নিউজবাংলা: রোববার, ২৮ জুন:
ঢাকা: ভিন্ন মহাদেশের তিন ভিন্ন দেশে হামলা। কিন্তু সন্দেহের তির একদিকেই। গত শুক্রবারের ওই হামলার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবেই মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) দিকে যায়। তিউনিসিয়া, কুয়েত ও ফ্রান্সে চালানো এসব হামলার কৌশল আইএসের হামলার কৌশলেরই প্রতিধ্বনি।
এর মধ্যে কুয়েতে শিয়া মসজিদে চালানো আত্মঘাতী হামলার দায় ইতিমধ্যে স্বীকার করে নিয়েছে আইএসের সহযোগী সংগঠন বলে পরিচয় দেওয়া নাজাদ প্রভিন্স। তিউনিসিয়ায় হামলার দায়ও স্বীকার করেছে ইরাক ও সিরিয়াভিত্তিক এই জঙ্গি সংগঠনটি। ফ্রান্সে হামলায়ও আইএসের জড়িত থাকার জোরদার ইঙ্গিত মিলেছে।
মধ্যপ্রাচ্যে মুসলমান হত্যার সঙ্গে মুসলমানরাই জড়িত। সুন্নি মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ উপসাগরীয় দেশ কুয়েতের শিয়া মসজিদে আত্মঘাতী হামলায় সেটাই হয়েছে। এই হামলা ওই অঞ্চলে ভয়ংকর সাম্প্রদায়িক সহিংসতারই অংশ। এমন সহিংসতা ওই অঞ্চলে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে এবং তা কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
সুন্নিপন্থী আইএস শিয়াদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। ১০ বছর বা তারও বেশি সময় আগে ইরাকে উৎপত্তি হওয়া জঙ্গি এই সংগঠনটি আবারও ইরাকে ফিরেছে, যা সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে আরও মুসলমান হত্যার আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে।
আরব বসন্তের সূতিকাগার বলে পরিচিত তিউনিসিয়ায় হামলা চালানোর মূল লক্ষ্যবস্তু ছিলেন পশ্চিমা পর্যটকেরা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হোটেল এবং অবকাশযাপন কেন্দ্রগুলোতে বারবার হামলা হচ্ছে। ইসলামি বিশ্বে পশ্চিমাদের উপস্থিতি স্পষ্টভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ। হোটেলে হামলা হলে তা সারা বিশ্বের মনোযোগ পায়, হামলাকারী গোষ্ঠীর প্রভাব বৃদ্ধি পায় ও স্থানীয় পর্যটনশিল্প ক্ষতির মুখে পড়ে। এই হামলার প্রধান সন্দেহভাজনেরা স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর একাংশের সদস্য হয়ে থাকতে পারেন কিংবা প্রতিবেশী লিবিয়ার কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্য অথবা আইএসের অনুগত গোষ্ঠীর সদস্য হতে পারেন।
গত মার্চে তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিসের বিখ্যাত বোরদো জাতীয় জাদুঘরে সন্ত্রাসী হামলায় ২১ জন বিদেশি পর্যটক এবং এক পুলিশ সদস্য নিহত হন। এরপর আবার এই হামলায় দেশটির পর্যটনশিল্প হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। তিউনিসভিত্তিক উত্তর আফ্রিকাবিষয়ক বিশ্লেষক মনিকা মার্কস বলেন, গত মার্চের চেয়ে গত শুক্রবারের হামলা তিউনিসিয়ার পর্যটনশিল্পের বেশি ক্ষতি করবে। কারণ, যে পর্যটকেরা তিউনিসিয়া আসেন তাঁরা শুধু বোরদো জাদুঘর দেখতেই আসেন না। অনেকেই, বিশেষ করে জার্মান ও ব্রিটিশ পর্যটকেরা সৈকতে সময় কাটিয়ে ভিটামিন ডি সংগ্রহ করতে চান।
তৃতীয় হামলা হয়েছে ফ্রান্সে যুক্তরাষ্ট্রের একটি কারখানায়। সন্দেহভাজন হামলাকারীর বয়স ২২ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। যিনি বিদেশে জন্মগ্রহণের পর ফ্রান্সে এসে নাগরিকত্ব পেয়েছেন কিংবা তাঁর বাবা-মা আলজেরিয়া বা মরক্কো থেকে অভিবাসী হিসেবে ফ্রান্সে ঢুকেছেন। এ ধরনের হামলাকারীর সঙ্গে বিদেশের কোনো গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা থাকে, আবার কেউ কেউ একাই হামলায় অংশ নেয়।
এটাও সম্ভব যে, সমন্বয়ের মাধ্যমে ওই তিনটি হামলা চালানো হয়েছে, যা আইএসের নতুন কৌশলগত চিন্তাভাবনা ও সামর্থ্যের ইঙ্গিত দেয়। যদি এটা তারা না-ও করে থাকে, তাহলেও এর মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদীরা শক্তিশালী বার্তা দিল যে, তারা বিশ্বের যেকোনো স্থানে হামলা চালাতে সক্ষম।
সূত্র : দ্যা গার্ডিয়ান