নিউজবাংলা, ৮ অক্টোবর শনিবার:
নিউজবাংলা ডেক্স: সরকারের সমালোচনা করছেন বটে, তবে ইদানীং বিএনপি নেতাদের বক্তব্য অনেকটাই নমনীয়। সরকারকে সহযোগিতার কথা বলছেন তারা, অনুরোধ করছেন আলোচনার।
আন্দোলন বা সরকারবিরোধী কোনো কর্মসূচির কথা ঘূণাক্ষরেও তুলছেন না তারা। বরং একাধিক নেতা একাধিকবার বলেছেন, বিএনপি আন্দোলনে যেতে চায় না।
আরেকটি অভাবনীয় ঘটনা ঘটেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্র সফরে। গত কয়েক দশক ধরেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেলে বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকরা নানা কর্মসূচি পালন করে সে দেশে। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র পৌঁছার দিন আওয়ামী লীগ সমর্থকরা তাকে স্বাগত জানাতে জড়ো হন। কিন্তু বিএনপি সমর্থকরা সেদিন কোনো কর্মসূচি পালন করেননি। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির এক নেতা এ বিষয়ে বলেছেন, তারা প্রধানমন্ত্রীকে এবার ‘ওয়াকওভার’ দিয়েছেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালে আন্দোলন চলার সময় বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন দলের নেতারা। কিন্তু আওয়ামী লীগ নির্বাচন করার পর ডাকা টানা অবরোধ স্থগিত করে একবার পিছু হটে বিএনপি। তবে দলের নেতারা বলতে থাকেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একতরফা নির্বাচন করে তারা যেহেতু বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারেননি, তাই আওয়ামী লীগও বেশিদিন টিকতে পারবে না। এরপর সরকারের এক বছর পূর্তিতে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি চূড়ান্ত আন্দোলনেরও ডাক দেয় বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু এবারও কোনো ফল পায়নি বিএনপি। এরপর থেকে বলতে আন্দোলন কর্মসূচির কথা আর বলেনি বিএনপি।
এর মধ্যে গত কিছুদিন ধরে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে আরও নমনীয়তা এসেছে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘আমরা সংঘাত ও আন্দোলন চাই না।’ স্বাধীন দেশের মানুষ আর কত আন্দোলন করবে, সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
একই আলোচনায় বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী এমাজউদ্দিন আহমেদ প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি অনেক ভালো কাজ করছেন। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নিয়ে আরও একটা ভালো কাজ করেন।’
তারও আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে একটি আলোচনায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি বক্তব্য বেশ আলোচনার খোরাক জোগায় রাজনৈতিক অঙ্গনে। বর্তমান সরকারের সমলোচনা করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘এটা কোন আওয়ামী লীগ? বাংলাদেশের মানুষের সাথে যাদের সম্পর্ক ছিল, যে দলটি দীর্ঘকাল এদেশের মানুষের সঙ্গে থেকে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই সংগ্রাম করেছে, ৬৫ বছরের বেশি যে দলটির বয়স, সেই দলটি কীভাবে আজকে দেশের প্রতিটি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে?’
বিএনপি নেতাদের এই নমনীয় বক্তব্যে ইদানীং সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন প্রসঙ্গ। কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের শুরুতেই। তার আগেই নতুন কমিশন গঠিত হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলাপ আলোচনার তাগিদ দিচ্ছেন বিএনপির নেতারা।
২০১২ সালে বর্তমান কমিশন নিয়োগ দেয়ার আগে সার্চ কমিটি করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেন সে সময়ের রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। ওই আলোচনায় অংশ নেন বিএনপির নেতারাও। তবে বিএনপি তখন কারও নাম প্রস্তাব করেনি। তবে এবার বিএনপি তাদের পছন্দের লোকদের নাম দেবে বলেও জানিয়েছেন দলের নেতারা।
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ আজম খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা কোনো সংঘাত চাই না। এতে বিশ্বাসও করি না। বিএনপি চায় সামনে যে নির্বাচন কমিশন আসছে গণতন্ত্রের স্বার্থে সেই কমিশন যেন যোগ্য ও নিরপেক্ষ হয়। আর এক্ষেত্রে বিরোধীদল হিসেবে সরকারকে সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত।’
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় একই বিষয়ে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন নিয়ে সরকার কী করতে চায় সেদিকে আমরা নজর রাখছি। আজারো যেন দেশে ৫ জানুয়ারি মার্কা কোনো নির্বাচন এবং রকিব উদ্দীন মার্কা নির্বাচন কমিশন না হয় সেজন্য সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই।’
এক প্রশ্নের জবাব গয়েশ্বর বলেন, ‘আমাদের বক্তব্যকে দুর্বলতা ভাবার কোনো কারণ নেই। আমরা প্রত্যাশা করি সরকার অতীতের মতো একতরফাভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। আর তারা যদি এসব ক্ষেত্রে কোনো ধরণের কৌশলের আশ্রয় নেয় তাহলে আমরা পাল্টা কৌশল গ্রহণ করতে বাধ্য হবো।’
একই বিষয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অবঃ) মাহবুবুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘গণতান্ত্রিক দেশে সব রাজনৈতিক দলের ভূমিকা থাকে। সেখানে বিএনপি অনেক বড় একটি রাজনৈতিক দল। একাধিকবার দলটি রাষ্ট্র পরিচালনাও করেছে। সুতরাং জাতীয় ইস্যুতে সরকারের উচিত বিএনপির সঙ্গে আলাপ আলোচনা করা। কারণ আমরা আর একটি ৫ জানুয়ারির স্টাইলের নির্বাচন চাই না। জনগণও চায় না। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা একটি অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। এজন্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা থাকবে সবচেয়ে বেশি। আমরা সরকারকে একটি শক্তিশালী ও আস্থাভাজন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সহযোগিতা করতে চাই। সরকারকে এটাকে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। সুতরাং আমাদের এই মনোভাবকে নমনীয়তা বা দুর্বলতা হিসেবে না দেখে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সহযোগিতার মানসিকতা হিসেবে দেখা উচিত।
নিউজবাংলা/একে
Comments
comments