Breaking News
  • নড়াইলের বড়দিয়া থেকে ১৬ মেট্রিক টন চাল জব্দ, গুদাম কর্তকর্তা পলাতক
  • এপিবিএন এর ভেজাল বিরোধী অভিযানে চারটি প্রতিষ্ঠান’কে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ৫ লক্ষ টাকার পণ্য ধ্বংস
  • জোট আছে জোট নেই
  • মুসলিম যুবকদের আইএস আখ্যা দিয়ে ফাঁসানো হচ্ছে
  • বাসাইলে দুই ব্যবসায়ীর জরিমানা ও একজনের জেল

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা

নিউজবাংলা: ১ জুলাই, শুক্রবার:

ঢাকা: সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের রাখা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৫ সালে বাংলাদেশিদের মোট ৪৪২৮ কোটি টাকারও বেশি (৫৫ কোটি ৮ লাখ ৫০ হাজার সুইস ফ্রাঁ) অর্থ দেশটির ব্যাংকগুলোতে গচ্ছিত রয়েছে।

 

গত বছর এ অর্থের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৬৮ কোটি। অর্থাৎ ২০১৪’র তুলনায় গত বছর বাংলাদেশি গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ৩৬০ কোটি টাকারও বেশি। গতকাল সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। এতে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ প্রকাশ করা হয়। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, দেশে বিনিয়োগ না হওয়ায় পুঁজি পাচার হচ্ছে। পাচার করা টাকার একটি অংশ সুইস ব্যাংকগুলোতে জমা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত এ বিষয়ে তদন্ত করে দেখা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫তে বাংলাদেশি নাগরিকদের সুইস ব্যাংকগুলোতে গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ সর্বোচ্চ। ২০০০ সাল থেকে ২০১৫ পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ কমেছে মাত্র ৪ বার। ২০০২, ২০০৩, ২০০৮ ও ২০১১তে।

ওদিকে, প্রতিবেশী দেশ ভারতের নাগরিকদের সুইস ব্যাংকে রাখা অর্থের পরিমাণ টানা দ্বিতীয়বারের মতো কমেছে। পাকিস্তানি নাগরিকদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, অফিসিয়ালি বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। সুইস ব্যাংকে যেসব টাকা জমা হয়েছে সেগুলো প্রবাসীদের টাকা। তিনি জানান, বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক খতিয়ে দেখবে।

প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, গত ১২ বছরের মধ্যে ২০১৪ সালেই বাংলাদেশিরা সবচেয়ে বেশি আমানত রেখেছে সুইস ব্যাংকে। আলোচ্য সময়ে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ বেড়ে ৫০ কোটি ৬০ লাখ ফ্রাঁ হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ ৪ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে ছিল ৩৭ কোটি ২০ লাখ ফ্রাঁ। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। ২০১২ সালে ছিল ২২ কোটি ৯০ লাখ ফ্রাঁ। ২০১১ সালে ছিল ১৫ কোটি ২০ ফ্রাঁ।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক বছর ধরে টাকা পাচার নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এর কারণ হলো দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ নেই। ফলে বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে। তিনি বলেন, বিনিয়োগে স্থবিরতার পরও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি ব্যয় বেড়েছে। যা অস্বাভাবিক। এর অর্থ হলো ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে দেশ থেকে টাকা পাচার হয়েছে।

উল্লেখ্য, সুদীর্ঘ সময় ধরে ধনীদের অর্থ গোপনে জমা রাখার জন্য বিখ্যাত সুইজারল্যান্ড। ৮০ লাখ মানুষের এ দেশটিতে ব্যাংক আছে ২৮৩টি। বিশ্বের বড় বড় ধনীরা অর্থ পাচার করে দেশটির বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে জমা রাখে। ব্যাংকগুলোও কঠোর গোপনীয়তায় তা রক্ষা করে। আগে সুইস ব্যাংকে জমা টাকার কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করা হতো না। এমনকি আমানতকারীর নাম-ঠিকানাও গোপন রাখা হতো। একটি কোড নম্বরের ভিত্তিতে টাকা জমা রাখা হতো। কিন্তু বিশ্বব্যাপী টাকা পাচার রোধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ব্যাপকভাবে কার্যকর করায় আন্তর্জাতিক চাপে সুইস ব্যাংক জমা টাকার তথ্য প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে তারা ওই সময় থেকে বিভিন্ন দেশের জমা টাকার তথ্য প্রকাশ করছে। ওই প্রতিবেদনে কোনো দেশের কত টাকা জমা আছে সে তথ্য তারা প্রকাশ করছে। তবে আমানতকারীদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করছে না। ফলে পাচারকারীদের মুখোশ উন্মোচিত হচ্ছে না। পাচারকারীরা পর্দার আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।

সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) হল সুইজারল্যান্ড সরকারের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশেষ আইন দ্বারা পরিচালিত এই ব্যাংকটির নীতিনির্ধারণ সবই স্বাধীনভাবে পরিচালিত হয়। ২০০ বছরের পুরনো ইউরোপের এ প্রতিষ্ঠানটি মুদ্রা পাচারকারীদের নিরাপদ স্বর্গ। ১৮৯১ সালে সুইজারল্যান্ডে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত একটি ধারার অধীনে ১৯০৭ সালে স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। এরপর থেকে ব্যাংকটির মুদ্রানীতি এবং সুশৃংখল কার্যক্রম বিশ্বের উন্নত দেশগুলো অনুসরণ করে। তবে পাচারকারীদের আশ্রয় দাতা হিসেবে আন্তর্জাতিক মহলে দেশটির পরিচিতি রয়েছে। ব্যাপক সমালোচনার মুখে ২০০২ সাল থেকে দেশভিত্তিক আমানতকারীদের তথ্য প্রচার শুরু করেছে তারা। যেসব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি রয়েছে, সেসব দেশের ব্যক্তিগত পর্যায়ে তথ্য দেয়া হয়। এর কারণে সামপ্রতিক সময়ে বিদেশিদের আমানত কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সুযোগ থাকলেও তা ব্যবহার করা হচ্ছে না। ফলে বাংলাদেশিরা এখনও পাচার করা টাকা রাখার নিরাপদ স্থান হিসেবে মনে করে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) রিপোর্ট অনুসারে ২০০১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এক যুগে বাংলাদেশ থেকে ২ হাজার ১৩ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা, যা দিয়ে ৬টা পদ্মা সেতু বানানো সম্ভব। আলোচ্য সময়ে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ৯০৩ কোটি ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৭২ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ যে পরিমাণ এফডিআই দেশে এসেছে তার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি অর্থ দেশ থেকে পাচার হয়েছে।

নিউজবাংলা/একে

Share This:

Comments

comments

Previous: জেনে নিন মুখের সাদা দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়
Next: এপিবিএন এর ভেজাল বিরোধী অভিযানে চারটি প্রতিষ্ঠান’কে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ৫ লক্ষ টাকার পণ্য ধ্বংস

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*