ঝিনাইদহে সবজি চাষে ব্যাপক ফলন ন্যায্য দাম পাচ্ছেনা কৃষক

নিউজ বাংলা২১: মঙ্গলবার, ১৭ মার্চ:

আলিফ আবেদীন গুঞ্জন, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের সবজি চাষীরা বানিজ্যিক ভিত্তিতে সবজি চাষ করে ন্যায্য দাম পাচ্ছেনা বলে তারা হতাশ হয়ে পড়েছে। ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন এলাকার সবজি চাষীরা আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করায় সবজি বাম্পার ফলন হয়েছে।বিশেষ করে ঝিনাইদহ জেলায় ফুলকপি, বাধাঁকপি, মূলা, লাউ, কুমড়া, শসা, খিরা, শিম, পটল, ঝিঙা, বেগুন, বরবটি, করলা, উচ্চে, শাক, আলু,পেপে,বেগুন টমেটোসহ বিভিন্ন জাতের সবজি উৎপাদন করে বানিজ্যিক ভিত্তিতে। ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার, বালিয়াডাঙ্গা,পাইকপাড়া, চাচড়া,কালীগঞ্জ শহওে পাতবিলা, হলিধানী, ডাকবাংলা, নগরবাথান, ভাটই, গাড়াগঞ্জ, চড়িয়ার বিল ও শেখপাড়া বাজাওে পাইকারি হিসাবে সবজি বিক্রি হয়। এসব হাটগুলো থেকে প্রতিদিন ১৫০ ট্রাকের বেশি সবজি দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান পাইকারি ব্যবসায়িরা। সবজি বিক্রি করে কোনো রকমে উৎপাদন খরচ ও কৃষকরা গরে নিতে পারছে না। উৎপাদক ও বিশ্লেষকদের মতে, প্রক্রিয়াজাত করণের সুযোগ না থাকায় বাধ্য হয়েই এলাকার চাষিরা কমদামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, গত খরিপ মৌসুমে ঝিনাইদহ জেলায় ৮ হাজার ৫শ,৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি আবাদ হয়। এতে উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ৭৬ টন। রবি মৌসুমে আবাদ হয় ১০ হাজার ১শ,৫৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয় ১ লাখ ৬৪ হাজার ৩৬৯ মেট্রিক্রকটন সবজি। এ জেলায় বিভিন্ন জাতের সবজি প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন হয়ে থাকে। মৌসুমি বাজারে সবজির আমদানি বাড়লে পাইকারী-ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে দাম কমিয়ে দেয়। ফলে কৃষকেরা কমদামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হয়। এতে চরমভাবে লোকসান ক্ষেতে হয় কৃষকদের। সরকারিভাবে এলাকায় সবজি প্রক্রিয়াজাত করার ব্যবস্থা থাকলে এ ক্ষতির হাত থেকে চাষিদের কিছুটা রক্ষা করা সম্ভব হতো। সবজি চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাজারে নতুন সবজি ওঠার সময় দাম একটু বেশি পাওয়া গেলেও আমদানি বেশি হওয়ার সাথে সাথে দাম কমতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তারা নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হন।ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডাকবাংলা সবজির পাইকারি হাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টকা দরে, লাউ এর পাইকারি বাজারমূল্য ১০ টাকা প্রতিটি। অন্যদিকে শহরের খুচরা বাজার গুলোতে ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে কাঁচামরিচ এবং ২৫/৩০ টাকায় একটি লাউ বিক্রি হচ্ছে। চাষীদের অভিযোগ দিন-রাত হাড় ভাঙা পরিশ্রম করে সবজি চাষ করে কোনো রকমে খরচের টাকা তুলতে পারছেন তারা। মধ্যস্বত্বভোগী এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ইচ্ছেমতো দামে সবজি বিক্রি করে ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন।হরিণাকুন্ডুর কুলবাড়িয়া গ্রামের সিরাজ মালিতা উদ্দিন ২২ কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি করতে এসেছেন হাটে। ২৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন আড়তদার, ফড়িয়া ও ব্যাপারীরা এখানকার হাট নিয়ন্ত্রণ করে। তারা যে দাম নির্ধারণ করে দেবে সেই দামেই আমাদের মাল বিক্রি করতে হবে। কৃষি উপকরণের দামের তুলনায় সবজির দাম কম। গোয়ালপাড়া সবজির বাজারে আসা চাষি বিশারত মিয়া জানান, তিনি এ বছর ২৭ শতক জমিতে লাউয়ের আবাদ করেছেন। প্রথমদিকে লাউ বিক্রি করেছেন ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে। এখন বিক্রি করছেন ১০ থেকে ১২ টাকা দরে। এ দামে লাউ বিক্রি করে কোনো রকমে আবাদের খরচ ওঠছে বলে তিনি জানান। সাধুহাটি গ্রামের সবজি চাষি রফিকুল ইসলাম জানান, ৬০ কেজি সিম নিয়ে বাজারে এসেছেন। তিনি ১০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, জমি তৈরী, সার, কীটনাশক ও জন (শ্রমিক) এর দাম বাদ দিয়ে আর কিছু থাকে না।এখানে একটি লাউ ১০ টাকায় কিনলে ঢাকার বাজারে আবার আড়তদারী দিয়ে ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি না করলে লাভ হয়না।শেখপাড়া হাটে সবজি কিনতে আসা ফরিদপুরের ব্যবসায়ী মিনার হোসেন এবং ফরিদপুরের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান জানান, তারা প্রতি কেজি পটল ১২ টাকা, কাঁচামরিচ ৩০ টাকা, বেগুন ৩০টাকা, ফুলকপি ২০ টাকা  এক কেজি মরিচ বর্তমানে চাষি বিক্রি করছেন ২৫ টাকায়। অথচ আমাদের কিনতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। সাধারণ ফড়িয়ারা ব্যবসায়ীরা বড় একটি অংশ লাভ নিয়ে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন উৎপাদনকারী, চাষি ও ভোক্তারা। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলার সরকারের প্রশাসনের তদারকি আশৃ দৃষ্টি দেবার জন্য সবজি চাষিরা দাবি জানিয়েছেন।

নিউজ বাংলা২১/একে

(Visited 1 times, 1 visits today)
Top