কিভাবে বুঝবেন শরীরে অক্সিজেন কমে গেছে
অক্সিজেন মানব দেহের বেঁচে থাকার অন্যতম নিয়ামক। একজন সুস্থ মানুষের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশের মধ্য থাকে। তবে মাঝেমধ্যে মানব দেহে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়, যার ফলে মৃত্যু ঘটে মানুষের। তাই শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা সবসময় বুঝতে হবে।
বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে অনেক করোনা সংক্রমিত রোগীকে বাড়িতে চিকিৎসা নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কারণ প্রাথমিক অবস্থায় বাড়িতে ভালো মত পর্যবেক্ষণ করলে সেরে উঠা যায় এই রোগ থেকে। তবে এই করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক আছে কিনা সেটা জানা সবথেকে বেশি জরুরী। তার রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বা ঘনত্ব কমে যাচ্ছে কি না, খেয়াল করা।
একজন সুস্থ মানুষের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশের মধ্যে থাকে। রক্তে অক্সিজেনের ঘনত্ব আর হৃদ্স্পন্দের গতি পরিমাপ করা যায় যে যন্ত্রের মাধ্যমে, তার নাম পালস অক্সিমিটার। তবে এই যন্ত্র না থাকলেও একটা ছোট পরীক্ষার মাধ্যমে ফুসফুসের অবস্থা বুঝে নেওয়া যায়।
যেভাবে বুঝবেন শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা
১. রোগীকে প্রথমে মুখ দিয়ে সজোরে বুকের ভিতর থাকা বাতাস ছাড়তে হবে। তারপর ধীরে ধীরে গভীরভাবে নাক দিয়ে বাতাস টেনে শ্বাস ধরে রাখতে হবে। যদি ৭ সেকেন্ড এভাবে শ্বাস ধরে রাখতে সমস্যা হয়, তাহলে বুঝতে হবে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫ শতাংশে নেমে এসেছে। আর যদি ৫ সেকেন্ড পর্যন্ত শ্বাস ধরে রাখতে সমস্যা হয়, তাহলে বুঝতে হবে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ৯০ শতাংশ।
২. করোনা সংক্রমিত রোগীর জন্য দ্বিতীয় সপ্তাহটা গুরুত্বপূর্ণ। অনেকর এ সময় নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। কাশির পাশাপাশি শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়। গভীর বা লম্বা শ্বাস নেওয়ার সময়ে বুকে ব্যাথা বা চাপ অনুভূত হতে পারে। এগুলো ফুসফুসে সংক্রমণজনিত প্রদাহের লক্ষণ।
৩. অনকে সময় শুরুতে অক্সিজেনের ঘাটতি রোগী বুঝতে পারে না। দিব্যি সুস্থ-স্বাভাবিক মনে হয়। একে বলে ‘ নীরব হাইপোক্সিয়া ‘।
৪. রক্তে অক্সিজেন কমে গেলে শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায় (প্রতি মিনিটে ২৪-এর বেশি)। হৃদ্স্পন্দের গতি (প্রতি মিনিটে ১০০-এর বেশি) বেড়ে যায়, বুকে ব্যাথা হয় ও নিশ্বাসে সমস্যা হয়। ফলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গে, স্নায়ুতন্ত্র, এমনকি মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। এ সময় মাথা ঝিমঝিম করা, প্রচন্ড দুর্বল লাগা, একটু পরিশ্রম বা হাঁটাহাটিতে সমস্যা হয়। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার লক্ষণ এগুলো।
৪. অক্সিজেনের মাত্রা খুব বেশি কমে গেলে রোগীর ঠোঁট ও ত্বক নীল হয়ে যায়। এ সময় রোগীকে উপুড় করে শুইয়ে দিয়ে জোরে জোরে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে বলতে হবে। এতে কিছুটা উপকার পাওয়া যায়। কারণ, এর ফলে ফুসফুসের একটা বড় অংশে সহজে বাতাস যায় এবং রক্ত সহজে অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে। দ্রুত হাসপাতালে বা চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
তথ্য : অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান।
বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ।