নতুন ধানের পিঠা-পুলিতে আপ্যায়ন,সুখের ভেলায় ‘জামাই মেলায়’

নিউজবাংলা-১৪ নভেম্বর,শনিবার

 লালমনিরহাট: বাংলার কৃষিজীবী সমাজে শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে যে সকল আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হয় তার মধ্যে নবান্ন অন্যতম। নবান্ন উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি। আর তাই ১লা অগ্রহায়ণেই লালমনিরহাটে শুরু হচ্ছে নবান্ন উৎসবের নানা আয়োজন। নবান্ন আসলেই এ জেলার বিভিন্ন গ্রামে দুই দিনব্যাপী চলে জামাই আদরের ধুম ‘জামাই মেলা’।
নতুন ধানের পিঠা-পুলিতে আপ্যায়ন করা হয় জামাইকে। আগামীকাল রোববার সকালে জেলার ৫৫টি গ্রামে জামাইয়ের মুখে পিঠা তুলে দিয়ে শুরু হবে এ বছরের নবান্ন উৎসব। এ উৎসব চলবে অগ্রহায়ণ মাসের দ্বিতীয় দিন দুপুর পর্যন্ত। এই দুই দিনে জেলার ৪৫টি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামেই চলে খেজুর রসের পিঠা-পায়েস তৈরির ধুম। নিমন্ত্রণ করা হয় মেয়ে-জামাইসহ আত্মীয় স্বজনকে।
নতুন ধান কাটা আর সেই ধানের প্রথম অন্ন জামাইকে খাওয়ানোর মধ্যে দিয়ে চলে জামাই মেলা। নবান্নের প্রথম দিনে নতুন ধানের তৈরি পিঠা বাড়ির আঙ্গিনায় আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের মাঝে বিতরণ করেন প্রবীণরা। প্রায় ৪৪ বছর পূর্ব থেকে নবান্ন আসলেই এ উৎসব পালন করেন তারা।
এদিকে প্রকৃতিতে শীতের আগমনী বার্তার সমাগত। গত তিনদিন থেকে শীতও জেকে বসতে শুরু করেছে। আর এই শীতের শুরুতে বাঙালির নতুন ধানের পাশাপাশি অন্যতম আকর্ষণ খেজুর গুড়ের তৈরি পিঠা-পায়েস। দিন বদলের সঙ্গে লালমনিরহাটের জীবনযাত্রায় অনেক কিছু বদলে গেলেও বদলায়নি খেজুর রস সংগ্রহ, গুড়-পাটালি তৈরির পদ্ধতি আর নবান্নের প্রথম দু’দিনে নতুন ধান দিয়ে পিঠা তৈরির মহোৎসব।
তাই শীতের আগমনী বার্তা জানান দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এখানকার গাছিরা প্রস্তুতি নেয় খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের। এজন্য প্রথমেই খেজুর গাছ কেটে পরিষ্কার করে তারা। এরপর শুরু হয় রস সংগ্রহ। নবান্ন উৎসবে খেজুরের গুড় ও রস নতুন মাত্রা আনে গৃহস্থদের রসুইঘরে।
কমলাবাড়ি গ্রামের গাছি মনিরুজ্জামান ও পলাশ জানান, নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে কার্তিক মাসের শুরু থেকেই খেজুর গাছের পরিচর্যা চলে। নবান্নের প্রথম দুদিনে প্রায় ৪ মন খেজুরের রস বিক্রি হবে। ইতোমধ্যেই ৪ মন খেজুরের রস বিক্রির আগাম টাকা পেয়েছেন। এতে তার পরিশ্রম যেন অনেকটাই সার্থক হয়েছে। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার নবান্নের জামাই মেলা বেশ জমে উঠবে। এ যেন বাঙালির একটি ঐতিহাসিক উৎসব।
লালমনিরহাট কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক মো.সাফায়েত হোসেন জানান, রেওয়াজ অনুয়ায়ী প্রতি বছর অগ্রহায়ণের প্রথম দুই দিনকে নবান্ন উৎসব ধরে খেজুর রস দিয়ে তৈরি নানা বৈচিত্রের পিঠা উৎসবে মেতে উঠেন লালমনিরহাটবাসী। তবে এ উৎসবের অন্যতম উপাদান নতুন ধান আর খেজুরের গুড়। সেই নতুন ধান আর খেজুরের গুড় দিয়ে চলে জামাই আপ্যায়ন। এ যেন সত্যি হৃদয়ের বন্ধনকে আরও গাঢ় করার উৎসব।

নিউজবাংলা/একে

Comments

comments