নিউজবাংলা: রোববার, ২৮ জুন:
ঢাকা : বছর ঘুরে আসছে ঈদ। ঈদকে সামনে রেখে তাই রাজধানীসহ সারাদেশে ঈদের বাজার গুলোতে বাড়ছে মানুষের কেনাকাটার ব্যস্ততা। প্রতিবারের মত এবারো সারাদেশের ঈদের বাজারগুলোতে ভারতীয় বিভিন্ন সিরিয়ালের নায়িকাদের পোশাকের আধিপত্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ঈদ যতোই এগিয়ে আসছে ভিড় বাড়ছে রাজধানীর শপিং মলগুলোতে। রাজধানী ঢাকার মার্কেট থেকে শুরু করে বিভাগ-জেলা-উপজেলা পর্যায়ের মার্কেটগুলোতে ছেঁয়ে গেছে বাহারি নামের ভারতীয় পোশাকে। বৈধ-অবৈধ পথে আসা এসব পোশাক দেদারসে বিক্রী হচ্ছে। সিরিয়ালে প্রভাবিত হয়ে এদেশের তরুণ তরুণী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের মানুষ ঝুঁকছেন ভারতীয় পোশাকের দিকে।
গতবারের ঈদের বাজার ভারতীয় সিরিয়াল ‘বোঝে না বোঝেনা’ সিরিয়ালের পাখি পোশাকটি একচেটিয়া ঈদের বাজার দখল করে রাখলেও এবার ঈদের বাজারে যুক্ত হয়েছে কিরণমালা, রাজধানীর বিভিন্ন শপিং মল ঘুরে দেখা গেছে দেখা গেছে সেই চিত্র। বিক্রেতারা পাখি জামার পরিবর্তে নিয়ে এসেছেন স্টার জলসায় প্রচারিত ‘কিরণমালা’ সিরিয়ালের নামকরণে ঈদের ‘কিরণমালা জামা’। বিভিন্ন বিপণনকেন্দ্রে মেয়েদের ‘কিরণমালা’ নামের জামা বিক্রি হচ্ছে দেদারসে। মাঝারি থেকে বড় মেয়েদের জন্য তৈরি এ জামার দাম বিক্রেতারা হাকাচ্ছেন ৪ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া প্লাজু ১০ থেকে ১৫ হাজার, শাররা ২০ থেকে ২৩ হাজার, খাররা ৮ হাজার থেকে ১৫ হাজার, উল্ডোব্লুম কোট চুরিদ্বার ১২ হাজার থেকে ২৫ হাজার, পিকে ১৭ হাজার থেকে ২৬ হাজার, পরিদি ১৫ হাজার থেকে ২২ হাজার দাম হাকা হচ্ছে।
এছাড়াও আছে, জলপরি, রাই কিশোরী, আনার কলি, আশিকি, মাসাককলি, সানি, কোয়েল, চিকনি চামেলি, বিপাশা, অর্চনা, আমিত, ডিসকো চলি, জীবিকা, রিভা, বীরা, ছানছান, ঝিলমিল, পাঙ্খুরী, আশিকি টু, বুগিউগি, টুপুর এমন নানা বাহারি নামের বিভিন্ন পোশাক।
টিভি সিরিয়ালের বদৌলতে ঈদ বাজারে শাড়ির ক্ষেত্রেও ভারতের দাপট বজায় আছে। রেশম কা জরি, ঝিলিক, রাধিকা, ওহ লায়লা, তিসমার খান, জারা জারা, আয়শা টাকিয়া, দিল দো কলি, বধূয়া, অন্তরা ইত্যাদি নামের ভারতীয় শাড়ির মধ্যে পাথর আর চুমকির কারুকাজ করা গাঢ় রঙের শাড়িতে বাজারের দোকানগুলো ভরে গেছে। ভারতীয় এসব শাড়ির দাম ১৫ হাজার টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকা।
অন্যান্য বারের মতো এবারও ঢাকার ঈদ বাজারে রং-বেরঙের ভারতীয় শাড়ি, তৈরি সালোয়ার-কামিজ, থ্রি-পিস, লেহাঙ্গা আর পাঞ্জাবিতে ছেয়ে গেছে বড় বড় শপিং মল ও মার্কেট। রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, নিউমার্কেট, মৌচাক, গাউছিয়া, চাঁদনি চক, বেইলি রোড, পলওয়েল, রাপা প্লাজা. কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, পলওয়েল, গাজী ভবন, মালিবাগ, মৌচাক, মিরপুর রোড, রাজধানী সুপার মার্কেটসহ সর্বত্রই ভারতীয় পোশাকের আধিক্য দেখা যাচ্ছে। ভারতের বিভিন্ন টিভির বাংলা সিরিয়াল যেমন কিরণমালা, জলপরি, রাই কিশোরী নামের রঙচঙের পোশাক রয়েছে, তেমনি রয়েছে মুম্বাইয়ের নায়িকাদের নামে বিভিন্ন রকমের শাড়ি।
ঈদ উপলক্ষে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বৈধ-অবৈধ পথে কোটি কোটি টাকার পোশাক নিয়ে ঢাকায় এসেছেন। ঈদের বাজারে তারা শত শত কোটি টাকার ব্যবসা করে দেশে ফিরে যাবেন। অবৈধ পথে হুন্ডির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে তাদের টাকা ভারতে চলে যাবে। ঈদকে কেন্দ্র করে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশ থেকে বিপুল অর্থ নিয়ে যাওয়ার হিসেব কোথাও থাকবে না। ঈদকে কেন্দ্র করে ভারতীয় টিভির সিরিয়ালের বিভিন্ন চরিত্রের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে ওই দেশের ব্যবসায়ীরা পোশাকের নাম দিচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে বাণিজ্যের সুদূরপ্রসারী চিন্তা থেকেই টিভি সিরিয়ালের নামকরণ ও বিভিন্ন চরিত্রের অভিনেত্রীদের পোশাক পরিচ্ছেদ দেয়া হয়।
সারা ভারত জুড়েও এসব সিরিয়ালের পোশাক কোথাও পাওয়া না গেলেও বাংলাদেশে যে এর ব্যাপক চাহিদা আছে সে কথা মাথায় রেখেই বাংলাদেশের মার্কেট ধরার জন্যই বিভিন্ননামে এগুলো প্রস্তুত করা হয়।
এদিকে দেশী পণ্য ক্রয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ বাড়ছে এবং দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলোর পোশাকের ক্রেতা গড়ে উঠেছে। দেশী পোশাকের আড়ং, প্রবর্তনা, সাদাকালো, রং, কে ক্রাফট, অঞ্জনস, দেশী দশ, আবর্তন, দর্জিবাড়ির মতো অর্ধশত ফ্যাশন হাউস গড়ে উঠেছে। এসব ফ্যাশন হাউজের তৈরি পোশাক টেকসই এবং গুণগত মানে ভারতীয় নানা ডিজাইনের পোশাকের চেয়ে ভাল হলেও টিভি সিরিয়াল দেখে প্রভাবিত হওয়ায় নিম্নমানের কাপড় এবং রঙচঙের ভারতীয় পোশাকের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে ভারতীয় সিরিয়াল দেখতে অভ্যস্ত তরুণী ও গৃহবধূরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় মান ভাল হওয়ায় দেশীয় ফ্যাশনের পোশাকের দাম ভারতীয় পোশাকের তুলনায় খানিকটা বেশি। এ কারণে অনেক ক্রেতাই আরো বেশি ঝুঁকছেন তুলনামূলক কম দামে রঙাচঙা ভারতীয় পোশাকের দিকে। আর ঈদ বাজারকে কেন্দ্র করে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ‘বিক্রীর পর দাম পরিশোধ’ করার শর্তে পণ্য দেয়ায় দেশের বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা ঝুঁকছেন সেদিকেই বেশি।
ভারতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসনে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি হারাতে বসেছে। ভারতীয় এসব সিরিয়ালের কারনে দিন দিন পারিবারিক অশান্তি, হতাশা বেড়েই চলেছে। নিজস্ব সংস্কৃতিকে ভুলতে বসেছে। তাই বিশেষজ্ঞদের অভিমত আমাদের সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনতে হলে ভারতীয় এই আগ্রাসনকে অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে ভারতীয় এসব চ্যানেল বন্ধ করে দিতে হবে। অবৈধ পথে যেন কোনো ভারতীয় পোশাক না আসতে পারে সেদিকেও নজর দেয়ার কথাও বলেন তারা।
নিউজবাংলা/একে