নিউজবাংলা: ২৮ জুন, মঙ্গলবার:
সামিউল ইসলাম:
বর্তমানে সারা দেশে প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং বন্ধ করা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। কেউ কেউ বলছেন প্রাইভেট পড়ালে বা কোচিং করালে নাকি শিক্ষকরা ক্লাসে সঠিকভাবে পাঠদান করেন না। আবার কেউ কেউ বলছেন প্রাইভেট না পড়ালে বা কোচিং না করালে নাকি ছাত্ররা পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারবে না। কোন পক্ষ সঠিক আর কোন পক্ষ ভুল?
আমরা জানি ৩৬৫ দিনে ১ বছর। আমরা কি একবার ভেবে দেখেছি ৩৬৫ দিনের মধ্যে কত দিন ক্লাস হয়? আমি উদাহরণ স্বরুপ ২০১৬ সালে কত দিন ক্লাস পাচ্ছি তা দেখাচ্ছি। শিক্ষা মন্ত্রনালয় কর্তৃক অনুমোদিত ২০১৬ শিক্ষাবর্ষের সরকারি/ বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছুটির তালিকায় ৮৫ দিনের ছুটি উল্লেখ রয়েছে। এই ছুটির তালিকার বাইরে ৪২ টি শুক্রবার রয়েছে। অর্ধ-বার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষায় কমপক্ষে ৩২ দিন। ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই ৪ টি টিউটোরিয়াল পরীক্ষা হয়। টিউটোরিয়াল পরীক্ষায় ৪দ্ধ১৫=৬০ দিন। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান, বিদায় অনুষ্ঠান, স্টুডেন্ট ক্যাবিনেট নির্বাচন উপলক্ষে ৪ দিন। মোট ৮৫+৪২+৩২+৬০+৪=২২৩ দিন। তাহলে মোট ক্লাস ৩৬৫-২২৩=১৪২ দিন। এছাড়াও বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি উপলক্ষে ১ সপ্তাহ অর্ধেক ক্লাস হয়, ৬ টি পরীক্ষার আগের দিন ও পরের দিন পুরোপুরি ক্লাস হয় না। আর যেসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র রয়েছে সেগুলোর ছুটির হিসেব করলে তো আর ক্লাস খুঁজেই পাওয়া যাবে না। মাধ্যমিক স্তরে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে ১৪ টি পাঠ্যবই পড়তে হয়। যার ফলে ইংরেজি ও গণিতের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও সপ্তাহে ৩ দিনের বেশি ক্লাস পাওয়া যায় না। এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বছরে সর্বোচ্চ ৬০-৭০ টি ক্লাস পাওয়া যায়।এদিকে ইংরেজির বিশাল সিলেবাস রয়েছে যেমন- ইংলিশ ফর টুডের মধ্যে রিডিং, রাইটিং, স্পিকিং ও লিসেনিং স্কিল, গ্রামারের হাজারো নিয়ম-কানুন, প্যারাগ্রাফ,লেটার, এপ্লিকেশন, ই-মেইল, ডায়ালগ, কমপ্লিটিং স্টোরি, সিভি, গ্রাফ,চার্ট, কম্পোজিশন প্রভৃতি। গণিতের মধ্যেও রয়েছে অনেক নিয়ম কানুন এবং সৃজনশীল পদ্ধতি। এছাড়াও পদার্থ, রাসায়ন, জীব বিজ্ঞান ও হিসাব বিজ্ঞান এই সীমিত সময়ের মধ্যে ভালোভাবে পড়িয়ে শেষ করা সম্ভব নয়।
যারা প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং বন্ধের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তারা কি তাদের আদরের সন্তানকে প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং করা থেকে বিরত রাখবেন? তারা তো তাদের আদরের সন্তানের ভালো ফলাফলের আশায় লাখ লাখ টাকা খরচ করে প্রাইভেট টিউশন ও কোচিংয়ে পড়ান। ঢাকা শহরের নামি-দামি প্রতিষ্ঠানের সকল ছাত্র-ছাত্রী প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং নির্ভর। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, নামি-দামি প্রতিষ্ঠানে পড়েও যদি প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং নির্ভর হতে হয়, তাহলে যেসকল প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শিক্ষকরাই মানসম্মত পাঠদানে অযোগ্য তাদের ছাত্র-ছাত্রীরা কী করবে?
যে সকল শিক্ষকরা ক্লাসে ফাঁকি দিয়ে শুধু প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং করানোর ধান্ধা করে, তারা তো শিক্ষক নামের কলঙ্ক।তাদের কাছ থেকে ভালো কিছু প্রত্যাশা করা যায় না। সকল ছাত্র সমান মেধাবী না। ক্লাসে ভালোভাবে বুঝানোর পরও যদি কোনো ছাত্র মনে করে তার আরো বেশি জানা বা বুঝার দরকার রয়েছে তখন সে আলাদাভাবে পড়তেই পারে। এখানে তো দেষের কিছু দেখছি না। তাছাড়া সীমিত সময়ের (৩০-৩৫ মিনিট) সীমিত ক্লাসে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ইচ্ছা থাকলেও খুব ভালোভাবে বুঝানো সম্ভব হয় না। ভালোভাবে জানার জন্য ও ভালো ফলাফলের জন্য ক্লাসের বাইরে পড়তেই হয়। তাহলে আইন করে ঢালাওভাবে প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং বন্ধ করা কি যৌক্তিক?
আমার মতে, শিক্ষকরা যাতে ক্লাসে ফাঁকি দিতে না পারে সে জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্বারা ক্লাস মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। যদি কোনো শিক্ষক প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং করানোর জন্য ক্লাসে ভালোভাবে পাঠদান না করে, তাহলে তাদের বেতন-ভাতা বন্ধসহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কিন্তু,আইন করে ঢালাওভাবে প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং বন্ধ করা মোটেও উচিত হবে না।
বর্তমানে শিক্ষার্থীদের অনেক পাঠ্য বই পড়তে হয়। যা শিক্ষার্থীদের জন্য বোঝা হয়ে যায়। পাঠ্য বইয়ের সংখ্যা কমিয়ে বইগুলো আরো আপডেট করা জরুরি। ক্যারিয়ার শিক্ষা, কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা, শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ের জন্য আলাদা বিষয় না করে সীমিত আকারে সাধারণ বিজ্ঞান এবং বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় অথবা অন্য কোনো বিষয়ের সাথে সংযোজন করে দিলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। তখন ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পর্যাপÍ সময় দিতে পারবে।
সামিউল ইসলাম
সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি)
আলহাজ্ব আব্বাস উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, মিরপুর, ঢাকা
E-mail: [email protected]
নিউজবাংলা/একে
Comments
comments