মধুপুরে খুনের ঘটনার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মা-বাবা হাত-পা ধরে স্বামী গলাটিপে হত্যা করে
নিউজবাংলা: রোববার, ২৮ জুন:
মো.নজরুল ইসলাম, মধুপুর(টাঙ্গাইল)প্রতিনিধি:
‘মায়ের মতন আপন কেহ নাই রে…’ কালজয়ি এ গানটি ভুল প্রমান করতেই স্বামী ও জামাতা মিলে নিজ মেয়েকে গলাটিপে হত্যা করলেন এক নিষ্ঠুর মা। মধুপুরে স্বামীর সাথে বড় বোনের পরকীয়ার জেরে মনিরা বেগম মনি(২৬) নামে এক গৃহবধু খুন হয়।
খুনের সাথে জড়িত সন্দেহে ওইদিনই গৃহবধুর স্বামী রবিউল ইসলাম সাগর (৩০) ও মা রহিমাকে (৪৮) আটক করে পুলিশ। মা রহিমা বেগম পা,বাবা ইসহাক আলি হাত ধরে এবং স্বামী রবিউল ইসলাম সাগর মনিকে গলাটিপে হত্যা করে। আটককৃতরা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে গৃহবধু মনি হত্যার লোমহর্ষক বর্ণণা দিয়েছেন।
স্থানীয় ইউ.পি সদস্য মো.নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে মধুপুর থানায় তিনজনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। (মামলা নং ২০/১৫)
২২ জুন বিশ্ব বাবা দিবসের আগের রাতে উপজেলার আলোকদিয়া ইউনিয়নের রক্তিপাড়া গ্রামে গৃহবধু মনিরা বেগম মনি বাবা জনৈক ইসহাকের বাড়িতে খুন হন। বাবা,মা ও স্বামী নাটকীয়ভাবে মনি হত্যাকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে চালিয়ে দিয়ে সোমবার সকাল ১০টার দিকে দাফন করার চেষ্টা করেন। কিন্তু রহস্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় পুলিশ ঘটনা স্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার এবং জড়িত সন্দেহে তাদের আটক করে। বাবা ইসহাককে ধরার জন্য পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্র জানায়, গত ৯ বছর আগে ইসহাকের দ্বিতীয় মেয়ে মনিরার সাথে পঞ্চগড়ের পাগলাপীর এলাকার জনৈক রবিউল ইসলাম সাগরের সাথে বিয়ে হয়। সংসার জীবনে তাদের আরাফাত নামের ৫ বছরের এক ছেলেও আছে। সাগর মনিকে তার বাবা-মার কছে রেখে ঢাকায় গাড়ি চালান। কিন্তু ঢাকাতে মনির বিধবা বড়বোন রোজিনা গার্মেন্টসে চাকরি করায় সাগর-রোজিনা একই বাসায় থাকত। মনির চেয়ে রোজিনা সুন্দুরী হওয়ায় তাদেও মাঝে পরকীয়া প্রেম গড়ে উঠে। দুই-তিন বছর ধরে মনিরার বিধবা বড় বোন রোজিনার(৩০) সাথে স্বামী সাগরের অনৈতিক সম্পর্ক চলতে থাকে। তাদেও মাঝে অনৈতিক সম্পর্কেও বিষয় বুঝতে পেওে মনি সাগরকে এ থেকে ফেরানোর অনেক চেষ্টা করেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীতে প্রায়ই ঝগড়া লেগেই থাকত। রোজিনা ও সাগর বাবা-মাকে ঢাকা থেকে অনেক টাকা-পয়সা দেয়ার কারনে মা-বাবা মনির কথাতে কর্ণপাত করেনি। ফলেএলাকায় একাধিকবার শালিসী বৈঠকে বিষয়টি সমাধান হয়নি। বিষয়টিতে মা ও বাবার রহস্যজনক সমর্থন থাকায় সুষ্ঠু সমাধান হয়নি বলে এলাকবাসীর অভিযোগ। এক পর্যায়ে পরকীয়ার কারনে বড়বোন রোজিনা গর্ভবতি হয়ে পড়ে। সাগর শ্বশর-শাশুরীকে সাড়ে তিন লাখ টাকা ধার দিয়ে মনিকে ডিভোর্স করে রোজিনাকে বিয়ে করতে চায়।
কিন্তু মনি রাজি না হওয়ায় বাধ্য হয়ে ২২ জুন রবিবার রাত দুই টার দিকে স্বামী সাগর(৩০) বাবা ইসহাক আলি ও মা রহিমা বেগমার সহযোগিতায় স্ত্রী মনিরাকে শ্বাস রুদ্ধ করে হত্যা করেন। সকালে ঘটনাটিকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে চালিয়ে দিয়ে দাফনের ব্যবস্থা করলে ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়। এলাকাবাসী তাদের আটক করে পুলিশে খবর দেয়। ইতোমধ্যে মনিরার বাবা ইসহাক বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।
মামলার বাদী স্থানীয় ইউ.পি সদস্য মো.নাজিম উদ্দিন জানান, অনেকদিন ধনে মনি ও সাগরের মাঝে ঝগড়া-বিবাদ চলছিল। কিন্তু মনির বাবা-মা সাগরের পক্ষ নেয়ার স্থানীয় মাতাব্বরেরা কোন সমাধান দিতে পারেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাশের এক গৃহবধু জানান,সাগর মনিকে মারধর করতো এবং ভরণপোষণ করতো না।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা (আই.ও) মধুপুর থানার ওসি (তদন্ত) মো.গোলাম মোস্তফা জানান,আটককৃতরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি জানান অপর আসামী বাবা ইসহাক আলিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
সহকারি পুলিশ সুপার (গোপালপুর-সার্কেল) জমির উদ্দিন আহমদ ও মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন।
নিউজবাংলা/একে
Categories: বিশেষ,সারাদেশ