হঠাৎ অস্থির চালের বাজার

নিউজবাংলা: ১৫ জুলাই, শুক্রবার:

আহমেদ তোফায়েল: হঠাৎ অস্থির হয়ে উঠেছে চালের বাজার। রাজধানীর বাজারে পাইকারি-খুচরা পর্যায়ে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে এক থেকে দুই টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
মিল মালিক এবং পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে চাল আমদানিতে শুল্ক আরোপের ফলে বন্দর দিয়ে পণ্যটির আমদানি কমে গেছে। ফলে বাজারে দেশি জাতের চালের চাহিদা বেড়েছে। এছাড়া বাজারে ধানের দর বৃদ্ধির কারণে অস্থির হয়ে উঠেছে চালের দাম।

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী মো. মন্টু মিয়া যায়যায়দিনকে বলেন, বাজেটের পর থেকে মিল মালিকরা সব ধরনের চাল কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন। এর পর গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে কেজিতে ১ থেকে ২ টাকা বেড়েছে। আর বস্তাপ্রতি বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। রোজার আগে যেখানে মোটা মালের দাম ছিল ২৪ টাকা সেখানে এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। বাজেটের আগে ভারত থেকে চাল আমদানিতে শুল্ক আরোপের কারণে মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে দেশীয় চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ তোলেন তিনি।
মন্টু মিয়া জানান এক সপ্তাহ আগে মিনিকেটের বস্তাপ্রতি দাম ছিল ২ হাজার ১০০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১৯৫ টাকা। এভাবে সব ধরনের চালে পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার ঢাকার বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সপ্তাহে স্বর্ণা বা চায়না ইরি চালের দাম কেজিতে ২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কারওয়ান বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী আবু বকর সিদ্দিকী যায়যায়দিনকে বলেন, বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৫ টাকা দরে যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০ থেকে ৩৩ টাকা। প্রতি কেজি চায়না ইরি বিক্রি হচ্ছে ৩৪ থেকে ৩৮ টাকা দরে গত সপ্তাহে যার দর ছিল ৩৩ থেকে ৩৪ টাকা। এছাড়া মিনিকেট ও নাজিরশাইলের মতো চিকন চালের দামও কেজিতে ১ থেকে ২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগে যে মিনিটেকের দাম ছিল (ভালো মানের) ৪৮ থেকে ৫২ টাকা এখন তা ৫৫ টকায় বিক্রি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অধিক শুল্ক আরোপের কারণে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দেশটি থেকে পণ্য আমদানি প্রায় শূন্যের কোটায় পৌঁছেছে। এদিকে বন্দর দিয়ে চাল আমদানি হ্রাস ও ধানের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা ও পাইকারিতে চালের দাম বেড়েছে।
বাংলাহিলি কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছর আমদানি পর্যায়ে চালের ওপর কোনো প্রকার শুল্ক আরোপ না থাকায় সে সময় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৪৫-৫০ ট্রাক চাল আমদানি হতো। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চালের আমদানি পর্যায়ে সরকার দুই দফা শুল্ক আরোপ করায় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। তবে মাঝে মধ্যে দু-চার গাড়ি চাল আসছে।
২০১৪-১৫ অর্থবছরের জুনে চাল আমদানি পর্যায়ে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। এর পর ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ডিসেম্বরে দেশে উৎপাদিত ধান ও চালের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকার পণ্যটির আমদানি পর্যায়ে আরো ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এতে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি ব্যাপক হারে কমে যায়।
বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান পানামা হিলি পোর্ট লিংক লিমিটেড কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে বন্দর দিয়ে ৬৫টি ট্রাকে ১ হাজার ৮০৮ টন চাল আমদানি হয়। ফেব্রুয়ারিতে ৯৮টি ট্রাকে ৩ হাজার ৫০, মার্চে ৩৭টি ট্রাকে ১ হাজার ৯৫, এপ্রিলে ৮০টি ট্রাকে ২ হাজার ২১৮, মে মাসে ১০১টি ট্রাকে ২ হাজার ৪০২ ও জুনে ৩৭টি ট্রাকে ১ হাজার ৯৭ টন চাল আমদানি হয়। এভাবে গত ছয় মাসে ৪১৮টি ট্রাকে ১১ হাজার ৬৭০ টন চাল আমদানি হয় যেখানে গত বছরের একই সময়ে ৪ হাজার ১০১টি ট্রাকে ১ লাখ ২৮ হাজার ৪৪৬ টন চাল আমদানি হয়েছিল। অন্যদিকে চলতি মাসের ২ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত দুই ট্রাক চাল আমদানি হয়েছে।
বাংলাহিলি বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী অনুপ কুমার বসাক জানান, শুল্ক আরোপের ফলে বন্দর দিয়ে পণ্যটির আমদানি কমে গেছে। ফলে বাজারে দেশি জাতের চালের চাহিদা বেড়েছে। এছাড়া বাজারে ধানের দর বৃদ্ধির কারণে কিছুটা বাড়তির দিকে রয়েছে চালের দাম।
অনুপ কুমার বলেন, বর্তমানে বাজারে স্বর্ণা জাতের চাল পাইকারিতে প্রতি কেজি ২৮ জাতের চাল ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই পরিমাণ মিনিকেট জাতের চাল ৪০, নাজিরশাইল ৩২, মোটা চাল ২৬, চিনিগুঁড়া জাতের বিরিয়ানির চাল ৯০ ও কাটারিভোগ ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ১৫ দিন আগে এসব জাতের চাল প্রতি কেজি ২-৩ টাকা কম দরে বিক্রি হয়েছিল। পাইকারির তুলনায় খুচরায় প্রতি কেজি চাল ২-৩ টাকা বেশি দরে বেচাকেনা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, বন্দর দিয়ে চাল আমদানির এ ধারা ও বাজারে ধানের দর বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে সামনের দিনগুলোয় চালের দাম আরও কিছুটা বাড়তে পারে বলে।
হিলি স্থলবন্দরের চাল আমদানিকারক মেসার্স টুম্পা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মো. মামুনুর রশীদ লেবু জানান, ‘গত আমন ও বোরো মৌসুমে দেশের সব এলাকায় ব্যাপক হারে ধানের আবাদ ও ফলন ভালো হওয়ায় বাজারে দেশি চালের ব্যাপক সরবরাহ রয়েছে। ফলে বাজারে ভারত থেকে আমদানি করা চালের চাহিদা অনেকটাই কমে গেছে। বর্তমানে প্রতি টন চাল প্রকারভেদে ৪১০ থেকে ৪৩০ ডলার মূল্যে আমদানি হচ্ছে। তার ওপর আরোপিত শুল্ক পরিশোধ করে যে দাম পড়ছে, তার তুলনায় বাজারে তেমন দর পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া চাল আমদানিতে ঘাটতি তো আছেই। সব মিলিয়ে ব্যবসায় লোকশানের আশঙ্কায় ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ রাখতে এক প্রকার বাধ্য হয়েছি। বর্তমানে বন্দর দিয়ে সামন্য পরিমাণ বিরিয়ানির চাল আমদানি হচ্ছে।’
হিলি স্থলবন্দর পরিচালনাকারী পানামা হিলি পোর্টের জনসংযোগ-বিষয়ক কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন মলি্লক প্রতাব বলেন, আগে বন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৩০-৪০ ট্রাক চাল আমদানি হতো। কিন্তু বর্তমানে শুল্ক বৃদ্ধির ফলে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চালের আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে বললেই চলে। মাঝেমধ্যে দু-চার ট্রাক চাল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হচ্ছে।

সুত্র-যায়যায়দিন

নিউজবাংলা/ একে         

 

Share This:

Comments

comments

Previous: নাটোরে পাসপোর্ট অফিসের ৪ দালাল আটক
Next: ২০১৬ সালে বাংলাদেশে আইএস দাবিকৃত হত্যাযজ্ঞের পরিসংখ্যান প্রকাশ

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*