নিউজবাংলা-১৪ নভেম্বর,শনিবার
ঢাকা: বিএনপির ঢাকা মহানগর কমিটিকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর কথা ছিল। আর তারই অংশ হিসাবে ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে বাদ দেয়া হয়েছিল। ঢাকা সিটির দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল যাদের ওপর তারা দীর্ঘ দিন ধরেই রাজনৈতিক ময়দান থেকে উধাও।বিএনপির ঢাকা মহানগরের কর্মীরা এখন অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছেন। গত এক বছরেরও বেশি আগে ঘোষিত হাইপ্রোফাইল কমিটির নেতাদের দেখা পাচ্ছেন না তারা।
কমিটির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের দেখা নেই জানুয়ারির আন্দোলন শুরুর পর থেকে। দেশজুড়ে টানা হরতাল-অবরোধের আন্দোলন বন্ধের পর সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলকে কিছুদিন দেখা গেলেও জাপানি নাগরিক হত্যায় নিজের নাম আসায় তিনিও আত্মগোপনে। অর্ধশতাধিক মামলার হুলিয়াও ঝুলছে তার ওপর।
শুধু তারাই নন, শীর্ষ দুই নেতার দেখাদেখি ঢাকা মহানগরির বেশির ভাগ নেতাই এখন আত্মগোপনে। কয়েকজন কারাগারে। দুইজন বেঁচে নেই। এমন অবস্থায় বিএনপির অন্যতম এই শাখা অনেকটাই এখন অভিভাবকহীন।
চকবাজার থানা বিএনপির একজন কর্মী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “এখনও বাসা-বাড়িতে পুলিশ হানা দেয়। কিন্তু এসব বলার মতো কাউকে পাই না। এভাবে কতদিন চলবে তাও জানি না। খুব কষ্টে আছি ভাই।”
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৮ জুলাই দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেলের নেতৃত্বে ৫২ সদস্যের ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
কথা ছিল দুই মাসের মধ্যে কাউন্সিল করে ৪৯টি থানা, ১০০টি ওয়ার্ড ও ১৮টি ইউনিয়নের সাংগঠনিক কমিটি করার। কিন্তু বারবার বেশিরভাগ কমিটি চূড়ান্ত করা হয়েছে দাবি করা হলেও নানা অজুহাত দেখিয়ে তা আর ঘোষণা হয়নি।
দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন, ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের কমিটি প্রায় চূড়ান্ত ছিল। কিন্তু পাঁচ জানুয়ারির দিনকে কেন্দ্র করে টানা কর্মসূচির কারণে এই প্রক্রিয়া থমকে দাঁড়ায়। এরপরে আর অগ্রগতির খবর পাওয়া যায়নি।
নেতাকর্মীরা বলছেন, অনেক প্রত্যাশা নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে কমিটি দিলেও তারা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ খোকা-সালামের মতো আব্বাস-সোহেলও ঢাকায় কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেননি।
কেমন আছেন মহানগরের নেতারা
কমিটির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি আছে অনেক দিন ধরে। কিন্তু এখনও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ বলছে, তিনি পালিয়ে আছেন। পেলেই গ্রেপ্তার করা হবে। এরই মধ্যে ঢাকা ব্যাংকের পরিচালকের পদ চলে গেছে মির্জা আব্বাসের। পলাতক থাকলেও বিষয়টি নিয়ে তিনি চিন্তিত বলে জানা গেছে। সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলও আত্মগোপনে।
প্রকাশ্যে আছেন কমিটির উপদেষ্টা আ স ম হান্নান শাহ। একাধিক মামলার আসামি ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার দীর্ঘদিন ধরে দেখা নেই। উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সাদেক হোসেন খোকা চিকিৎসার জন্য নিউইয়র্কে। ইতিমধ্যে দুদকের মামলায় তাকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। চিকিৎসা ও কারাদণ্ড মিলিয়ে শিগগির তার দেশে ফেরার সম্ভাবনা কম বলে জানা গেছে। আর এক উপদেষ্টা আবদুস সালামও আছেন নিউইয়র্কে।
যুগ্ম আহ্বায়কের মধ্যে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আওয়াল মিন্টু ও এম এ কাইয়ুম বর্তমানে দেশের বাইরে। এরই মধ্যে ইতালি নাগরিক হত্যায় কাইয়ুমের নাম আসায় তিনি একদিকে বিব্রত, আবার চিন্তিতও বটে। তিনি আদৌ দেশে ফিরবেন কিনা সেটাই এখন প্রশ্ন। আরেক সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু কয়েক মাস আগে কারান্তরীণ অবস্থায় মারা গেছেন। মামলার আসামি হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন সালাউদ্দিন আহমেদ (দৌড় সালাউদ্দিন)। মাঝে মধ্যে দেখা মেলে কাজী আবুল বাশার ও আবু সাঈদ খোকনকে।
কমিটির ৪৫ সদস্যের মধ্যে শতাধিক মামলার আসামি হলেও জামিনে থাকায় দলের কর্মসূচিতে দেখা মিলছে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের। কারাগারে আছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ।সম্প্রতি মুক্তি পেয়ে আমান উল্লাহ আমান রেস্টে রয়েছেন। লন্ডনে আছেন ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন অসীম। দেখা নেই আবুল খায়ের ভুঁইয়ার। অসুস্থতায় ভুগছেন আবদুল মজিদ ও শামসুল হুদা। বোরহানুজ্জামান ওমর মারা গেছেন। কমিটির অন্য সদস্যদের বেশিরভাগই বিভিন্ন মামলার আসামি হয়ে অনেকটা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
নেতারা যা বললেন
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর কমিটির একজন সদস্য বলেন, “অনেক প্রত্যাশা থাকলেও কিছু হয়নি এটা ঠিক। কারণ নানামুখি চাপে থাকলেও যেসব ওয়ার্ড এবং থানা কমিটি চূড়ান্ত ছিল তা ঘোষণা করা যেত। দেড় বছরে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না থাকার বিষয়টি বিব্রতকর।”
আর উপদেষ্টা আ স ম হান্নান শাহ বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, “যখনই বিএনপি কোনো উদ্যোগ নেয় তখনই সবার মামলা চাঙ্গা করা হয়। গ্রেপ্তার শুরু হয়। এখন কোনো কর্মসূচি নেই তবুও গ্রেপ্তার বন্ধ নেই। তারপরও দল পুনর্গঠন কর্মসূচি চলছে। আশা করি ঢাকা মহানগরের বিষয়েও চেয়ারপারসন মঙ্গলজনক কোনো উদ্যোগ নেবেন।”
নিউজবাংলা/একে
Comments
comments