নিউজবাংলা: ১৩ আগস্ট,বৃহস্পতিবার:
মিজান বাবু , নগরকান্দা(ফরিদপুর); খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ফরিদপুরের নগরকান্দার জয়বাংলা বিশ্বরোড মোড়ে নির্মাণ করা “তারেক মাসুদ স্মৃতি স্তম্ভ” এর উদ্বোধন করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ স্মৃতি স্তম্ভের উদ্বোধন করেন তারেক মাসুদের মাতা নুরুন নাহার মাসুদ। নগরকান্দা পৌর মেয়র আঃ রায়হান উদ্দিন মিয়ার সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এবং তারেক মাসুদ স্মৃতি স্তম্ভের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নকারী আয়মন আকবর বাবলু চৌধুরী।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিনা মাসুদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল আজিজ, উপজেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক বেলায়েত হোসেন মিয়া, ফুলসুতি ইউপি চেয়ারম্যান আরিফ হোসেন, চরযশোরদী ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার ওহিদুল বারী আলম, ডাঙ্গী ইউপি চেয়ারম্যান কাজী আবুল কালাম, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি দেলোয়ার হোসেন ফকির, সাধারন সম্পাদক মিজানুর রহমান, উপজেলা স্বেচ্ছা-সেবকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আল আমিন, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মীর আল আমিনসহ স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী।
খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের সম্মানে এবং মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস নিয়ে প্রামান্যচিত্র নির্মাণে তার অবদান মানুষ যাতে চিরকাল মনে রাখে সে উদ্দেশ্যে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার চরযশোরদী ইউনিয়নের জয়বাংলা মোড়ের ‘তারেক মাসুদ স্কয়ার’ এ নির্মাণ করা হয়েছে “তারেক মাসুদ স্মৃতি স্তম্ভ”। সংশ্লীষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আয়মন আকবর বাবলু চৌধুরীর পরিকল্পনা ও অর্থায়নে প্রায় ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘তারেক মাসুদ স্কয়ার’ এ স্মৃতি স্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণ কাজের দায়িত্বপালন করছেন, ফুলসুতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফ হোসেন ।
তারেক মাসুদ শুধু একটি নাম নয় একটি প্রতিষ্ঠান। এ অসাধারন প্রতিভার চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের জন্ম ফরিদপুর জেলার ভাংগা উপজেলার নুরপুর গ্রামে ১৯৫৭ সালের ৬ ডিসেম্বর। ভাংগা পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক মশিউর রহমান তার পিতা। তারেক মাসুদের মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে মাতা নুরুন নাহার বিধবা হন। তারেক মাসুদের শিক্ষা জীবন শুরু হয় ভাংগা শহরের ঈদগাঁ মাদ্রাসাতে। কিছুদিন নগরকান্দার একটি দাখিল মাদ্রাসায় লেখা পড়া করেন। এর পর তিনি ঢাকার লালবাগ মাদ্রাসা থেকে মাওলানা পাস করেন। ১৯৭২ সালে ভাংগা পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাশ করেন। ১৯৭৫ সালে নটরডেম কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচএসসি পাশ করেন। এর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে ¯œাতক ও ¯œাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন।
বিশ্ব সাহিত্যকেন্দ্রের অবকাঠামো সুবিধা নিয়ে ১৯৮৫-৮৬ সালে তারেক মাসুদ শুরু করেন মাল্টিমিডিয়া এপ্রিসিয়েশন কোর্স। চিত্র শিল্পী এসএম সুলতানকে নিয়ে তৈরী করেন প্রামান্যচিত্র ‘আদম সুরত’। তারেক মাসুদের মাদ্রাসা জীবনের অভিজ্ঞতা ও বোন আসমার মৃত্যুর কষ্ট নিয়ে নির্মাণ করেন প্রামান্যচিত্র ‘মাটির ময়না’। বাল্য বিবাহের শিকার বন্দীত্বের দুঃখ তুলে ধরে নির্মিত তার প্রামান্যচিত্র ‘ সোনার বেড়ি’। শেঁকড়ের সন্ধানে সবাইকে আহবান করে তৈরী করেছেন ‘অন্তযাত্রা’। তৈরী করেছেন ‘মুক্তির গান’ ও ‘মুক্তির কথা’ নামের অসাধারন ছবি, তুলে ধরেছেন মুক্তিযুদ্ধের অজানা কথা। ‘ফেরিওয়ালা’ নির্মাণ করে দেশ ব্যাপী ছবিটি ফেরি করেছেন তারেক মাসুদ নিজেই। প্রদর্শনী গুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় নিজে উপস্থিত থেকে দেখেছেন।
আমাদের ইতিহাসের দেশ বিভাগ নিয়ে চলচ্চিত্র ‘কাগজের ফুল’ নির্মানের পরিকল্পনা করেছেন, তবে ছবিটি তৈরীর আগেই ২০১১ সালের ১৩ আগষ্ট মানিক গঞ্জের অদূরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন আমাদের দেশের খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ। এ সড়ক দুর্ঘটনায় তার সাথে একই ভাবে নিহত হন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব মিশুক মুনীর, সেট ডিজাইনার জামাল হোসেন, ক্যামেরা সহকারী ওয়াসিম ও মাইক্রোবাসের চালক মোস্তাফিজ।
১৯৮৮ সালে তারেক মাসুদ তার সহকর্মী ক্যাথরিন কে বিবাহ করেন। তাদের একমাত্র সন্তান ‘নিষাদ’ পিতাকে হারিয়ে আজো পথের বাঁকে তাকিয়ে আছে, কখন বাবা এসে বলবে ডেকে “ আয় খোকা আয়”।
“তারেক মাসুদ স্মৃতি স্তম্ভ” নির্মাণ হওয়ায় তারেক মাসুদের অবদান মানুষ বিন¤্র শ্রদ্ধায় মনে রাখবে চির কাল প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তারেক মাসুদের মা নুরুন নাহার মাসুদ।