নিউজবাংলা-১৩ নভেম্বর,শুক্রবার
কাজী আনিছুর রহমান, রাণীনগর (নওগাঁ) :
নওগাঁর রাণীনগরে বন্যায় তলিয়ে যাওয়া খাল-বিল জলাশয়ের পানি দ্রুত বেগে নেমে যাওয়ায় প্রচুর পরিমান শামুক পাওয়া যাচ্ছে।
আর এই শামুক সংগ্রহের নামে চলছে নিধনের মহাৎসব। হাঁস-মুরগি পশু-পাখি ও এক শেণীর মানুষের প্রিয় খাবার এই জলজ প্রাণী শামুক। উপজেলার বিভিন্ন বিল জলাশয় খাল ও আবাদী জমি থেকে প্রতিদিন স্থানীয় কিছু লোকজন সহ আদিবাসী সম্প্রদায়ের শত শত লোক দল বেঁধে আগ্রসী ভূমিকায় মনকে মন শামুক নিধন করে বস্তায় তুলে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রয় করে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠছে। এলাকার জীববৈচিত্র প্রকৃতি এই জলজ জীবকে রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শামুক নিধন কারীদের বিরুদ্ধে আইনগত কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করায় দিনদিন তারা শামুক নিধনে মহাৎসবে মেতে উঠছে।
সরেজমিন জানা গেছে, উপজেলার রক্তদহ বিল, বিল চোর, বিল মুনসুর, গোনার মাঠ, রতনডারীর খাল, প্রেম তলীর বিল, চকেরপুল, হাতির ব্রীজ, সিংড়াডাঙ্গার মাঠের বিভিন্ন স্থান থেকে এলাকার স্থানীয় হাঁস-মুরগী পালন করে এমন কিছু মানুষ এবং দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ি, জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি সহ ওই দুই জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আদিবাসী সম্প্রদায়ের স্বল্প আয়ের লোকজনেরা পার্বতীপুর থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহী গামী উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেনে প্রতিদিন প্রায় শতাধিক নারী পুরুষ যুবক-যুবতী সকাল ৭টার দিকে রাণীনগর রেলওয়ে স্টেশনে নামে। পরে তারা কয়েক দলে বিভক্ত হয়ে ভটভটি ও ভ্যান চুক্তিভিক্তিক সারা দিনের জন্য রির্জাভ করে নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন খাল বিলে গিয়ে শামুক সংগ্রহের নামে নিধনের মহাৎসবে মেতে উঠে। দিনভর নারী পুরুষ সবাই কে কত বস্তা বেশী সংগ্রহ করতে পারে এরকম নিরব প্রতিযোগীতা চলে একে অপরের মধ্যে। সারাদিনে প্রতিজন প্রায় ১শ’ কেজি শামুক সংগ্রহ করে। যার আনুমানিক মূল্য (ওই এলাকায়) ১৫শ’ টাকা। প্রতিদিন তারা রাণীনগর উপজেলার খাল বিল ও জলাশয় থেকে হাজার হাজার টাকার জলজ প্রাণী শামুক হাতিয়ে নিয়ে এলাকার জীববৈচিত্রের পরিবেশ নষ্ট করছে অথচ স্থানীয় প্রশাসন শামুক আগ্রসীদের বিরুদ্ধে আইনগত কোন পদক্ষেপ গ্রহন না করায় দিনদিন আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজনদের আনাগুনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ি থানার গোপালপুর গ্রামের সফল সরনের ছেলে কমল সরন (৩৬) জানান, আমরা প্রতিদিন ট্রেন যোগে রাণীনগরে শামুক তুলতে আসি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যস্ত এই এলাকার বিভিন্ন বিলে শামুক তুলে সন্ধ্যার পর আবার ট্রেন যোগে আমাদের বাড়িতে চলে যাই। এই শামুক গুলো আমরা নিজে খাই এবং প্রতি কেজি ১৫টাকা দরে আমাদের এলাকায় পাইকারী বিক্রয় করি।
জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার মহিপুর গ্রামের বিশ্বনাথ সরেন এর স্ত্রী নাছন টুডু (৪৩) জানান, আমার ছেলে-মেয়ে সহ আমি উত্তরা ট্রেনে রাণীনগর স্টেশনে সকালে নেমে আরও কয়েক জন দলবদ্ধ হয়ে বিলে শামুক তুলতে যাই। সূর্য ডোবার আগে প্রতিজনার দুই বস্তা শামুক হলেই ভ্যানে তুলে স্টেশনে নিয়ে এসে রকেট মেইল যোগে বাড়িতে চলে যাই। আমরা তিন জন মিলে প্রতিদিন প্রায় ৪হাজার টাকার শামুক বিক্রয় করি।
উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সেলিম উদ্দিন বলেন, শামুক একটি জলজ প্রাণী। পরিবেশের ভারসূম্য রক্ষায় যে কোন ধরণের জলজ ও বনজ সম্পদ গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বড় ধরণের বন্যা হলে এর জম্মের সংখ্যা বেড়ে গেলেও নির্দিষ্ট সময়ের পরে শামুক মারা যায়। তবে এইধরণের সম্পদকে রক্ষার জন্য সকল শ্রেণীর মানুষের সচেতন হতে হবে
নিউজবাংলা/একে
Comments
comments