নিউজবাংলা: ২৩ জুন,বৃহস্পতিবার:
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:
শত বছরের ঐতিহ্য টাঙ্গাইল শাড়ি। সব বয়সের নারীর প্রথম পছন্দ। এবার সেই টাঙ্গাইল শাড়ির প্রশংসা করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিপুন হাতের কারুকাজ, বাহারি রঙ আর টাঙ্গাইল শাড়ির গুণগত মান দেখে তিনি মুগ্ধ হলেন।
জেলার দেলদুয়ার উপজেলার শাড়ি ব্যবসায়ী যজ্ঞেশ্বর এ্যান্ড কোং এর তৈরি তাতের শাড়ি পড়ে মন্ত্রী বাজেট অধিবেশনে অংশ নেন। প্রধান মন্ত্রী টাঙ্গাইল শাড়ির কদর দেখিয়ে সেই শাড়ির কারিগর হুমায়ন মিয়ার হাতে এক লক্ষ টাকা পুরস্কার তুলে দেন। ২২ জুন বুধবার গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়ে ওই কারিগরকে পুরস্কৃত করেন তিনি। এসময় টাঙ্গাইল শাড়ির আরো সমৃদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী।
গত এক মাস আগে টাঙ্গাইল-৫ সদর আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ ছানোয়ার হোসেন এমপি টাঙ্গাইল তাঁত পল্লীর তৈরি একটি শাড়ি প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেন। প্রধান মন্ত্রী শাড়ির গুনগত মান দেখে মুগ্ধ হন। পরে ওই শাড়ির প্রস্তুতকারক হুমায়ন মিয়াকে পুরস্কৃত করেন। প্রধানমন্ত্রীর পরনের সেই শাড়িটির ডিজাইন করেন যজ্ঞশ্বের এ্যান্ড কোং এর স্বত্যাধিকারী রঘুনাথ বসাকের ছেলে খোকন বসাক।
শাড়িটির কারিগর হুমায়ন মিয়া জানান, আমার মতো একজন সাধারণ কারিগরকে পুরস্কৃত করা মানে টাঙ্গাইলের সকল তাঁতীদের পুরস্কৃত করা। টাঙ্গাইল শাড়িকে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে স্বীকৃতি পাওয়া। প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার পেয়ে তিনি গর্বিত। সমস্ত তাঁত শিল্পীরা প্রধান মন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ।
যজ্ঞশ্বের কোং এর স্বত্যাধিকারী ও তাত শিল্পী সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক জানান, টাঙ্গাইল সদর এমপি আলহাজ ছানোয়ার হোসেন তার কাছ থেকে একটি শাড়ি কিনে প্রধান মন্ত্রীকে উপহার দেন। পরে প্রধান মন্ত্রী সেই শাড়ি পছন্দ করে শাড়িটির কারিগরকে ২২ জুন বুধবার গণভবনে ডেকে এক লক্ষ টাকা পুরস্কার দেন। সাধারণ একজন কারীগরকে প্রধান মন্ত্রীর এরকম উৎসাহ মুলক পুরস্কার প্রদানে তাঁত শিল্পীরা কাজের প্রতি উৎসাহ ও প্রেরণা পেয়েছে।
এদিকে সাধারণ তাঁতীদের হস্তশিল্পের প্রতি প্রধান মন্ত্রীর উৎসাহ প্রদানে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে তাঁত পল্লীর তাঁতী ,শাড়ি ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা।
বাঙালি নারিদের অন্যতম পরিধেয় শাড়ি । শাড়িতেই যেন একজন বাঙালি নারীকে ফুটিয়ে তুলে তার সৌন্দর্য্যরে প্রকৃত রুপে । শাড়িতে যেন ফিরে পায় তার অস্তিত্ব । আধুনিকতার ছোঁয়াতেও শাড়ির প্রতি বাঙালি নারীদের রয়েছে তীব্র আকর্ষণ । সেদিক থেকে টাঙ্গাইলের শাড়ির প্রতি নারীদের দুর্বলতাটাই একটু বেশি। টাঙ্গাইল শাড়ির প্রতি নারীর এ আকর্ষণ আজ নয়, সেই সুদীর্ঘকালের। টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল , চন্ডী , দেওজান ও নলশোধাসহ আশে পাশের এ তাঁত পল্লীগুলো থেকেই উৎপাদিত তঁাঁতের শাড়িই মুলত টাঙ্গাইল শাড়ি নামে পরিচিত। টাঙ্গাইলের এই তাঁতের শাড়ি দিয়েই সাজানো হচ্ছে ভারতের শো রুম গুলো। ভারতের চাহিদা মেটাতে বাঙালি নারীদের প্রথম পছন্দনীয় তাঁতের শাড়ি এখন স্থানীয় স্াধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে । অথচ এক সময় স্থানীয় ক্রেতারাই ছিল এ শাড়ির মূল খরিদদার ।
সুতাসহ উপকরণের দাম বৃদ্ধি, দক্ষ কারিগরের অভাব এবং বিদ্যুতের অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। তৈরিকৃত শাড়ির সিংহ ভাগই চলে যাচ্ছে পাশের দেশ ভারতে। তাই ভারতের চাহিদা মেটাতে টাঙ্গাইল তাঁত শাড়ির দাম হয়েছে প্রায় দ্বিগুন। প্রাতিষ্ঠানিক ডিজাইনার এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কারিগরেরর প্রচন্ড অভাব থাকা সত্তেও যুগ যগ ধরে দেশ-বিদেশের ক্রেতাদের শাড়ির চাহিদা মেটাচ্ছেন এ অঞ্চলের তাঁতীরা। টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে।
এ শিল্পকে ধরে রাখতে সুঁতার দাম বৃদ্ধি রোধ, কম সুদে ঋণসহ সরকারি সহযোগীতা কামনা করছেন তাঁত পল্লীর সাধারণ তাঁতীরা।
নিউজবাংলা/ একে
Comments
comments