নিউজবাংলা: ১৭ অক্টোবর, শনিবার:
ঢাকা: দশের ২১ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিভিন্ন পর্যায়ে বেতন বাড়ছে। গ্রেডভেদে মূল বেতন ৯১ থেকে ১০১ শতাংশ বাড়ছে। সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার এবং সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২৫০ টাকা মূল ধরে সরকারি কর্মচারীদের জন্য অষ্টম বেতন কাঠামো অনুমোদন করেছে সরকার। নতুন এ কাঠামোর মূল বেতন ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। আর ভাতা কার্যকর হবে ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে।
৭ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ বেতন কাঠামো অনুমোদন করা হয়। অষ্টম বেতন কাঠামো অনুমোদনের পাশাপাশি নববর্ষের জন্য বাড়তি একটি বোনাসও ঘোষণা করেছে সরকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুটি উৎসব ভাতার পাশাপাশি এখন থেকে প্রতিবছর বাংলা নববর্ষে মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়তি একটি ভাতা পাবেন।
প্রাসঙ্গিকভাবে বলা প্রয়োজন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন গঠিত পে-কমিশন সর্বোচ্চ ৮৮ হাজার ও সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২০০ টাকা বেতন স্কেলের সুপারিশ করেছিল। সেটাই বহাল থাকল। নতুন পে স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল থাকছে না। নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়ন হলে ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে বেতন বাবদ সরকারের ২৩ হাজার ৮২৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয় হবে।
এর আগে ২০০৯ সালে সরকারি কর্মজীবীদের সর্বশেষ বেতন স্কেল দেওয়া হয়েছিল। এরপর ছয় বছরে দেশে অনেক মূল্যস্ফীতি ঘটেছে। ফলে নতুন বেতন স্কেল খুবই কাক্সিক্ষত ছিল। এর আগে অষ্টম বেতন স্কেল ঘোষিত হওয়ার সময় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের তাদের অন্তর্ভুক্ত না করায় তাদের অসন্তোষ ছিল। বিগত কিছুদিন তারা নানাভাবে তাদের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করায় নিশ্চয়ই তারাও খুশি হয়েছেন।
জানা গেছে, মূল বেতনের ওপর বার্ষিক প্রবৃদ্ধি নির্দিষ্ট করে নতুন বেতন কাঠামোতে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে কিছুটা অসন্তোষের কথা শোনা যাচ্ছে। তবে নতুন পে-স্কেলে মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাংলা নববর্ষ উৎসব ভাতা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরা এখন থেকে ৯০ শতাংশ হারে পেনশন পাবেন। সার্বিক বিবেচনায় প্রাপ্তিযোগই বেশি।
নতুন স্কেলে আগের মতো ২০টি গ্রেড থাকছে, তবে এখন থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কোনো শ্রেণিবিভাগ থাকছে না। সবাই গ্রেড অনুযায়ী পরিচিত হবেন। এটাও ভালো দিক। বেতন-ভাতা বৃদ্ধি সব সময়ই প্রেরণাদায়ক। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই বেতন-ভাতা বৃদ্ধি নিশ্চয়ই তাদের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর করবে, দৈনন্দিন জীবনে স্বস্তি আনবে, এর প্রতিফলন তাদের দাপ্তরিক কাজকর্মেও পড়ার কথা।
আমার সঙ্গত প্রত্যাশা যে, নতুন বেতন স্কেলপ্রাপ্তি সরকারি চাকুরেদের কাজে গতিশীলতা আনবে; তাদের মধ্যে ঘুষ-দুর্নীতিসহ সব অসদুপায় অবলম্বনের প্রবণতা কমাবে; সেবাপ্রার্থী মানুষের হয়রানিও কমবে। নতুন বেতন স্কেল মেধাবীদের সরকারি চাকরিতে আরো বেশি আকৃষ্ট করবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।বর্তমানে জীবনযাত্রার মান যেখানে গিয়ে পৌঁছেছে তাতে এটা একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ।
নতুন পে-স্কেল অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করবে। সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির কারণে তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে। ফলে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন স্তরও এর সুবিধা পাবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবনযাপনে স্বাচ্ছন্দ্য আসবে। কিন্তু যাঁরা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তারা কি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় পেরে উঠবেন? তাদের বেতন-ভাতা তো দ্বিগুণ হচ্ছে না। এর ফলে অর্থনীতিতে গতি আসবে এটা যেমন সত্য, পাশাপাশি অর্থনৈতিক বৈষম্যও বাড়বে। কারণ বাজারে অসম প্রতিযোগিতা শুরু হবে। যাদের ক্রয়ক্ষমতা বেশি তারাই উচ্চমূল্যে পণ্য কিনতে পারবেন। সমাজে অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা দেবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে একদিকে যেমন বাড়িভাড়া বেড়ে যাবে, অন্যদিকে সরকারের পক্ষে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। উল্লেখ্য, বর্তমানে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় রয়েছে। পে-স্কেল বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে বাজারের অবস্থা আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। বর্তমানে পেঁয়াজের কেজি ৮০-৮৫ টাকা। কয়েক দিন আগে ৯০ টাকা ছিল। শাকের আঁটি ২০ টাকা ৪০ টাকা। পেঁপে, আলু বাদে সব সবজিই ৬০ থেকে ৮০ টাকা।
সময়ের ব্যবধানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। এতে কারো অখুশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সেটা যদি মুষ্টিমেয় কিছু লোকের জীবনযাত্রার মান বাড়াতে গিয়ে রাষ্ট্রের অধিকাংশ জনগোষ্ঠীর জীবনে দুর্দশা নিয়ে আসে তা হলে তা জনস্বার্থের পরিপন্থী ছাড়া আর কিছুই নয়। একসঙ্গে দ্বিগুণ না করে এই বেতনই প্রতিবছর একটা নির্দিষ্ট হারে বাড়ানোর জন্য অর্থনীতিবিদরা বহু দিন ধরে পরামর্শ দিয়ে এলেও অজ্ঞাত কারণে সরকার সে দিকে কর্ণপাত করেনি।
অতীতে যতবারই নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করা হয়েছে ততবারই দেশে সব ধরনের পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এর ফলে সমাজে আর্থিক বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা প্রকাশ করে অনেকে বলছেন, বেসরকারি খাতে কর্মকর্তাদের হঠাৎ আয় বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এতে সমাজের বৃহৎ জনগোষ্ঠী চরম দুর্ভোগে পড়বে।
নিউজবাংলা/একে
Comments
comments