিট। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের বিশাল ফটক। শেষ দেখা করার অনুমতি পেয়ে বেশ কয়েকটি গাড়িতে এসেছিলেন প্রায় চল্লিশজন। তবে অনুমতি পেয়ে গুণে গুণে ১৭ জন ঢুকলেন ভেতরে। ফাঁসির আসামির স্ত্রী, ছেলে, মেয়েসহ নিকটাত্মীয় ও পরিবার স্বজন তারা। কারাগারে ভেতরে ঢুকতেই হাতের বায়ে ফাঁসি মঞ্চ। তার ১০-১২ গজ দূরে একটা খোপঘর। কেতাবি ভাষায় কনডেম সেল। ৬ নম্বর কনডেম সেলটা বড়জোর ৭ বর্গফুট। একটা দরজা। ফ্যান নাই। ছোট্ট ভ্যান্টিলেটর দিয়ে শ্বাস টানার বাতাসের যাতায়াত।

বৃহস্পতিবারো এখানেই দেখা হয়েছিল সাকার সাথে তার পরিবারের। জরুরী তলবে শনিবার রাতেও আসতে হল, তবে শেষবারের জন্য। স্বজনদের বর্ণনায় বিয়োগান্তক যেকোন দৃশ্যকেই যেনো হার মানায় নিশ্চিত সেই শেষ দেখার দৃশ্য। সামনা সামনি হতেই প্রথম মিনিটে পিনপতন নীরবতা, সাথে অশ্রুভরা চোখ আর বুকফাটা হৃদয় নিয়ে দুপক্ষের শুধুই তাকিয়ে থাকা। এরপর নীরবতা ভেঙ্গে প্রথম কথা বলেন সাকা নিজেই। বাইরের পরিস্থিতি নিয়ে জিজ্ঞেস করেন।
এরপর শুরু হলো নিজেদের মধ্যে কথা। শেষ সাক্ষাতে ফাঁসির আসামির সঙ্গে একে একে স্বজনেরা কথা বলে। হাত ধরে। বুকে জড়িয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠে। অন্যরাও চোখ মুছে। যার চির বিদায়, তিনিই সবাইকে সান্ত্বনা যোগান। সাহস দেন। দোয়া চান। হাসিমুখে থাকার চেষ্টা করেন। সালাউদ্দিন কাদের প্রায় পাঁচ বছর ধরে কারাগারে বন্দী। এই সময়টাতে মায়ের নির্দেশনায় সংসার, ব্যবসা, কূটনৈতিক যোগাযোগের সব কিছুই সামলেছেনে ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী। শেষ দেখায় তিনি বাবার কাছে জানতে চাইলে, এখন আমরা কি করব? বাবা দুটি বাক্য উচ্চারণ করলেন, তোমরা ভাই-বোন এক সঙ্গে থেকো। তোমাদের মাকে দেখে রেখো। বিদায়ের আগে স্বজনদের বললেন, আমার জন্য দোয়া করো। আমি পরকালেও ভালো থাকবো।
শেষ সাক্ষাতে বড় ভাইয়ের দৃঢ় মানসিকতায় উজ্জীবিত ছোট ভাই জামাল উদ্দিন কাদের চৌধুরীও। তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমার ভাই একটি কথাই বলেছেন, আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর। সাক্ষাৎ শেষে চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেলেন স্বজনরা। এর মধ্যে ছিলেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী, বড় ছেলে ফজলুল কাদের ফাইয়াজ ও পুত্রবধু দানিয়া খন্দকার, ছোট ছেলে হুমমাম কাদের, মেয়ে ফারজিন কাদের ও মেয়েজামাই জাফর খান, ভাই গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামালউদ্দিন কাদের চৌধুরী, ভাবি সেলিনা চৌধুরী ও মাহবুবা চৌধুরী, ভাতিজা ওমর আহমেদ আদেল ও শাকিল কাদের চৌধুরী, দুই বোন জোবেদা মনোয়ার ও হাসিনা কাদের প্রমুখ।
স্বজনদের শেষ সাক্ষাতের আগেই ফাঁসির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গিয়েছিল। রাত সাড়ে ৮টার দিকে সালাউদ্দিনকে গোছল করানো হয়। এরপর অল্প পরিমাণে খাবার গ্রহণ করেন তিনি। খাবার শেষ হতেই স্বজনরা দেখা করতে চলে আসে। সাক্ষাৎ শেষে তারা কনডেম সেল ছেড়ে যান রাত পৌনে ১১টায়। এরপর দোয়া পড়তে থাকেন সালাউদ্দিন কাদের। আল্লাহর নাম জিকির করতে বেজে যায় রাত ১২টা। নিরাপত্তা রক্ষীদের সঙ্গে সেলে আসেন কারাগারের জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মনির হোসেন খান। তিনি তওবা পড়ান সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে। তওবা পড়ার আগে সালাউদ্দিন কাদের বলেন, আমি মানবতাবিরোধী কোন অপরাধ করিনি। কিন্তু মানুষ হিসেবে আমার ভুলত্রুটি থাকতে পারে। তাই অন্যায় হত্যার শিকার হওয়ার আগে আমি তওবা পড়তে চাই।
ইমামের বিদায়ের পর রাত সাড়ে ১২টায় চারজন জল্লাদকে নিয়ে নিরাপত্তা রক্ষীরা ফের সেলে আসে। ১২টা ৩৬ মিনিটে সালাউদ্দিন কাদেরকে যমটুপি পরিয়ে সেল থেকে বের করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই ফাঁসির মঞ্চের উদ্দেশে হাঁটতে থাকেন তিনি। এরপর নিস্তব্ধতা নেমে আসে ফাঁসির মঞ্চে। সেখানে উপস্থিত সব সরকারি কর্মকর্তারা চুপ করে যান। একটু পরে সালাউদ্দিন কাদেরকে ফাঁসির মঞ্চে উঠতে বলা হলে তিনি শান্তভাবেই ফাঁসির মঞ্চে ওঠেন। এরপর তার দুই পা বেধে ফেলা হয়। গলায় লাগানো হয় ফাঁসির দড়ি। তখন রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে। সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির তার হাতে থাকা শাদা রুমাল ফেলে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে ফাঁসির দড়িতে টান দিল প্রধান জল্লাদ শাহজাহান।
ফাঁসি কার্যকরের পুরো ঘটনার সময় আইজি প্রিজন চৌধুরী ইফতেখার উদ্দিন, ঢাকা জেলা প্রশাসক মো. তোফাজ্জল হোসেন, দুই ম্যাজিস্ট্রেট- খন্দকার মুশফিকুর রহমান ও তানভীর আহমেদ, সিভিল সার্জন আবদুল মালেক মৃধা, জেলার নেছার আলম, সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির উপস্থিত ছিলেন। পরে কারাগার থেকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর লাশ বের করে র্যাব-১০ এর একটি সশস্ত্র দল পাহাড়া দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামের উদ্দেশে রওনা করে। নিজগ্রামে ছোটভাইয়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

নিউজবাংলা/একে

Share This:

Comments

comments

Previous: ‘আমার অসুবিধা হবে না, জমটুপি পরানোর প্রয়োজন নেই :মুজাহিদ
Next: চিটাগং ভাইকিংস-এর ১৮৭ রান

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*