নিউজবাংলা: ১৩ নভেম্বর, শুক্রবার:
মাসুদ করিম : নোবেল বিজয়ী অং সান সুচির দলের বিপুল বিজয়ের পর রোহিঙ্গা ইস্যুতে অগ্রগতির আশা করছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারে সেনা সমর্থিত সরকারের আমলে এ ইস্যুতে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
বরং ওই সময়ে জেনারেলদের সরকার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশী বলে প্রপাগান্ডা চালিয়েছে। তবে সুচির দল রাতারাতি রোহিঙ্গা ইস্যুতে অগ্রগতি করবে এমন আশা কেউ করছেন না। তবে দীর্ঘ মেয়াদে ধীরে হলেও এ ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে পারে বলে কিছুটা আশার আলো দেখছেন অনেকেই। নির্বাচনের পূর্বে সুচি নিজেও রোহিঙ্গাদের পক্ষে কোনো কথা বলেননি। ভোটের রাজনীতিতে প্রভাব পড়ার আশংকায় তার এই নিশ্চুপ থাকা বলে অনেকেই মনে করেন। মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের কোনো ভোটাধিকার দেয়নি সেনা সমর্থিত সরকার। বৌদ্ধদের বিপুল সংখ্যাধিক্যের কারণে সুচি নিজে ভোটের রাজনীতিকে অধিক গুরুত্ব দেন। নোবেল বিজয়ী এই নেত্রী এখনই রোহিঙ্গাদের পক্ষে কিছু করবেন বলে মনে হয় না। নির্বাচনে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে কট্টরপন্থী বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী দল বিজয়ী হয়েছে। বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী এই দলটি রোহিঙ্গাদের চরম বিদ্বেষী। এ কারণে রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাতারাতি অগ্রগতির আশা করা যায় না। মিয়ানমারে গণতন্ত্রপন্থী সুচির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বিজয়ী হওয়ায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেশটির অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্বের চাপে সংস্কারে যেতে হতে পারে। তার মধ্যে সুশাসন, আইনের শাসন ও মানবাধিকারের ইস্যুতে কাজ করতে হতে পারে। ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়ার পক্ষে চাপ সৃষ্টি করেছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালানো বন্ধ করতে হবে। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেও রোহিঙ্গাদের অনেক অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। এসব কারণে মিয়ানমারে ক্ষমতার পালাবদলের প্রতি তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে সুচিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী হলে সে দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের কাজ করতে সুবিধা হবে। সেই ক্ষেত্রে দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর আলোচনা এগিয়ে নেয়ার আশা করা হচ্ছে। মিয়ানমারে সেনা সমর্থিত জেনারেল থেইন সেইনের সরকার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার প্রশ্নে কোনো ছাড় দেয়নি। তারা এই সংখ্যালঘু মুসলমানদের বাংলাদেশী বলে চালিয়ে দেয়ার সব রকমের চেষ্টা চালিয়েছে। সেই দিক থেকে সুচির বিজয়ে বাংলাদেশে আশার কথা বলা হচ্ছে। জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম শফিউল্লাহ বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, সুচির দলের নির্বাচনী ইশতেহারে রোহিঙ্গাদের কথা কিছুই ছিল না। কোনো মুসলমানকে তার দল থেকে মনোনয়নও দেনা হয়নি। মিয়ানমারে বর্তমানে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছেন। তাদের অনেকে সুচির দলের সদস্য এবং এ দলের পক্ষে কাজ করেছেন। তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী বুদ্ধিস্ট। তারা মুসলমানবিদ্বেষী। এ কারণে মুসলমান মনোনয়ন দিলে সুচির দল ভোট পাবে না। সুচি নিজেও আজ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের পক্ষে কোনো কথা বলেননি। সরকার গঠনের পর ধীরে ধীরে কোনো পদক্ষেপ নেন কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়। সাবেক এই অভিজ্ঞ কূটনীতিক আরও বলেন, মিয়ানমারে ১৯৮২ সালে তদানীন্তন সরকার একটি আইন করে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়। তবে সুচি যেহেতু গণতন্ত্রমনা এবং নিজে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন, তার দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে, সেই দিক থেকে বলা যায়, রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে ধীরে হলেও কিছুটা চেষ্টা তিনি হয়তো করবেন। এ ব্যাপারে বহির্বিশ্ব থেকে তার ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। কেননা কোনো গণতান্ত্রিক সমাজে বৈষম্য থাকতে পারে না। ফলে সুচির বিজয় একটি ইতিবাচক দিক। এর মাধ্যমে রোহিঙ্গারা নাভিশ্বাস অবস্থা থেকে অদূর ভবিষ্যতে কিছুটা হলেও মুক্তি পাবেন- এমন একটা ক্ষীণ আশা রয়েছে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ-এর (বিস) চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদ বৃহস্পতিবার বলেন, আমি মনে করি, যেভাবে সবাই আশা করছে, নতুন সূচনা হবে, গণতন্ত্রের দিকে এগোবে, সেখানে সবাইকে নিয়ে অগ্রসর হবেন সুচি। যদিও সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক সময় তিনি সব কথা খোলাসা করে বলেননি। তবে আমি মনে করি, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে অগ্রসর হতে হলে সংখ্যালঘুদেরও সঙ্গে নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের পথে একটা উপায় বের করা হবে। সাবেক এই অভিজ্ঞ কূটনীতিক এটাও বলেন যে, আমাদেরকেও চেষ্টা চালাতে হবে। মিয়ানমারের নতুন গণতান্ত্রিক শক্তির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় সুযোগমতো রোহিঙ্গাদের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে একটা উপায় বেরোতে পারে। সাবেক রাষ্ট্রদূত আশরাফ-উদ দৌলা এ ব্যাপারে বলেন, যদিও সুচি রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি, কোনো মুসলমানকে তার দল থেকে মনোনয়ন দেননি, সেটা ছিল তার নির্বাচনী কৌশল। তিনি বৌদ্ধপন্থীদের চটাতে চাননি। কিন্তু তার ব্যক্তিগত যে চিন্তা ও দর্শন সেটা হল গণতন্ত্রকে ঘিরে। তিনি গণতন্ত্রমনা বিধায় সবাইেক নিয়ে একটি সংহতি ও সুসংহত পথেই অগ্রসর হবেন বলে আমার মনে হয়। এর ফলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে অগ্রগতির আশা আছে। তবে রাতারাতি যে বিরাট পরিবর্তন হবে সেটা মনে করা ঠিক হবে না। তবে রোহিঙ্গা ইস্যুটা সহনীয় পর্যায়ে যাবে বলে মনে করি।
সুত্র-এমটি নিউজ২৪
নিউজবাংলা/একে
Comments
comments