নিউজবাংলা: ১৭ নভেম্বর, মঙ্গলবার:
ঢাকা : ঘটনাস্থল প্যারিসের বেলা ইকুইপ। ঝলমলে এই রেস্তোরাঁয় বন্ধু-স্বজনদের নিয়ে নিজের ৩৫তম জন্মদিন উদযাপন করবেন বলে এসেছিলেন আরেক রেস্তোরাঁর ওয়েট্রেস হোওদা সাদি।
তার আমন্ত্রণে বেলা ইকুইপে হজির ঘনিষ্ঠ বন্ধু-স্বজনরা। প্রস্তুতি চলছে জন্মদিন উদযাপনের। কিন্তু এক মুহূর্তের তাণ্ডবে তা পরিণত হয় মুত্যুপুরীতে। ঝরে যায় সাদিসহ ১২ জন।
ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে উঠে আসে এই বিয়োগান্তক ঘটনা ছবি।
গত শুক্রবার প্যারিসের ছয় স্থানে প্রায় একই সময়ে যে সন্ত্রাসী হামলা ঘটেছে, তার একটি ছিল বেলা ইকুইপ।
ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়, তিউনিসীয় নাগরিক সাদি ছিলেন একজন ওয়েট্রেস। কাছের আরেকটি রেস্তোরা ক্যাফে দ্য অ্যাঞ্জেস-এ কাজ করতেন তিনি। জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে ছিলেন তার বড় বোন হালিমা (৩৬) এবং দুই ভাই খালেদ ও বশির। জঙ্গিদের গুলিতে মারা যান সাদি ও হালিমা। তাদের দুই ভাই অলৌকিকভাবে অক্ষত বেঁচে যান।
দুই বোনের একজনকে তার অন্তিম সময়ে সাহায্য করার চেষ্টা করেন আরেক তিউনিসীয় করিম (৩৮)। রক্তে ভেজা ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে তাকে আগলে ধরে করিম সাহস জোগানোর চেষ্টা করেন। বলেন, “ভয় পেয়ো না।” কিন্তু তার জখম ছিল গুরুতর। পরে হাসপাতালে মারা যান তিনি।
আরেক বোনকে সিপিআর দেয়ার চেষ্টা করেন ভাই খালেদ। কিন্ত তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ক্যাফের মেঝেতেই মারা যান বোন।
ওই রাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে খালেদ বলেন, “বন্দুকধারীরা ভেতরে ঢুকে ক্যাফের চারদিকে গুলি করতে থাকে। আমি মাটিতে শুয়ে পড়ি। কিছুক্ষণের জন্য গোলাগুলি থামলে মাথা উঁচু করে দেখার চেষ্টা করি। সঙ্গে সঙ্গে আবার গুলি শুরু হয়। আমি আবার লুকিয়ে পড়ি। সব মিলিয়ে মিনিট খানেক গোলাগুলি চলে। কিন্তু মনে হচ্ছিল যেন দীর্ঘ সময় ধরে তা চলছে। এরপর হামলাকারীরা চলে যায়।”
খালেদ বলেন, “রেস্তোরাঁয় রক্তাক্ত পড়ে আছে সবাই। গুরুতর জখমে কাতরাচ্ছিলেন কেউ কেউ। হালিমার নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখি। সে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। আমার আরেক বোন সাদিকে বাঁচানোর চেষ্টা করি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।”
বেলা ইকুইপ ক্যাফেতে শুক্রবারের সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ১৯ জনের বেশির ভাগই সাদির জন্মদিন উদযাপনে এসেছিলেন। এর মধ্যে রয়েছেন ক্যাফে দে অ্যাঞ্জেস থেকে আসা সাদির চার সহকর্মী ও তাদের ছয় বন্ধু।
বেলা ইকুইপে অন্য নিহতদের মধ্যে একজন ছিলেন ২৭ বছরের মেক্সিকান নারী মিশেলি জিল জাইমেজ। এই রেস্তোরাঁতেই কাজ করতেন তিনি। কয়েক দিন আগেই ইতালীয় এক নাগরিকের সঙ্গে তার বিয়ের এনগেজমেন্ট হয়। হবু স্ত্রীকে হারিয়ে মিশেলির বাগদত্ত ফেসবুকে তাকে বিদায় জানিয়ে লিখেছেন, “আমি তোমাকে ভালোবাসি, প্রিয়তমা। শান্তিতে থেকো।”
হামলার সময় বন্ধু ক্লোয়ি ক্লেমেন্টকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন লুডোভিচ বৌমবাস। নিহত অন্যরা হলেন, রোমানীয় নাগরিক লাক্রিমিওয়াভাবা পপ ও তার সঙ্গিনী সিপ্রিয়ান কালসিউ, হিয়াসিন্থি কোমা, ডিজামিলা হৌদ (৪১), গিলম লে ড্রাম্প (৩৩), রোমেইন ফেউলাড (৩১) ও রেনে বিচোন।
নিউজবাংলা/একে
Comments
comments