নিউজবাংলা: ১৭ অক্টোবর, শনিবার:
ঢাকা: মা ইলিশ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা ওঠে যাওয়ায় মাছ শিকারে ধুম পড়েছে। নদীতে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালী মাছ। বাজারে আসা এই মাছের একটি বড় অংশেরই পেট ভর্তি ডিমে।
অথচ ইলিশ প্রজন্মকে রক্ষা করতেই এবার নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা চারদিন বাড়ানো হয়েছিল। অভিযোগ উঠেছে, যথাযথ তদারকির অভাবে নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এসব মা ইলিশ শিকার করেছে জেলেরা। বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এসব মাছ তখন বাজারে আসেনি। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় এখন মা মাছ বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে।
ইলিশকে শুধু আমাদের জাতীয় মাছ নয় ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সারা বছর ডিম দিলেও প্রধানত অক্টোবর এবং জানুয়ারি ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, আশ্বিনের পূর্ণিমার সময়ে বেশিরভাগ ইলিশ ডিম ছাড়ে। সাগরবাসী হলেও এ সময় প্রচুর মা ইলিশ ডিম ছাড়তে নদীতে ছুটে আসে। আর ইলিশের প্রজননের কথা না ভেবে এ সুযোগে জেলেরা এসব মা মাছ বাজারে বিক্রির জন্য ধরে নিয়ে আসে।
বিষয়টি বিবেচনা করে প্রতি বছর আশ্বিন পূর্ণিমার তিন দিন আগে এবং সাতদিন পর পর্যন্ত ইলিশ ধরা, মজুদ, বাজারজাত ও বিক্রি নিষিদ্ধ করে আসছে সরকার। তবে এতেও মা মাছ ধরা বন্ধ না হওয়ায় চলতি বছর এ নিষেধাজ্ঞার সময়সাীমা চারদিন বাড়ানো হয়। সে অনুযায়ী গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করা হয়।
ওই সময়ে বাজারে ইলিশের দেখা না মিললেও নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরপরই চিত্র পাল্টে যায়। আতঙ্কের বিষয় নিষেধাজ্ঞার কাটতেই বাজারে শুধু ডিমওয়ালা মাছই বিক্রি হচ্ছে বেশি। খোদ রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে। ডিমওয়ালা মাছ নিয়ে সচেতনতার কারণে এ নিয়ে ক্রেতাদের মাঝেও দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা নিয়ে।
বৃহস্পতিবার কাঁঠালবাগান বাজারে মাছ কিনতে আসা সাইফুল ইসলাম বেশ আক্ষেপের স্বরে বলেন, অনেকদিন পর ভাবছিলাম ইলিশ কিনব। বাজারে এসে দেখি ডিম ছাড়া মাছ মিলছে না, আবার ডিমওয়ালা মাছ কিনতেও কেমন জানি লাগছে? শুনেছি মা মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু মনে হচ্ছে না তাতে কোন কাজ হয়েছে।
ওই বাজারে বিক্রেতাদের সাথে কথা জানা গেল, ডিম ছাড়া ইলিশ মাছ নাাই। সত্যতা যাচাই করতে চাইলে এক বিক্রেতা কাটা মাছের পেট থেকে বের করা ডিম দেখালেন। এ মা ইলিশ কখন ধরা হয়েছে জিজ্ঞেস করলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।
বাজারে দেদারসে মা ডিমসহ ইলিশ মাছ বিক্রির ব্যাপারে জানানো হলে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদ বলেন, ‘ইলিশ মাছ সারাবছরই ডিম দেয়। এমন না যে শুধু অক্টোবরে দেয়। এজন্য মাছের পেটে ডিম পাওয়া যেতে পারে’।
তবে মৎস্য বিশেষজ্ঞ মনজুরুল কিবরিয়া শোনালেন ভিন্ন কথা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের এ শিক্ষকের মতে, নিষেধাজ্ঞার সময়ে যথাযথ তদারকির ফাঁকেই এসব মা মাছ ধরা হয়েছে। নয়তো বাজারে ইলিশের ছড়াছড়ি হলেও তাতে এত বেশি ডিমসহ মা মাছ থাকার কথা ছিল না’।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় তদারকির কথা বলা হলেও কতটুকু হয়েছে সেটাই এখন দেখার বিষয়। এখন বাজার দেখে মনে হচ্ছে জেলেরা নিষেধাজ্ঞা না মেনে মা মাছ ধরে মজুদ করে রেখেছে। নিষেধাজ্ঞা কেটে যাওয়ায় ওসব মাছ এখন বাজারে ছাড়ছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আরিফ আজাদ অবশ্য দাবি করলেন যথাযথভাবেই নিষেধাজ্ঞার সময় তদারকি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা তো একা করিনি। র্যাব, নৌবাহিনী, জেলা প্রশাসন, কোস্টগার্ড সবাই মিলে করেছে। একজনের ভুল-ত্রটি দেখিয়ে দিলে সাথে সাথে সংশোধনের চেষ্টা করেছি।
কেউ কেউ ইলিশ প্রজনন নির্ঝঞ্জাট করার জন্য নিষেধাজ্ঞার সময় বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন। এ বিষয়ে আরিফ আজাদ বলেন, ‘এটা চলমান প্রক্রিয়া। গবেষণা ও মাঠ পর্যায়ের মতামতের ভিত্তিতে এটা নির্ধারণ করা হয়। আগে ১১ দিন ছিল, এবার আমরা তা ১৫দিন করেছি। ভবিষ্যতেও পরিবর্তন হতে পারে’।
তবে মনজুরুল কিবরিয়া সময়সীমা না বাড়ানোর পক্ষেই মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, সময়সীমা বৃদ্ধি না, বিষয়টা তদারকির ওপর নির্ভর করে। এখন যে জেলেরা নিষেধাজ্ঞার সময় ইলিশ মাছ ধরা থেকে বিরত থাকে সময় বাড়ানো হলে তারা বিপদে পড়ে যেতে পারে।
নিউজবাংলা/একে