Breaking News

শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড অথচ…!

নিউজবাংলা: ১৭ অক্টোবর, শনিবার:

Face is the index of mind মুখ দেখলে মনের খবর বোঝা যায়। এটি একটি ইংরেজি প্রবাদ। ‘শিক্ষা জাতির মেরুদ-‘ এটিও একটি ইংরেজি প্রবাদ। ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে শিক্ষার শুরুত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে- দ্বিতীয় প্রবাদবাক্যটিতে। অর্থাৎ মেরুদ-হীন প্রাণী বা মানুষ যেমন সোজা হয়ে চলতে পারে না, তেমনি শিক্ষা ছাড়া মানুষ বা জাতি সোজা হয়ে চলতে পারে না। তবে শিক্ষার শ্রেণিভেদ আছে। যেমন দুর্বল বা মন্দ অর্থে-

নকল বিদ্যা, মুখস্ত বিদ্যা, সেকেলে বিদ্যা, বিবিধ।

আদর্শগত বা সবল অর্থে শিক্ষা হবে-

আধুনিক প্রযুক্তিগত শিক্ষা, সৃজনশীলতা অর্জন, জ্ঞান, বিজ্ঞান, চিকিৎসা, শিল্প, কারিগরি বিদ্যা, গবেষণা ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রে শিক্ষার গুণগত মান অর্জনই হবে ব্যক্তি ও জাতীয় লক্ষ্য।

কিন্তু সেই শিক্ষাই যদি হয় দুর্বল তাহলে ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে আশাতীত অর্জন ব্যাহত হবে। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে নানা অরাজকতাও দেখা দেবে। এর উদাহরণ তো আমাদের বাংলাদেশেই। নিজেকে কখনোও ছোট ভাবতে নেই। অনুরূপ নিজের দেশকেও হেয় করতে নেই। এটি একটি গুরুতর অপরাধ। তারপরও অর্থনীতিবিদরা বলেন, মদ খাওয়া হারাম, কিন্তু মানুষ যদি সেই মদ খায় তাহলে অর্থনীতিবিদদের কাজ হলো সেই মদ নিয়ে অর্থ শাস্ত্রে আলোচনা করা। উল্লেখ্য, ২ অক্টোবর (২০১৫) সমকাল প্রথম পৃষ্ঠায় (শিক্ষা-শিক্ষক) যে লিড নিউজ করেছে তার শিরোনাম করা হয়েছে_ ‘৬০ হাজার শিক্ষকের সনদ জাল’।-সমকাল

অর্থাৎ দুর্বল শিক্ষক। দুর্নীতির বোঝা মাথায় নিয়েই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় পথ চলতে হচ্ছে। কিন্তু কেনো? কেনো কথার উত্তরে কোনো কোনো বিদগ্ধ ব্যক্তিদের অভিমত হলো যে দেশে ১৫৩ বা ১৫৪ জন এমপি জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হয়ে নির্বাচিত ঘোষণা করে দেশ চলতে পারে। যে দেশের পার্লামেন্টে নির্বাচিত সঠিক কোনো বিরোধী দল নেই। সেদেশে বোকাস অর্থাৎ ভুয়া শিক্ষকদের নিয়েই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলছে বা চলাটাও তেমন আশ্চর্য কিছুই নয়।

বর্তমানে আমাদের চিকিৎসকরা বলছেন, দেশের অধিকাংশ মানুষের অসুস্থতার মূল কারণ খাদ্য। ফসলে মাত্রাতিরিক্ত সার, কীটনাশক ব্যবহারের কারণে মানুষ ক্যান্সার থেকে শুরু করে অজানা কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন দিনে দিনে। অনরূপ নকল বিদ্যা প্রশ্নপত্র ফাঁসযুক্ত প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা গ্রহণ। নকল শিক্ষক বা দুর্বল শিক্ষক দিয়ে কঠিন সৃজনশীল পদ্ধতি অনুশীলনপূর্বক শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কতটুকু সফল হচ্ছে (২০১৫) এবারের এইচএসসি পরীক্ষার কিছুটা ফল বিপর্যয়ের মূল কারণটা যে কী? তা জ্ঞানী জনরাই উপলদ্ধি করতে পেরেছেন। স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদও বলতে বাধ্য হয়েছেন, সৃজনশীল পদ্ধতি উন্নত সিলেবাস দুর্বল শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিলেও তাদের অনেকেই তা ঠিকমতো গ্রহণ করতে পারছেন না।

অর্থাৎ দুর্বল শিক্ষক। দুর্বল পাঠদান পদ্ধতি। পরীক্ষা হলে নকলের মূল উৎসে নকল শিক্ষকদের নকলের ভূমিকা জাতিকে যেভাবে মেরুদ-হীন করে তুলেছে_ তার বিচিত্র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দুটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ এ অধ্যায়ে উপস্থাপন করবো দেশের প্রথিতযশা দুইজন ব্যক্তিত্বের দুটি লেখার অংশ বিশেষ থেকে।

যে জাতি শিক্ষা, জ্ঞান বিজ্ঞান, দেশপ্রেমে দুর্বল সে জাতির কি আর দুর্ভোগ কাটে?

ড. শেখ আবদুস সালাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ৭ অক্টোবর (২০১৫) বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার উপসম্পাদকীয় কলামে যে বিষয়টি লিখেছেন তার শিরোনাম করা হয়েছে_ ‘সম্ভাবনার বাংলাদেশ : যেন হোঁচট না খায়’।

লেখক তার লেখার প্রথম অধ্যায়ে দেশের উন্নতিতে সরকারের সফলতার কথা উল্লেখ করতে যেয়ে বলেছেন- চীন, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশ থেকে বেশ কিছু সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে। নোবেল জয়ী অমর্ত্য সেন তিনি তার বক্তব্যে এসকল কথা মাঝে মধ্যে উল্লেখ করে থাকেন বলে জানান।

বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি (১১৯০) ডলার প্রায় দুই দশক ধরে কম বেশি ৬ ভাগ হারে বার্ষিক জিডিপি বৃদ্ধি ধরে রাখা, শতকরা ৬০ ভাগ হারে দরিদ্র হরাস এবং চরম দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর হার কমে আসা, একদিকে মোট প্রজনন হার (ঞঋজ) হরাস ১.৮% পাওয়া অন্যদিকে মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭০ বছর বেড়ে যাওয়া, ১৯৭৩ সালের তুলনায় তিন গুণ বেশি খাদ্য উৎপাদন এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, দেশের সার্বিক সঞ্চয় বিনিয়োগ অনুপাত বেড়ে যাওয়াসহ প্রভৃতি সূচকের দিকে তাকালে আমরা আমাদের দেশকে নিয়ে অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় অপেক্ষাকৃত এক উজ্জ্বল বাংলাদেশের ছবি দেখতে পাই।

কিন্তু সুপ্রিয় পাঠক সমাজ আমি আমার লেখার শুরুতে যে কথাটি বলতে চেয়েছিলাম সে কথাটি হলো দেশ বিভিন্ন দিক দিয়ে যে এগিয়ে যাচ্ছে না একথা বলতে চাইনি আদৌ। আমার বক্তব্য হচ্ছে ‘শিক্ষা যদি জাতির মেরুদ- হয়’ তাহলে যারা শিক্ষা দেন সেই শিক্ষক ভুয়া বা জাল সনদধারী শিক্ষক দিয়ে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হবে কেনো? দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায়, মেডিকেল চিকিৎসার ক্ষেত্রে (ডাক্তারি নির্বাচন পরীক্ষায়) সবল মেধাবীর পরিবর্তে দুর্বল মেধার প্রাধান্য দিতে হবে কেনো? কেনো প্রাইমারি পরীক্ষা থেকে শুরু করে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, বিসিএস, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনা প্রতিবছর শুনতে হবে? কেনো প্রতি বছর শিক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে রাজপথে লড়াই করবেন? এ সকল অন্যায় প্রতিরোধের দায়-দায়িত্ব কার?

এ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণসংযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম তার লেখার শেষ অধ্যায়ে যে সকল বিষয়সমূহ উল্লেখ করেছেন সেই অংশটুকুতে পাঠক সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ঃ

তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি এখনো অনেকটা অনুপস্থিত। দেশের শাসন ব্যবস্থাসহ প্রায় সবক্ষেত্রে অযাচিত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, ঘুষ-দুর্নীতি-টেন্ডারবাজি ইত্যাদি আজকাল অনেকটা দৃশ্যমান। সমাজ এবং রাষ্ট্রে মানবাধিকারের বিষয়গুলো কখনো কখনো প্রশ্ন সাপেক্ষ। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় ৫৯টি শিশু নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে রাজধানী থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত। রাজনীতিবিদদের এক ধরনের দাপট এবং দৌরাত্ম্য কখনো কখনো দেশের বিভিন্ন এলাকার পরিবেশ পরিস্থিতিকে অশান্ত করে ফেলার বিষয়টি আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার যাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে তুলছে।

একদিকে শিক্ষাক্ষেত্রে বিশাল অর্জন অন্যদিকে শিক্ষাঙ্গনের অস্থিরতা, রাস্তায় নকলের বিরুদ্ধে দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীদের মিছিলের শব্দ গ্রহণযোগ্য নয়। রাজধানী কিংবা দেশের বড় শহরগুলোতে বসবাসকারী মানুষ তাদের দৈনন্দিন যাতায়াত ব্যবস্থা, গ্যাস, পানি, পরিবেশ প্রভৃতি ক্ষেত্রে স্বস্তিতে নেই। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের বক্তব্য উল্লেখ করে সম্প্রতি দু-একটি পত্রিকা খবরের হেড লাইন করেছে ‘ঢাকা এখন আইসিইউতে’। শহর গ্রাম নির্বিশেষে প্রায় সব জায়গায় যথাযথ নাগরিক সুবিধার অভাব, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এসবের কারণে সরকারের অর্জনগুলো কখনো কখনো যেন ক্লিশে হয়ে যেতে অর্থাৎ মস্নান হয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। লেখকের আবেদন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন যেন মস্নান না হয়। আমাদের লড়াই হবে এগিয়ে যাওয়ার। স্বপ্নের ধরনটা কেমন হবে তা বলতে যেয়ে ভারতের প্রয়াত বৈজ্ঞানিক এবং দার্শনিক রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালামের কথা উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘ওটা স্বপ্ন নয়, যা তুমি ঘুমিয়ে দেখ, স্বপ্ন তাই যা তোমাকে ঘুমাতে দেয় না’।

কিন্তু ‘শিক্ষা যদি জাতির মেরুদ- হয়’ সেই শিক্ষা ব্যবস্থায় একদিকে দক্ষ শিক্ষকের অভাব (ভুয়া শিক্ষক নিয়োগ) অন্যদিকে দক্ষ বা শিক্ষক সমাজের অবমূল্যায়ন জাতির ভবিষ্যৎ স্বপ্নের অন্তরায় নয় কী?

৯ অক্টোবর ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ পত্রিকার উপসম্পাদকীয় কলামে অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহম্মদ জাফর ইকবাল মহোদয়ের উপসম্পাদকীয় কলামে তার এক লেখার শিরোনাম করা হয়েছে_

‘শিক্ষকদের মান অপমান’ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ কলামিস্ট অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল তিনি তার লেখার শুরুতেই আক্ষেপ করেই লিখেছেন_

এ দেশের শিক্ষকদের জন্য এখন খুবই একটা খারাপ সময় যাচ্ছে। স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষকই এখন কোনো না কোনো আন্দোলনে আছেন। যেহেতু আন্দোলন শব্দটা এখন মোটামুটি একটা অশালীন শব্দ। তাই এ দেশের প্রায় সব শিক্ষক এখন দেশের মানুষের কাছে রাীতিমতো একটা অপরাধী গোষ্ঠী। শিক্ষকদের জন্য যেহেতু এ দেশে কোনো সম্মানবোধ নেই, তাই তারা কেন আন্দোলন করছেন, বিষয়টি কেউ খুঁটিয়ে দেখছেন কিনা সেটা নিয়েও আমার সন্দেহ আছে। ছাত্রলীগের কর্মী এখন অবলীলায় তাদের শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলতে পারে। একজন সংসদ সদস্য প্রকাশ্যে চাবুক মারার ঘোষণা দিতে পারেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের বেতন-ভাতা নিয়ে খোটা দিতে পারেন কেউ কিছু মনে করেন না। আমাদের দেশের কিছু পত্রপত্রিকা বিষয়গুলো এমনভাবে উপস্থাপন করে যে, দেশের সাধারণ মানুষের কাছে পুরো বিষয়টি এক ধরনের আমোদ বলে মনে হতে পারে।

আমি একজন শিক্ষক, তাই খুবই সংকোচের সঙ্গে শিক্ষকদের জীবন নিয়ে একটি দুটি কথা বলতে বসেছি। শিক্ষকরাও যে মনুষ্য জাতীয় প্রাণী, তাদেরও যে ক্ষুধা তৃষ্ণা থাকতে পারে পরিবার সন্তান থাকতে পারে এবং তারাও যে দেশের মানুষের কাছে একটুখানি সম্মান চাইতে পারেন বিষয়টি জেনে কেউ যদি অবাক হয়ে যান তাহলে তার জন্য অগ্রিম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। লেখক যেহেতু একজন শিক্ষক (বিশ্ববিদ্যালয়ের) তাই তিনি দেশের সর্বস্তরের শিক্ষকদের মানসম্মান নিয়ে ভাবনা ভাবেন। ভাবনার অংশ বিশেষ এ অধ্যায়ে আলোচনা করতে যেয়ে তিনি উল্লেখ করেছেন তার লেখায় এযাবৎ একজন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক, নিজ হস্তে ঝাড়ু দিয়ে স্কুল ঘর পরিষ্কার করে, বালতির পানি দিয়ে টয়লেট পরিষ্কার করে পরে ক্লাসে ঢুকে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়েছেন যদিও ইদানীং ঘণ্টা পেটা একজনকে নিয়োগ দিয়েছেন সরকার (সকল প্রতিষ্ঠানে)

শুধু কি তাই? দিনভর দু’শিফ্ট ক্লাস নিতে হয় তাদের। গ্রামের স্যানিটারি ল্যাট্রিন গোনা, ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণ, শিশু গণনা এমনি কত ‘ফালতু’ কাজ করানো হয় তাদের দিয়ে?

সংবেদনশীল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মনোবেদনার করুণ লেখচিত্র অঙ্ক করতে যেয়ে তার লেখায় উল্লেখ করেছেন, এক সময় একজন লেকচারারের বেতন কত তা বলতে যেয়ে (খবরের কাগজেও ছাপা হয় সে খবর) বেচারার বিয়ে ভেঙে যায়। সুতরাং নতুন করে আর শিক্ষকদের বেতনের কথা বলতে চান না তিনি।

তিনি তার লেখায় আরো উল্লেখ করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কয়েকদিন থেকে মন খারাপ আমাদের প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষকদের নিয়ে কিছু খোলামেলা কথার কারণে। সেই ছোট বেলা থেকে শুনে আসছি। কানাকে কানা বলিও না খোড়াকে খোড়া বলিও না, সেই হিসেবে এ কথাটিও নিশ্চয় সত্যি যারা টাকা পয়সা নিয়ে এক ধরনের টানাটানির মাঝে থাকেন তাদের টাকা পয়সা নিয়ে খোটা দিলে তারা কানা এবং খোঁড়ার মতোই অসম্মানিত বোধ করেন।

লেখকের (অধ্যাপক) মূল বক্তব্য বেতন অপেক্ষা পদমর্যাদার। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে সচিবকে দেখে যদি তার পদমর্যাদার কারণে স্যুালুট দিতে হয় দাঁড়িয়ে এখানেই তো বিড়ম্বনা!

একজন শিক্ষকের নির্দিষ্ট বেতন-ভাতা ছাড়া বাড়তি আয় কত? অথচ একজন সচিব নাকি তার গাড়ির তেল খরচ বাবদ যে টাকা পান তা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বেতন অপেক্ষাও বেশি। সে তুলনায় শিক্ষকের বেতন কম!

বলাবাহুল্য একে একে বহু যুগ ও সাল অতিক্রম করলো। ইংরেজ গেলো, পাক আমল গেলো, বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৪৪ বছর অতিক্রম করার পথে। তারপরও ব্রিটিশের সেই আচরণ গেলো না আজও। কিন্তু কি সেই আচরণ? সুলেখক সৈয়দ মুজতবা আলী তার ‘প-িত মহাশয়’ প্রবন্ধে উল্লেখ করেছিলেন একজন শিক্ষকের বেতন মাসিক ২৫ টাকা।

স্বাধীনতা অর্জনের পর শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েছে। মান উন্নয়ন হয়েছে ঠিকই; কিন্তু পদমর্যাদাসহ তুলনামূলকভাবে (দেশের অন্যান্য বিভাগ অপেক্ষা) শিক্ষকদের বেতন-ভাতা তেমন বাড়েনি।

শত মন খারাপের পরও শিক্ষক আনন্দ খুঁজে পান তখনই যখন তিনি শুনতে পান তার ছাত্রছাত্রীরা এসে বলেন তাদের তৈরি রকেট সারাদেশে চ্যাম্পিয়ন হয়ে এসেছে। যখন দেশের খুব গুরুত্বপূর্ণ মানুষ টেলিফোন করে আমাদের ছাত্রছাত্রীদের তৈরি ড্রোনটি দেশের সত্যিকার কাজে ব্যবহার করার জন্য আগ্রহ দেখায় তখন বুকটা একশ হাত ফুলে যায়। যখন প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় ছাত্রছাত্রীরা সারাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ হয়ে ফিরে আসে তখন মনে হয় এ পৃথিবীতে (শিক্ষক) আমার চেয়ে সুখী কে আছে?

আসলে না বুঝলে বুঝ দেয়া কঠিন। যে কারণে দেশের চার পাশে সবাই মিলে শিক্ষকদের মন খারাপ করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। অথচ ডাক্তার বউ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। মাস্টারদের কপালে ডাক্তার বউ জোটে না। ইঞ্জিনিয়ার বউ বিয়ে করতে চায় না। সাধারণ ঘরের উচ্চ শিক্ষিত মেয়েরাও আজকাল মাস্টার, শিক্ষকদের তেমন পছন্দ করেন না। কারণ বেতন এবং বাড়তি আয় কম!

শিক্ষকদের ভরসা তাদের ছাত্রছাত্রীরা। যতদিন শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সঙ্গে আছে ততোদিন মন খারাপের কি আছে? -বক্তব্য অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তাইতো পরিশেষে বলি-

‘মন তুমি কহযে,

ভালো মন্দ যাহাই আসুক,

সত্যরে লও সহজে’।

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (বোঝা পড়া কবিতার অংশ)।

আলহাজ্ব মো. রবিউল হোসেন : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

নিউজবাংলা/একে

Next: রাণীশংকৈল জেলখানাটি এখন ভুতের বাড়ি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*