Breaking News

হযরত মোহাম্মদ (সা.)’র প্রতি সাহাবী (রা.)এর মহব্বত

নিউজবাংলা: ২১ অক্টোবর, বুধবার:

ঢাকা: ইসলামের ইতিহাসের তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান (রা.)। তিনি মক্কার প্রভাবশালী কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পূর্বপুরুষের সঙ্গে তার পঞ্চম পুরুষের যোগসূত্র ছিল। ইসলাম-পূর্ব জীবনে হজরত উসমান (রা.)-এর ডাকনাম ছিল আবু আমর এবং আবদুল্লাহ। বাল্যকাল থেকেই তিনি ছিলেন উদার, অমায়িক, নম্র ও চরিত্রবান। হজরত উসমান (রা.)-এর বয়স যখন ছত্রিশ বছর, তখন মক্কানগরে দ্বীন ইসলামের দাওয়াতের কাজ শুরু হয়। তিনি তার ব্যক্তিগত পবিত্রতা, সত্যানুসন্ধিৎসা ও সত্যপরায়ণতার কারণে দ্বীন ইসলামের দাওয়াত কবুল করার জন্য প্রস্তুতি নেন। তিনি ছিলেন আরব দেশের সম্পদশালী ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম। দাওয়াতের প্রথম পর্যায়ে হজরত আবু বকর (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। হজরত উসমান (রা.)-এর সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক ছিল। একদিন হজরত আবু বকর (রা.) তার কাছে ইসলামি দাওয়াত পেশ করেন। হজরত উসমান (রা.) সবকিছু শুনে রাসুল আকরাম (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে ইসলাম কবুল করার জন্য সিদ্ধান্ত নেন। একদিন পথিমধ্যে রাসুল করিম (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তিনিও ইসলাম কবুল করার জন্য হজরত উসমান (রা.)-কে মর্মস্পর্শী ভাষায় আহ্বান জানান। রাসুল করিম (সা.)-এর মুখ নিঃসৃত বাণী শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে কলেমা শাহাদত পাঠ করতে শুরু করেন এবং নবী করিম (সা.)-এর পবিত্র হাতে হাত রেখে ইসলাম গ্রহণ করেন।
তিনি যে সময় ইসলাম গ্রহণ করেন, তখন মুসলমানদের সংখ্যা ছিল মাত্র পঁয়ত্রিশ বা ছত্রিশ জন। ইসলামে বয়াত হওয়ার পর তার চাচা হাকাম তাকে রশি দিয়ে খুঁটিতে বেঁধে প্রহার করলেও তিনি তার বিশ্বাসে অটল থাকেন। ইসলাম গ্রহণ ও মহানবী (সা.)-এর প্রতি ভালবাসার কারণে তাকে কঠোর পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। হজরত উসমান (রা.) ছিলেন উমাইয়া বংশের লোক। গোটা উমাইয়া বংশটিই ছিল হজরত নবী করিম (সা.)-এর বংশ হাশিমের চরম প্রতিদ্বন্দ্বী ও বিরুদ্ধবাদী। কিন্তু হজরত উসমান (রা.)-এর হৃদয় দর্পণ বংশীয় ও গোত্রীয় হিংসা-দ্বেষ ও বিরোধিতার সব কলঙ্ক কালিমা থেকে মুক্ত এবং স্বচ্ছ ছিল বলে শত বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও ইসলামের ওপর টিকে থাকা তার পক্ষে সম্ভব হয়েছিল। ইসলামের ক্রমবর্ধমান প্রসারতা ও শক্তি বৃদ্ধি হতে দেখে মক্কার মুশরিক সমাজ খুবই চিন্তিত ও শঙ্কাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ক্রমেই তাদের ক্রোধ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠতে থাকে। ফলে হজরত উসমান (রা.) স্বীয় ব্যক্তিগত গুণ-গরিমা ও বংশগত মানমর্যাদা সত্ত্বেও ইসলামের জন্য অমানুষিক নির্যাতন ও নিপীড়ন ভোগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। আত্মীয়স্বজনের মধ্য থেকে তেমন কেউ তাকে এ অবস্থা থেকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসতে প্রস্তুত হয়নি। তার ওপর এ অত্যাচারের মাত্রা ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকে। শেষ পর্যন্ত হজরত উসমান (রা.)-এর পক্ষে অসহ্য হয়ে ওঠে। তখন তিনি হজরত রাসুল করিম (সা.)-এর ইঙ্গিতে সপরিবারে হাবশায় হিজরত করেন। রাসুল করিম (সা.) বলেন, এ জাতির মধ্য থেকে সর্বপ্রথম হিজরতকারী ব্যক্তি উসমানই। হাবশায় (আবিসিনিয়ায়) কয়েক বছর অবস্থান করার পর মক্কায় প্রত্যাবর্তনের পরই মদিনায় হিজরত করার সব আয়োজন সুসম্পন্ন হয়। তখন হজরত উসমান (রা.) সপরিবারে মদিনায় হিজরত করেন। বদরের যুদ্ধ ছাড়া যে কয়টি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে, তার প্রত্যেকটিতেই তিনি পূর্ণ সাহসিকতা ও বীরত্ব সহকারে নবী করিম (সা.)-এর সঙ্গী হয়েছেন।
রাসুল করিম (সা.)-এর প্রতিনিধি মর্যাদাসম্পন্ন খলিফার অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ছিল ইসলামের প্রচার ও প্রসার। এদিক দিয়ে হজরত উসমান (রা.)-এর প্রথম থেকেই বিশেষ লক্ষ্য ও দৃষ্টি ছিল। জিহাদে যেসব অমুসলিম বন্দি হয়ে আসত, তাদের সম্মুখে তিনি নিজের দ্বীনের ব্যাখ্যা করতেন ও তার সৌন্দর্য প্রকাশ করতেন এবং দ্বীন ইসলাম কবুল করার জন্য তাদের আহ্বান জানাতেন। ফলে শত শত পথহারা অন্ধ ইসলাম গ্রহণ করে মুসলিম সমাজের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ লাভ করে। অমুসলিমদের কাছে ইসলাম প্রচার ছাড়াও মুসলমান জনগণের ধর্মীয় শিক্ষার ব্যাপক ব্যবস্থাও তিনি করেছিলেন। দ্বীন সংক্রান্ত মাসলা-মাসায়েল নিজেই জনগণকে জানিয়ে দিতেন। কোনো বিষয়ে দ্বীনের হুকুম তার জানা না থাকলে অন্য সাহাবির কাছে জিজ্ঞেস করে নিতেন ও তদনুযায়ী আমল করতেন এবং লোকদের তা অনুসরণ করে চলার জন্য নির্দেশ দিতেন। এ ব্যাপারে তিনি কোনোরূপ দ্বিধা-সঙ্কোচ প্রশ্রয় দিতেন না। সংক্ষেপে কথা এই, তৃতীয় খলিফার শাসন আমলে ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞানের ব্যাপক ও শিক্ষা প্রসারের সুষ্ঠু ব্যবস্থা করা হয়েছিল। হজরত উসমান (রা.)-এর ইসলাম প্রচারের অবদান অনেক ব্যাপক।
হজরত উসমান (রা.) জীবনের সর্বক্ষেত্রেই হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্য আত্মোৎসর্গকৃত ছিলেন। দৈনন্দিন জীবনে রাসুল করিম (সা.)-এর কষ্ট দূরীভূত করার জন্য তিনি সর্বদা সচেতন ও সজাগ থাকতেন। রাসুল করিম (সা.)-এর প্রতি ব্যক্তিগত শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনে তিনি এতই সতর্ক ছিলেন যে, তার যে হাত দিয়ে রাসুল করিম (সা.)-এর হাত স্পর্শ করে ইসলামের বয়াত গ্রহণ করেছিলেন, তাতে তিনি জীবনে কোনোদিন একবিন্দু পরিমাণ মালিন্যও লাগাতে দেননি। তিনি তার খেলাফত আমলে রাসুল করিম (সা.)-এর পরিবারবর্গের প্রয়োজন পূরণের যথাযথ ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন, যেন তাদের কোনোরূপ দৈন্য ও অসুবিধার সম্মুখীন হতে না হয়।
রাসুল করিম (সা.)-এর প্রতি তার অকৃত্রিম সুগভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এবং নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার অনিবার্য ফল এই ছিল যে, তিনি প্রত্যেকটি ব্যাপারে মহানবী (সা.)-কে অনুসরণ করে চলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতেন। কথায়, কাজে ও সাধারণ গতিবিধিতে হুবহু রাসুল করিম (সা.)-এর অনুরূপ করার জন্য তার চেষ্টার কোনো ত্রুটি হতো না। নবী করিম (সা.)-কে তিনি যেভাবে অজু করতে দেখেছেন, সালাত আদায় করতে দেখেছেন, লাশের প্রতি সম্মান ও আচরণ করতে দেখেছেন, তিনিও এসব কাজ ঠিক সেভাবেই করতেন। কাউকে রাসুল করিম (সা.)-এর সুন্নতের বিপরীত বা ভিন্নতর রীতিতে কোনো কাজ করতে দেখলে সঙ্গে সঙ্গেই তিনি তাতে আপত্তি জানাতেন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করতেন, তুমি কি রাসুল করিম (সা.)-কে এ কাজ করতে নিজ চোখে দেখনি? আল্লাহপাক আমাদেরও মহানবী (সা.)-এর প্রতি অগাধ ভালবাসা সৃষ্টি করুন এবং তাঁর প্রতি প্রতিনিয়ত দরুদ পাঠ করার তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক আল আমীন চৌধুরী :

নিউজবাংলা/একে

Next: রাজীবপুরে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*