ঈশ্বরদীতে ভেড়ার খামার করে সফল কোয়েল বিশ্বাস

নিউজবাংলা: ১৭ অক্টোবর, শনিবার:

ঈশ্বরদী (পাবনা ) প্রতিনিধি:

ভেড়া পালন করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ঈশ্বরদীর সফল ভেড়া চাষি মোঃ আক্তারুজ্জামান কোয়েল বিশ্বাস। তিনি ঈশ্বরদীর ভেড়া চাষিদের আইডল হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। শুধুমাত্র ভেড়ার খামার করেই বছরে লাখ টাকা উপার্জন করে থাকেন তিনি। একজন ভাল মানুষ হিসেবেও তার সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। এই ভেড়ার খামারের উপার্জিত অর্থ থেকে তিনি গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়া-লেখার জন্য, কন্যা দায়গ্রহস্থ পিতাকে এবং অসুস্থ রোগীদের আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করে থাকেন।

ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষিকুন্ডা ইউনিয়নের বিলকেদার গ্রামের তোরাব আলী বিশ্বাসের তিন ছেলে তিন মেয়ের মধ্যে মোঃ আক্তারুজ্জামান কোয়েল বিশ্বাস চতুর্থ। পড়াশুনা শেষ করে ঔষুধের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। শখের বসে তিনি ২০১০ সালে নিজ বাড়িতে একটি ভেড়া পালন শুরু করেন। সেই ভেড়া থেকে বর্তমানে তার বিশ্বাস ভেড়া খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে ১২৬টি ভেড়া রয়েছে। ভেড়ার খামার করে কোয়েল সফল এবং ঈশ্বরদী আইডল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। এর পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। এগিয়ে চলেছেন শুধু সামনের দিকে। কোয়েল ঈশ্বরদীর একজন আদর্শ ও প্রতিষ্ঠিত মডেল ভেড়া চাষি। কোয়েলের দেখা দেখি তার এলাকা ও আশপাশের বেকার যুবকেরা পরামর্শ নিয়ে ভেড়া চাষ শুরু করেছে। কোয়েল তার খামারের নাম দিয়েছেন বিশ্বাস ভেড়া খামার।

ভেড়া চাষি কোয়েল বিশ্বাস জানান, শখের বসে একটি ভেড়া পালন শুরু করি। ভেড়ার সংখ্যা ১৭ হলে একজন রাখাল নিয়োগ দেয়া হয়। বর্তমানে ছোট-বড় মিলিয়ে আমার বিশ্বাস ভেড়া খামারে ১২৬টি ভেড়া রয়েছে। দুইজন রাখালকে মাসিক ৮ হাজার টাকা বেতন দিয়ে পদ্মার চরে ভেড়া চরানো হয়। ইতো মধ্যে ভেড়ার খামার থেকে তিনি পাঁচ বছরে প্রায় চার লাখ টাকার ভেড়া বিক্রিও করেছেন। ভেড়া চাষ করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ঈশ্বরদীর সফল ভেড়া চাষি কোয়েল বিশ্বাস। ইতোমধ্যে তিনি সরকারি ভাবে দুই বার ভেড়া চাষের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, বাবা লক্ষিকুন্ডা ইউনিয়নের দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান ছিলেন। তার থেকেই মানুষকে সহযোগিতা করতে শিখেছি।

সাফল্যের বিষয়ে ভেড়া চাষি কোয়েল বিশ্বাস বলেন, দেশে বেকারত্ব দুরীকরণ এবং প্রোটিনের চাহিদা কিছুটা হলেও পুরণ করার জন্য এ পেশায় এসেছি। দেশের এবং জনসাধারনের কথা চিন্তা করে এদেশের মানুষের পুষ্টির যোগান দিতেই বেকার যুবকদের ভেড়া চাষে উৎসাহিত করে তুলেছি। একটু হলেও তো দেশের উপকারে আসতে পেরেছি। আমি বিশ্বাস করি এদেশের শিক্ষিত বেকার যুবকেরা সততার সাথে শ্রম দিয়ে ভেড়া চাষ করলে চাকরি নামের সোনার হরিণের পিছু না নিয়ে একটু প্রশিক্ষণ নিয়ে ভেড়া চাষে মনোনিবেশ করলে যেমনি এদেশ থেকে বেকারত্ব কমবে, সেই সাথে দেশের মাংসের চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণ হবে বলে আমি আশাকরি।

বিশ্বাস ভেড়া খামারের নিয়মিত ডাক্তার মোঃ ইন্তাজ আলী বলেন, একটি ভেড়া দিয়ে কোয়েল বিশ্বাসের খামারের বর্তমান বেড়ার সংখ্যা ১২৬টি আগামী মাসে আরও ২০টি ভেড়া বাচ্চা দিবে। অন্য প্রাণীদের চাইতে ভেড়ার রোগবালা কম। ভেড়া আগাছা-লতাপাতা খেয়ে থাকে তাই খরচ কম লাগে। সময় মতো কৃমি নাষক করা থাকলে রোগবালা কম হয়। তবে ফুড পয়োজন হলে একটু সমস্যা দেখা যায়।

ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মোঃ মহির উদ্দীন বলেন, লক্ষিকুন্ডা ইউনিয়নের বিলকেদার গ্রামের তোরাব আলী বিশ্বাসের ছেলে মোঃ আক্তারুজ্জামান কোয়েল বিশ্বাস ঔষধ ব্যবসার পাশাপাশি ভেড়ার খামার করেছেন।

ভেড়া একটি বিলুপ্ত প্রায় প্রাণী। ভেড়ার মাংসে আশ কম মোলায়েম এবং স্বাদ অনেক বেশি। ২০১০ সালে নিজ বাড়িতে একটি ভেড়া পালন থেকে বর্তমানে তার বিশ্বাস ভেড়া খামারে ১২৬টি ভেড়া রয়েছে। ভেড়ার খামার করে কোয়েল সফল এবং ঈশ্বরদীর আইডল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। ভেড়া চাষে আর্থিক খরচ কম লাগে। অন্য প্রাণীর চাইতে ভেড়ার রোগ বালাইও তুলনামূলক অনেক কম হয়। বিশ্বাস ভেড়া খামারে ভেড়া চাষের কারণে কিছুটা হলেও দেশের মাংসের ঘাটতি পূরণে সচেষ্ট রয়েছে। বিশ্বাস ভেড়া খামারটি প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের পরামর্শ মোতাবেক পরিচালনা করে থাকেন। এভাবে নিয়ম মেনে চলতে থাকলে আরও বেশি ভালো করবেন বলে তিনি এ কথা জানান।

 

নিউজবাংলা/একে

 

Previous: বিশ্বনাথে পতিত জমির সর্বোত্তম ব্যবহার বিষয়ক উদ্ধুদ্ধ করণ সভা
Next: সোমবার থেকে ঢাবিতে পূজার ছুটি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*