আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার অভিজ্ঞতা বিদেশিরাও কাজে লাগাতে চায় বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা এমন মানে পৌঁছেছে যে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এর প্রশংসা হচ্ছে। যার স্বীকৃতিও দেশে-বিদেশে মিলছে। সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক আদালতে দুই বাংলাদেশি বিচারকের স্থায়ী নিয়োগ পাওয়াটা-এদেশের বিচার বিভাগের মানের বড় স্বীকৃতি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (জেটি) মিলনায়তনে জেলা ও দায়রা জজ এবং সমপর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য এক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
পরে হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘বিচার পাওয়ার সুযোগ : মহল্লা কেন্দ্রিক সালিশ-মধ্যস্থতার ভূমিকা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী বলেন, শতকরা ৯০ ভাগ মামলা আদালতের বাইরে বিকল্প পন্থায় নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এমন অনেক মামলা আছে, যার ৯০ শতাংশ আদালত পর্যন্ত আসা উচিত নয়। আদালতের বাইরে বিকল্প পন্থায়ও এসব মামলার নিষ্পত্তি হতে পারে।
জেটির মহাপরিচালক বিচারপতি মূসা খালেদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিচারকদের উদ্দেশ্যে আইনমন্ত্রী বলেন, বিচারকদের ওপর বিপুল সংখ্যক মামলার চাপ থাকার বিষয়ে সরকার অবগত। এ জন্য আমরা কিছু পুরনো আইন সংশোধনের পাশাপাশি বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছি। মানসম্মত বিচারের জন্য এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক।
এই অনুষ্ঠানের পর আইনমন্ত্রী কমিউনিটি লিগ্যাল সার্ভিস (সিএলএস)-এর দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আইনমন্ত্রী বলেন, সরকার সুবিধা বঞ্চিতদের আইনী সহায়তা প্রদানে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এ জন্য স্থানীয় পর্যায়ে মহল্লা কেন্দ্রিক সালিশ-মধ্যস্থতাসহ বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দেশের আদালতে বর্তমানে ২৮ লাখেরও বেশি মামলাজট রয়েছে। সমাজের সকল স্তরের মানুষের সহযোগিতা ছাড়া সরকারের একার পক্ষে সকলের জন্য আইনী সহায়তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
সিএলএস টিম লিডার জেরোমি সাইরি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মোস্তাফিজুর রহমান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য ফাওজিয়া করিম ফিরোজ, লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্টের ( ব্লাস্ট) পরিচালক অ্যাডভোকেট সারা হোসেন, ন্যাশনাল লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস অর্গানাইজেশনের (এনএলএএসও) সহকারী পরিচালক মাসুদা ইয়াসমিন, ইউএনডিপির অর্থায়নপুষ্ট একটিভেটিং ভিলেজ কোর্টস ইন বাংলাদেশ (এভিসিবি) প্রকল্পের ব্যবস্থাপক সরদার এম আসাদুজ্জামান, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, মাদারীপুর লিগ্যাল এইড এসোসিয়েশনের প্রধান সমন্বয়ক খান মো. শহীদ, ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী প্রমুখ। সম্মেলেন দেশের ১৭টি জেলা থেকে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।
সম্মেলনে জার্মান উন্নয়ন সংস্থা, জিআইজেড পরিচালিত ২০১২ জাস্টিস অডিট রিপোর্টের বরাত দিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশের মোট মামলার মাত্র ২০ শতাংশ আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়। যেখানে আদালতের বাইরে বিকল্প পন্থায় মামলা নিস্পত্তির হার ৮০ শতাংশ। আর দেশের অধিকাংশ মানুষ বিকল্প পন্থায় মামলা নিষ্পত্তিতে বেশি আগ্রহী।