নিউজবাংলা: ২২ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার:
ঢাকা: জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে একজন মুসলমান তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর দরবারে মাথা নীচু করবে, ইহকাল ও পরকালের নিরাপত্তা প্রার্থনা এবং মুক্তি লাভের আশায় কেবলমাত্র তার কাছে আবেদন নিবেদন করবে, বস্তুতঃ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এটাই চান। তিনি চাওয়া ও প্রার্থনা পছন্দ করেন; তার বান্দারা তার কাছে ফরিয়াদ করুক, সুখের দিনে তার নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করুক, দুঃখ দৈন্যের সময় তারই দয়া ও করুনা ভিক্ষা করে দোয়া করুক। আর এই চাওয়াটা হচ্ছে আল্লাহর সুদৃষ্টি লাভের প্রধান সোপান।
‘দোয়া’ অর্থ ডাকা। দোয়া করা হচ্ছে আল্লাহর কাছে পবিত্র নিয়তে হালাল প্রয়োজনে সাহায্য চাওয়া। প্রকৃতপক্ষে, দোয়ার মাধ্যমে একজন মুসলমান তার নিজের দীনতা প্রকাশ করে আল্লাহর রহমত লাভ করে, পাপীরা পাপ মুক্ত হয় আর মুমিনদের মর্যাদা আরও উন্নত হয়। এককথায় দোয়ার বরকতে মানুষ ইহকাল ও পরকালে কল্যাণ লাভ করে।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা আমাকে ডাকো আমি সাড়া দেবো। যারা আমার ইবাদতে অহংকার করে তারা সত্ত্বরই জাহান্নামে দাখিল হবে লাঞ্ছিত হয়ে।” (সুরা মুমিন আয়াত-৬০)।
পবিত্র আল-কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ মানুষকে শিখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে দোয়া করতে হবে। কেননা দোয়া মুমিনের অন্যতম বড় হাতিয়ার। এর মাধ্যেমে মু’মিন ব্যক্তি মহান আল্লাহর কাছে নিজস্ব আবেগ ও কামনা-বাসনা যেমনি তুলে ধরতে পারে, তেমনি সকল সুখ-দুঃখ ও চাওয়া-পাওয়ার তীব্র অনুভূতিগুলোও বিনম্র ও কাতর কণ্ঠে নিবেদন করতে পারে। নিভৃত-নির্জনে বান্দা যখন আপন রবের দরবারে হাত বাড়িয়ে দেয়, তখন এই একাকীত্বের মধ্যদিয়ে বান্দা অন্যদের তুলনায় ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হতে থাকে।
এ মর্মে প্রখ্যাত সাহাবি আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে আল্লাহর রাসূল স. বলেন, ‘নিঃসঙ্গ লোকেরা এগিয়ে গেলো’। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! নিঃসঙ্গ একাকী লোক কারা?’ উত্তরে রাসূল স. বলেন, ‘আল্লাহ তা’আলার অত্যধিক যিকিরকারীগণ’। [সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-২০৬২]। যিনি হাত তুলে দোয়া করছেন তিনিও যেহেতু যিকিরকারী, তাই এই ফযিলত দোয়া বা প্রার্থণাকারীরাও পাবেন।
বাহ্যত এমনটাও দেখা যায়, আমরা অনেক দোয়া করি কিন্তু কবুল হয় না, দোয়ার বাস্তব প্রতিফলন ঘটে না। ফলে আল্লাহর কিছু বান্দা এমনটাও বলে ফেলেন, ‘আল্লাহর রহমতের দৃষ্টি আমার ওপর নেই বললেই চলে’। এটা আমাদের ভ্রম মাত্র। আল্লাহতা’আলার অসীম দয়া এবং বান্দার প্রতি তার উদারতা ও মমত্ববোধের ব্যাপারে জ্ঞান স্বল্পতার কারণেই এমনটা আমরা মনে করতে পারি।
সালমান ফারিসী রা. সূত্রে আল্লাহর রাসূল স. স্রষ্টার সে মমত্বের কথাই তুলে ধরে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ লাজুক ও দয়াময়। মানুষ যখন তার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়, তখন তিনি তা ব্যর্থ ও শূন্যহাতে ফিরিয়ে দিতে লজ্জা পান’। [সুনান তিরমিযী, হাদিস নং ৩৮৬৫]
অনেকের মনে হয়তো এই প্রশ্নও আছে, খালি হাতে যদি আল্লাহ ফিরিয়ে নাই দিয়ে থাকেন, তাহলে আমরা যে দোয়া করলেও কদাচিত ফল পাই না সেই প্রশ্ন-ই বা যাবে কোথায়? আসলে এর উত্তরও আছে হাদীসে।
আবূ সাঈদ খুদরী রা. বর্ণিত হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোনো মুসলমান যদি এমন দোয়া করে যাতে না থাকে কোনও পাপ, আর না থাকে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নজনিত বিষয়, তাহলে আল্লাহ তাকে তিনটির যে কোনও একটি অবশ্যই দিবেন-
এক. হয়তো তাত্ক্ষণিক দোয়া কবুল করে নিবেন।
দুই. অথবা প্রার্থনার সাওয়াব তার জন্য আখিরাতে সঞ্চয় করে রাখবেন।
তিন. নতুবা দোয়ার পরিমাণ বিপদ-আপদ থেকে আল্লাহ তাকে উদ্ধার করে দিবেন।
একথা শুনে সাহাবায়ে কেরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাহলে আমরা বেশি বেশি দোয়া করবো। উত্তরে তিনি বলেন, ‘তাহলে আল্লাহ তোমাদের এর চাইতেও বেশি দেবেন।’ [সুনান তিরমিযী, হাদিস নং ৩৫৭৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ১১,১৩৩]।
একটি দুর্বল সূত্রে বর্ণিত হাদীসে আরও এসেছে- ‘কিয়ামতের দিন যখন বান্দা দোয়ার বিনিময়ে সঞ্চিত সাওয়াবের পরিমাণ দেখবে তখন কামনা করবে, যদি তার কোন প্রার্থনাই দুনিয়াতে কবুল না হতো! সবই যদি আখিরাতের জন্য জমা থাকতো!’ [আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, ২/৪৭৫-৭৬]। তাই বিশ্বাসী বান্দাদের জন্য হতাশ হওয়ার কোনও কারণ নেই। তার দোয়া কখনো বিফলে যাবে না। কারণ স্বয়ং আল্লাহ প্রতিফল দান থেকে তার বান্দাকে বঞ্চিত করতে চান না।
যাদের দোয়া কবুল হয়
পিতা-মাতার দোয়া সন্তানের জন্য। সন্তানের দোয়া পিতা-মাতার জন্য। মুসাফিরের দোয়া। বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির দোয়া। মজলুম (অত্যাচারিত-নির্যাতিত-নিপীড়িত) ব্যক্তির দোয়া। (আবু দাউদ, ১: ১৫৩৬)। হাজির দোয়া (হজের সময় ও হজ সম্পাদনের পর ৪০ দিন পর্যন্ত)। মুজাহিদের দোয়া। রোগীর দোয়া। মুসলমান ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে অন্য মুসলমানের দোয়া। (মিশকাত, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২২৬০; মুসলিম, ৪: ২৭৩৩)। রোজাদারের দোয়া ইফতারের সময়। (তিরমিজি, ৪: ২৫২৬)। অসহায় ও দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তির দোয়া। (সূরা নামল, আয়াত: ৬২)। ইমামে আদিলের (সুশাসক ও ন্যায়বিচারক) দোয়া। (তিরমিজি, ৪: ২৫২৬)। বন্ধুর জন্য বন্ধুর দোয়া। নেককার ব্যক্তির দোয়া।
নিউজবাংলা/একে
Comments
comments