নিউজবাংলা: ০৫ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার:
ঢাকা: অসুস্থ ব্যক্তি যখন দাঁড়াতে অক্ষম হয় তখন সে বসে রুকু-সাজদা করবে। কেননা রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ইমরান ইবন হাসীণ (রা.) কে বলেছেন তুমি দাড়িয়ে সালাত আদায় কর। যদি তা না পার তবে বসে (পড়)। যদি তা না পায় তবে পার্শ্বে শয়ন করে ইংগিতের মাধ্যমে। তাছাড়া কুদূরী (র.) বলেন, যদি রুকু-সাজদা করতে না পারে তাহলে ইশারায় তা আদায় করবে। অর্থাত্ বসা অবস্থায় (ইশারায় রুকু-সাজদা করবে) কেননা এতটুকু করার সামর্থ্য তার রয়েছে। তবে সাজদার ইশারাকে রুকুর ইশারার তুলনায় অধিক অবনমিত করবে। কেননা ইশারা হল রুকু-সাজদার স্থলবর্তীতা রুকু-সাজদার হুকুম গ্রহণ করবে। কপালের কাছে কোন কিছু উঁচু করে তার উপর সাজদা করবে না। সাজদা করার জন্য কিছু তার কপালের সামনে উঁচু করে ধরা হবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন- যদি তুমি ভূমিতে সাজদা করতে পার তবে সাজদা কর। অন্যথায় মাথা দিয়ে ইশারা কর। আর যদি কিছু তুলে ধরা হয় এবং সেই সাথে আপন মাথাও কিণ্চিত অবনত করে, তবে ইশারা পাওয়া যাওয়ার কারণে তা যথেষ্ট হবে। আর যদি উক্ত উত্তোলিত বস্তুকে কপালের উপর শুধু স্থাপন করে তবে ইশারা না হওয়ার কারণে তা যথেষ্ট হবে না। আর যদি বসতে না পারে তবে পিঠের উপর চিত হয়ে শোবে এবং দু’পা কেবলামুখী করবে। এবং ইশারায় রুকু-সাজদা করবে। কেননা রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন- অসুস্থ ব্যক্তি দাড়িয়েঁ সালাত আদায় করবে। যদি তা না পারে তাহলে বসে (আদায় করবে)। যদি তা না পারে তাহলে চিত হয়ে ইশারায় আদায় করবে। যদি তাও না পারে তাহলে আল্লাহ্ তা’আলাই তার ওযর কবূল করার অধিক হকদার। যদি পার্শ্বে শয়ন করে আর তার চেহারা কেবলামুখী থাকে তবে তা জাইয হবে। প্রমাণ হল ইতোপূর্বে আমাদের বর্ণিত (ইমরান ইব্ন হাসীনের) হাদীছ। কিন্তু আমাদের মতে প্রথম সুরতটি উত্তম। ইমাম শাফিঈ (র.) ভিন্নমত পোষণ করেন। কেননা চিত হয়ে শয়নকারী ব্যক্তিরা ইশারা কা’বা শরীফের অভিমুখী হয়। পক্ষান্তরে পার্শ্ব শয়নকারী ব্যক্তির ইশারা তার পদদ্বয় অভিমুখী হয়। অবশ্য তা দ্বারা সালাত আদায় হয়ে যাবে। যদি মাথা দিয়ে ইশারা করতে সক্ষম না হয় তবে তার সালাত বিলম্বিত হবে। কিন্তু চোখ দ্বারা, অন্তর দ্বারা বা চোখের দ্বারা ইশারা করা যাবে না। ইমাম যুফার (এবং আহমদ, শাফিঈ ও মালিক (র.) এর ভিন্নমত রয়েছে। আমাদের প্রমাণ হলো ইতোপূর্বে আমাদের বর্ণিত হাদীছ। তাছাড়া যুক্তি এই যে, নিজস্ব মত দ্বারা স্থলবর্তী নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। আর মাথা দিয়ে ইশারা এর উপর কিয়াস করা সংগত নয়। কেননা মাথা দ্বারা সালাতের রুকন আদায় করা হয় অথচ চোখ বা অপর দু’টি দ্বারা তা করা হয় না। যদি সালাত বিলম্বিত করা হবে-ইমাম কুদূরীর এ বক্তব্যে ইংগিত রয়েছে যে, সালাতের ফরজ তার থেকে রহিত হবে না। যদিও অক্ষমতা একদিন এক রাত্রের বেশী হয় আর সে সজ্ঞানে থাকে। এ-ই বিশুদ্ধ মত। কেননা সে শরীআতের সম্বোধন উপলদ্ধি করতে পারে। অজ্ঞান লোকের বিষয়টি এর বিপরীত। যদি দাঁড়াতে সক্ষম হয় কিন্তু রুকু-সাজদা করতে সক্ষম না হয়, তাহলে কিয়াম করা জরুরী নয়, বরং বসে ইশারায় (রুকু-সাজদা করে) সালাত আদায় করবে। কেননা, কিয়াম রুকন হয়েছে সাজদায় যাওয়ার মাধ্যম হিসাবে। কারণ, কিয়াম থেকে সাজদায় যাওয়ার মধ্যে চূড়ান্ত তাযীম প্রকাশ পায়, সুতরাং কিয়ামের পরে সাজদা না হলে তা রুকন রূপে গণ্য হবে না। সুতরাং অসুস্থ ব্যক্তিকে ইখতিয়ার দেওয়া হবে। তবে উত্তম হল বসা অবস্থায় ইশারা করা। কেননা তা সাজদার সাথে অধিকতর সাদৃশ্যপূর্ণ। সুস্থ ব্যক্তি দাড়িয়েঁ আংশিক সালাত আদায় করার পর যদি অসুস্থতা দেখা দেয় তাহলে বসে রুকু-সাজদা করে সালাত পূর্ণ করবে। আর সক্ষম না হলে ইশারা দ্বারা আদায় করবে। আর (বসতে) সক্ষম না হলে চিত হয়ে শোয়ে আদায় করবে। কেননা, নিম্নস্তরকে উচ্চস্তরের উপর ‘বিনা’ করেছে। সুতরাং এটা ইকতিদার মত। কোন ব্যক্তি অসুস্থতাবশতঃ বসে রুকু-সাজদা করে সালাত শূরু করল। এরপর (সা্লাতের মাঝেই) সুস্থ হয়ে গেল, তাহলে ইমাম আবূ হানীফা ও আবূ ইউসূফ (র.) এর মতে সে তার পূর্ববর্তী সালাতের উপরই বিনা করে দাড়িয়ে আদায় করবে। আর মুহাম্মদ (র.) এর মতে নতুন করে সালাত শুরু করবে। এ মতপার্থক্যের ভিত্তি হল তাদের ইকতিদা সংক্রান্ত মতপার্থক্য। পূর্বে এর বিবরণ (ইমামাত অনুচ্ছেদ) বর্ণিত হয়েছে। আর যদি আংশিক সালাত ইশারা দ্বারা আদায় করার পর রুকু-সাজদা করতে সক্ষম হয়, তাহলে সকলের মতেই নতুন করে সালাত শুরু করতে হবে। কেননা, ইশারা দ্বারা আদায়কারীর পিছনে রুকু-সাজদাকারীর ইকতিদা করা জাইয নয়। সুতরাং ‘বিনা’ ও জাইয হবে না। যে ব্যক্তি দাড়ানো অবস্থায় নফল সালাত শুরু করে পরবর্তীতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, সে লাঠিতে বা দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড়াতে পরে কিংবা বসেও আদায় করতে পারে। কেননা, এটা ওযর। বিনা ওযরে হেলান দেওয়া অবশ্যা মাকরূহ। কারণ তা আদবের খেলাফ। কেউ কেউ বলেন ইমাম আবূ হানীফা (র.)এর নিকট তা মাকরূহ। কেননা তার মতে বিনা ওযরে বসা জাইয আছে। সুতরাং হেলান দেয়া মাকরূহ হতে পারে না। ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম মুহাম্মদ (র.) এর মতে যেহেতু (বিনা ওযরে) বসা জা্ইয নেই, সেহেতু হেলান দেয়াও মাকরূহ হবে। যদি (দাড়িয়ে সালাত শুরু করার পর) বিনা ওযরে বসে পড়ে, তাহলে সর্বসম্মতিক্রমেই তা মাকরূহ হবে। তবে আবূ হানীফা (র.) এর মতে সালাত দুরস্ত হবে। কিন্তু সাহেবাইনের মতে দুরস্ত হবে না। নফল অনুচ্ছেদ এ আলোচনা বিগত হয়েছে। কোন ব্যক্তি ‘জলযানে’ ‘বিনা ওযরে’ বসে সালাত পড়লে ইমাম আবূ হানীফা (র.) এর মতে তা জাইয হবে। তবে দাড়িয়ে আদায় করা উত্তম। আর সাহেবাইন বলেন যে, ওযর ছাড়া তা জা্ইয হবে না। কেননা সামর্থ্য তার আছে। সুতরাং তা পরিত্যাগ করা যাবে না। ইমাম আবূ হানীফা (র.) এর যুক্তি এই যে, সেখানে মাথা ঘুরানোর সম্ভাবনাই প্রবল সুতরাং সেটা বাস্তবতূল্য। তবে দাড়িয়ে পড়া হল উত্তম। কেননা তা মতপার্থক্যের সংশয় মুক্ত। আর যতটা সম্ভব মতপার্থক্য থেকে দূরে থাকাই উত্তম। কেননা তা অন্তরের জন্য অধিক প্রশান্তিকর। এ মতপার্থক্য নোংগরহীন নৌকার ক্ষেত্রে। পক্ষান্তরে বাধা নৌকা নদীর তীরের (ভূমির) মতই। এটাই বিশুদ্ধ মত। যে ব্যক্তি পাচ ওয়াক্ত সালাত কিংবা তার কম সময় বেহুশ ছিল, সে কাযা আদায় করবে। আর যদি পাচ ওয়াক্তের বেশী বেহুশ থাকে, তাহলে কাযা আদায় করবে না। এটা সূক্ষ কিয়াসের সিদ্ধান্ত, সাধারণ কিয়াস অনুযায়ী অজ্ঞনতা যদি একপূর্ণ সালাতের ওয়াক্ত স্থায়ী হয়, তাহলে কাযা ওয়াজিব হবে না। কেননা অক্ষমতা সাব্যস্ত হয়েছে। সুতরাং তা পাগল হওয়ার সমতুল্য। সূক্ষ কিয়াসের ব্যাখ্যা এই যে, সময় দীর্ঘ হলে কাযা সালাতের সংখ্যা বেড়ে যায় ফলে আদায় করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে সময় সংক্ষিপ্ত হলে কাযা সালাতের সংখ্যা কম হয়; ফলে তাতে কোন কষ্ট হবে না। আর বেশীর পরিমাণ হল কাযা সালাত একদিন ও একরাত্র দাড়িয়ে যাওয়া। কেননা তখন তা পুনরাবৃত্তির গণ্ডিতে প্রবেশ করে যায়। আর পাগল হওয়ার হুকুম অজ্ঞান হওয়ার মত। আবূ সুলায়মান (র.) এরূপই উল্লেখ করেছেন। ঘুমের বিষয়টি ভিন্ন। কেননা ঘূম এত দীর্ঘ হওয়া বিরল। সুতরাং সেটা সংক্ষিপ্ত ঘুমের পর্যায়ভূক্ত বলেই গণ্য হবে। ইমাম মুহাম্মদ (র.) এর মতে বেশীর পরিমাণ হিসাব করা হবে সালাতের ওয়াক্ত হিসাবে। কেননা সেটা দ্বারাই পুনরাবৃত্তি সাব্যস্ত হয়। আর ইমাম আবূ মালিক ও ইমাম মুহাম্মদ (র.) এর মতে সময় হিসাবে। ‘আলী (রা.) ও ইবন উমর (রা.) থেকে এটাই বর্ণিত হয়েছে। নির্ভূল সম্পর্কে আল্লাহ্ই উত্তম জানেন। প্রিয় নিউজ
নিউজবাংলা/একে
Comments
comments