নিউজবাংলা: ০৩ জুন, শুক্রবার:
নূরুজ্জামান রিকো, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি :
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ারলীগ জয় করে দীর্ঘ দুই মাস ক্লান্ত হয়ে বীর দর্পে নিজের জন্মভুমি সাতক্ষীরা কালিগঞ্জ উপজেলার তেতুলিয়ায় গ্রামে বিশ্্রাম নিচ্ছেন কার্টার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান।
প্রথমবারেরমত আইপিএল খেলতে যেয়ে বাজিমাত করলেন বাংলাদেশি এই পেচার। হয়েছেন সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়। আইপিএল খেলতে যেয়ে মুস্তাফিজুর রহমান পেয়েছেন নতুন উপাধি ‘দ্যা ফিজ’। আর দেশে পেয়েছেন তিনি জাতীয় বীরের খেতাব। আইপিএল কাঁপানো বিশ^সেরা ক্রিকেটার মুস্তাফিজ এখন ১৬ কোটি মানুষের সন্তান। আগামি বিশ^কাপ চ্যাম্পিয়নশীপ বাংলাদেশের জন্য বয়ে আনবেন তিনি, এমন প্রত্যাশায় তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের মানুষ এখন উদ্বেলিত। তারা মুস্তাফিজকে নিয়ে এখন আত্মহারা।
আগামিতে তিনি আরও ভালো খেলে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবেন এমন প্রত্যাশা তাদের। সাতক্ষীরার অজো পাড়াগাঁয়ের ছেলে মুস্তাফিজ একদিন যে এতোবড় মাপের ক্রিকেটার হয়ে উঠবেন তা কেউ জানতোনা। স্কুলে লেখাপড়ায় যার মন ছিল না কেবলই ক্রিকেট খেলে নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন সেই ছোটবেলা থেকে এখন তিনিই বিশে^র সেরা বোলার। সেরা ক্রিকেটারই নন শুধু তিনি বাংলাভাষা শিখিয়েছেন বিদেশীদেরও । তিনি এ যুগের ভাষা সৈনিক বলে জানালেন তার গ্রামবাসী। তার সাথে কথা বলতে ও দেখা করতে দলে দলে লোক আসছেন মুস্তাফিজের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের তেতুলিয়া গ্রামে। তিনি কথা বলছেন, তবে মিডিয়ার সামনে নয়। পায়ের চোট এখনও কিছুটা আছে বলে জানালেন তিনি। গ্রামের মানুষ উন্মুখ হয়ে আছেন তাকে সংবর্ধনা দিতে। কিন্তু মুস্তাফিজ না করেছেন। আর তার গ্রামের ছেলেরা বলছেন আমরাও এক একজন মুস্তাফিজ হয়ে উঠতে চাই। শিশুসুলভ চপলতা ও অত্যন্ত সরল সহজ তরুন বাঁ-হাতি পেসার মুস্তাফিজ এখন বাড়িতে কয়েকদিনের ছুটি কাটাচ্ছেন। তিনি মিডিয়ার সাথে কোনো বলা বারন রয়েছে বলে জানালেন। আধো আধো ভাষায় কথা বললেন তিনি। বললেন কবুতর পালন তার অন্যতম হবি।
ভারতে প্রায় দুই মাস ধরে আইপিএলে খেলে বাড়ি ফিরেছেন মুস্তাফিজ। স্বজনদের মাঝে আসতে পেরে তিনি আনন্দিত। গ্রামের মানুষ স্কুল মাঠে বড় পর্দা টানিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে নিয়মিত মুস্তাফিজের খেলা দেখেছেন। তারা তাদের সন্তানের খেলায় মুগ্ধ হয়ে করতালি দিয়ে তৃপ্তি বোধ করেছেন।
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার তারালি ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া গ্রামের সবুজবেষ্টিত বাড়িতে দুই মাস পর ফিরেছেন তিনি। এর থেকে ভাল লাগা আর কি হতে পারে। মা যা রান্না করেন তাই ভালো লাগে। তবে ওর পছন্দ দেশি মুরগি আর খিচুরি। এখন আমের মওসুম , মুস্তাফিজের আম খুব পছন্দের খাবার
মুস্তাফিজের স্কুল বরেয়া মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হীরালাল সরকার জানান, এই স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন ২০১১ সালে। আমরা চাই মুস্তাফিজ আরও ভালো খেলা করে বিশ^কাপ নিয়ে আসবে বাংলাদেশে। তিনি আরো জানান, লেখাপড়ায় তার তেমন মন ছিল না। সারাক্ষণ ক্রিকেট নিয়ে সে ব্যস্ত থাকতো। তাই ক্রিকেট খেলে সে নিজেকে গড়ে তুলেছে বিশে^র সেরা বোলার। সেরা ক্রিকেটারই নয় সে বাংলাভাষা শিখিয়েছে বিদেশীদেরও ।
কাটার মাষ্টার মুস্তাফিজ জানান, নিজের দেশে নিজের মানুষের কাছে ফিরে এসে অনেক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছি। মায়ের কাছে ফিরে আমি আনন্দিত ।
কালিগঞ্জ উপজেলার তারালি ইউনিয়ন পরিষদচেয়ারম্যান এনামুল ইসলাম ছোট জানান, আমার ইউনিয়নের ছেলে মুস্তাফিজ, আমাদের জাতির গর্ব। তার মতো মুস্তাফিজ ঘরে ঘরে আরও গড়ে উঠুক। তিনি বিশে^ বাংলাভাষার মর্যাদাও বাড়িয়ে দিয়েছেন।
মুস্তাফিজের বাবা আলহাজ্ব আবুল কাসেম গাজী জানান, মুস্তাফিজ এখন আর আমার একার সন্তান নয়। মুস্তাফিজ এখন বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের সন্তান। প্রধানমন্ত্রী তাকে যে জাতীয় বীর উপাধি দিয়েছেন এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং তিনি তার সন্তানের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান। তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ ৬০ দিন ভারতে আইপিএল খেলে শুধু মুস্তাফিজের দল হায়দারবাদ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় আমি যেমন গর্বিত, তেমনি বাংলাদেশও আজ গর্বিত। আগামীতে মুস্তাফিজ যেন আরো ভাল খেলা করে বাংলাদেশের মুখ উজ্বল করতে পারে সেজন্য তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চান।
মুস্তাফিজের সেঝ ভাই মোখলেছুর রহমান পল্টু জানান, মুস্তাফিজ দীর্ঘদিন আমাদের ছেড়ে বাইরে খেলতে গিয়েছিল । এতে পরিবারের মা-বাবা-ভাই-বোনের যে অভাবটা ছিল সেটা এখন কাটিয়ে উঠবে । সবাই তার জন্য দোয়া করবেন সে যেন আগামীতে আরো ভাল খেলতে পারে।
নিউজবাংলা/একে
Comments
comments