নিউজবাংলা: ১২ জুলাই, রোববার :

আলিফ আবেদীন গুঞ্জন.ঝিনাইদহ থেকে:

মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের হোসেন আলীর জোয়ার্দ্দারের ছেলে ইদ্রিস আলী ছবি আকা ও সাইনবোর্ডে লেখার কাজ শুরু করেন। প্রথমেই তিনি ঢাকার সাভারে খালাতো ভাই আজম আর্টের দোকানে যেয়ে কাজ শুরু করেন।

তারপর যশোর, ঈশ্বরদী মিলিটারী ফার্মে কাজ করেন।প্রায় ৫ বছর পেশার কাজ করেন তিনি। আয়মোটামুটি হয়। সেখান থেকে টাকা জমিয়ে তিনি সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানেও আর্ট ও শোভা বর্ধনের কাজ করতেন। দীর্ঘ ১২ বছর সৌদি আরবের খামিজ মোসাইদ শহরের আবু আতাব কোম্পানীতে কাজ করেছেন তিনি। চাকুরীতে যে বেতন পেয়েছিলেন তা দিয়ে সংসার চালানো ছাড়া আর কিছুই করতে পারেন নি তিনি।

বিদেশে চাকুরীর কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ৩ বছর আগে দেশে ফিরে আসেন ইদ্রিস আলী। “গাছ, মাছ, ঘাষ-সবে মিলে করি চাষ, গরু যদি থাকে পাশে দুধে-মাছে বার বাস” এ শ্লোগানে ৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন নার্সারী। গড়ে তোলেন সৌদি নার্সারী এ্যান্ড কৃষি ফার্ম। মেহগনি, আম, কাঠাল, নারিকেল, লিচুসহ বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছের চারা তৈরী শুরু করেন। চারা একটু বড় করে জেলার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি শুরু করেন। সেই থেকে ঘুরে যায় তার ভাগ্যের চাকা। ৫ বিঘা থেকে বর্তমানে ২৫ বিঘা জমিতে নার্সারী করেছেন তিনি। ১০/১২ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। নার্সারী করে জমি কিনে বাড়ী করেছেন। সংসারে ফিরে এসেছে স্বচ্ছলতা। নার্সারির পাশাপাশি তার রয়েছে ৩ টি পুকুরে মাছ চাষ, গরু পালন ও নেপিয়ার ঘাষ চাষ।

সরেজমিনে লক্ষীপুর গ্রামের সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সবুজ শ্যামল ছায়ার তৃষ্ণা মেটাতে ও জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব থেকে পরিবেশকে মুক্ত করতে ইদ্রিস আলী বিভিন্ন প্রজাতির গাছের নার্সারি। নার্সারি করে পরিবেশ ও প্রকৃতির অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে তিনি বিভিন্ন বাজারে ও প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করছেন গাছের চারা।

প্রথমে ফলদ ও বনজ মিলিয়ে ১০ হাজার চারার বীজ রোপণ করেন। চারাগুলো বড় হলে ভ্যানে করে ৯ হাজার চারা হাটগোপালপুর, মধুপুর, গোয়াপাড়াসহ আশপাশের বাজারে বিক্রি করে খরচ বাদে ৫০ হাজার টাকা লাভ করেন।পরের বছর ১৫ বিঘা জমিতে গাছের বীজ বোপন করে তার বড় করে বিক্রি করেন। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে তার নার্সারির পরিধি। সে এখন ২৫ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন বিশাল আকারের নার্সারি। নার্সারি করে সে এখন স্বাবলম্বী। বর্তমানে নার্সারিতে গাছের সংখ্যা দেড় লাখ। তার নার্সারিতে প্রতিদিন ১০-১২ জন শ্রমিক কাজ করেন।ইদ্রিস আলী জানান, নার্সারি আমাকে শুধু স্বাবলম্বী করেনি, আমার আর্থসামাজিক অবস্থারও ইতিবাচক পরিবর্তনও ঘটিয়েছে। বর্তমানে আমার কোনো অভাব নাই। অনেক পরিশ্রম ও জীবনের সাথে সংগ্রাম করে আজ আমি স্বাবলম্বী হয়েছি। পাশাপাশি আমার দেখাদেখি এ এলাকার আরো অনেকেই নার্সারি করে সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছে, হয়েছে স্বাবলম্বী। আমি ৭ বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাষের চাষ করেছি। যা প্রতিদিন বিভিন্ন বাজারে গিয়ে বিক্রি করে আসছি।

আমার এই নার্সারী আরও বৃহত্তর পরিসরে করার মানসিকতা রয়েছে। সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অথবা কোন ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে ঋণ পেলে নার্সারী বড় করতে পারতাম। সেই সাথে এ এলাকার অনেক বেকার যুবকের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারতাম।

নিউজবাংলা/একে