নিউজবাংলা: ২৭ জুন, সোমবার:
ঢাকা: বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন ১০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে এলে ভাবমূর্তি নষ্ট হবে বলে ২০০১ সালে প্রথমবারের মতো এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল বাকি রাখতে বাধ্য হয়েছিল বাংলাদেশ। ১৬ বছরের মাথায় সেই রিজার্ভ তিন হাজার কোটি (৩০ বিলিয়ন) ডলারের মাইলফলক ছুঁতে চলেছে। এই হিসেবে গত ১৬ বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বেড়েছে ৩০ গুণ।
চলতি সপ্তাহে তা প্রথমবারের মতো ৩০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছাড়িয়ে যাবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা আশা করছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র এফ এম মোকাম্মেল হক বলেন, রোববার দিনের শুরুতে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। ইন্টারন্যাশনাল হলিডে হওয়ায় রোববার রিজার্ভে কোনো অর্থ যোগ হয়নি। সোমবার, মঙ্গলবার অথবা এই সপ্তাহেই রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছাড়াবে বলে আশা করছি।
সম্প্রতি রিজার্ভ থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ খোয়ানোর পর তা ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালে সেটা হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক, বলছেন অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহ এবং রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারার কারণে গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ বাড়ছে। এছাড়া জ্বালানি তেল এবং খাদ্যপণ্য আমদানি খাতে খরচ কম হওয়ার কারণেও রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তবে গত কিছু দিন ধরে রেমিটেন্স প্রবাহে ধীরগতি চললেও রপ্তানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।
সন্তোষজনক রিজার্ভ আছে বলেই পদ্মা সেতু নির্মাণে বিদেশি কেনাকাটায় বিল পরিশোধে কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে মনে করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডএস) গবেষক এবং অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত। বর্তমানে ভারতের রিজার্ভের পরিমাণ ৩৬০ বিলিয়ন ডলারের উপরে। পাকিস্তানের ২১ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, আওয়ামী লীগের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের শেষদিকে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন এক বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি নেমে আসে। এরপর বিচারপতি লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখন রিজার্ভে ছিল ১ বিলিয়ন ডলারের সামান্য বেশি।
সে সময় আকুর বিল বাবদ ২০ কোটি ডলার পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু তাতে রিজার্ভ ১ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসত। রিজার্ভ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে, বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফসহ দাতাদের সহায়তা পাওয়া যাবে না- এই বিবেচনায় আকুর দেনা পুরোটা শোধ না করে অর্ধেক দেওয়া হয়েছিল তখন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ওই একবারই আকুর বিল বকেয়া রাখা হয়েছিল বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়। বাংলাদেশকে দুই মাস পরপর পরিশোধ করতে হয় আকুর বিল।
প্রতি মাসে সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয়ের খরচ হিসাবে হাতে থাকা রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে আট মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) ১৩ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ শতাংশ কম।
২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স বাংলাদেশে এসেছে। ওই অঙ্ক ছিল তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। তবে বিদায়ী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ শতাংশ বেশি রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। এই ১১ মাসে পণ্য আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) খোলার পরিমাণ কমেছে ২ শতাংশের মতো।
নিউজবাংলা/একে
Comments
comments