নিউজবাংলা: ১৩ আগস্ট,বৃহস্পতিবার:
ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডনে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, কাল-পরশুর মধ্যে বেগম জিয়ার লন্ডনে যাওয়ার কথা থাকলেও আপাতত তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন। তবে দলের পক্ষ থেকে মিডিয়ার কাছে এখনো এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। তবে মিডিয়ায় গত দুদিন ধরে খবর আসছিল ভিসা জটিলতায় খালেদার সফর সময়মত নাও হতে পারে।
চোখের চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার শুক্রবার রাতে এমিরেটস এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করার কথা ছিলো। এ জন্য গত মঙ্গলবার তিনি ভিসা সেন্টারে গিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্টসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করেন। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যের ভিসাসহ সফরের যাবতীয় প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। বুধবার দুপুরে ব্রিটিশ হাইকমিশন থেকে খালেদা জিয়ার ব্রিটিশ ভিসাযুক্ত পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দীন আহমেদ। সফর বিলম্বিত হওয়ার বিষয়টি ল-নে চিকিৎসকদের নির্দেশনার ওপর নির্ভর করছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে রমজান মাসে সৌদি আরবে ওমরার জন্য প্রস্তুতি নিয়েও হুট করে সে সফর বাতিল হয়ে যায়।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর স্থগিতের অন্যতম কারণ। বুধবার রাতেই তিনি এ সিদ্ধান্ত নেন। এর আগে তিনি ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সাথে বৈঠক করেন। এদিকে বুধবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ২০ দলের বৈঠকে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন জোট নেতাদের জামায়াত একসময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে আন্দোলনে ছিল, এই তথ্য গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরতে পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী বিএনপির সঙ্গে আছে, থাকবে। এ বিষয়ে কারও কথায় কর্ণপাত করার প্রয়োজন নেই।
বৈঠকে বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান বলেন, মিডিয়া বলে জামায়াত আমাদের সাথে নেই। দূরত্ব বজায় রেখে চলে। এ নিয়ে তারা প্রতিবাদ করেন না কেন? এর জবাবে জামায়াতের প্রতিনিধি দলের নির্বাহী পরিষদ সদস্য আবদুল হালিম বলেন, আমরা বক্তব্য-বিবৃতির মাধ্যমে বারবার বলেছি- জোটের সঙ্গে আছি, থাকব। এ পর্যায়ে খালেদা জিয়া আবদুল হালিমকে বলেন , আপনারা একসময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে আন্দোলনে ছিলেন। এগুলোও তুলে ধরবেন।
কিন্তু বিএনপি থেকে যে সব প্রতিষ্ঠিত নেতা বের হয়ে গেছেন এবং এমন যাদের দলে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে তারা জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি ভাল চোখে দেখছেন না। গত জুন মাসে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছিলেন, বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে হবে, নয়তো দলটি বিলীন হয়ে যাবে।
এছাড়া বিএনপির সাবেক নেতা অলি আহাদ সহ অনেকে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক সুনজরে দেখছেন না। বিএনপিতে এখনো আছেন অথচ আন্দোলন কিংবা দলের কার্যক্রমে সক্রিয় নন এমন বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাও চান জামায়াতের সঙ্গে তাদের দলের সম্পর্ক না থাক। বেগম জিয়া দেশের বাইরে গেলে তাদের নেতৃত্বে আরেক নতুন অথবা জামায়াত মুক্ত বিএনপির ঘোষণা আসতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে দলটির হাইকমান্ডে। তবে বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে বিএনপির কয়েকজন নেতা বলেছেন, এজন্যে খালেদা জিয়ার বিদেশ সফর পর্যন্ত অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই, যারা তা করবেন তারা এখনো সে ঘোষণা দিতে পারেন। এমনকি বেগম জিয়াও এধরনের নিস্ক্রিয় নেতাদের আওয়ামী লীগে চলে যেতে বলেছেন।
বুধবার রাতে প্রায় দুই ঘন্টার বেশি সময় স্থায়ী ওই বৈঠকে জোট অটুট রাখা, তার লন্ডন সফর, পুলিশের ভূমিকা, দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নিবার্চনের বিয়য়ে সরকারের ওপর চাপসৃষ্টির কর্মকৌশলের নানা প্রস্তাব, জোটের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, কারাবন্দি নেতৃবৃন্দের মুক্তিসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট অটুট আছে এবং থাকবে। একই সঙ্গে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নির্বাচনের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধভাবেই গণতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাবে জোটটির নেতা-কর্মীরা। বৃহস্পতিবার সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

নিউজবাংলা/একে