নিউজবাংলা: সোমবার, ২৯জুন:

মো. নজরুল ইসলাম মধুপুর (টাঙ্গাইল) থেকে:
ঝারি-সারি ও ঘাটু গানের আসর এখন অতীত। মন্ডলবাড়ীর কাঁচারিতে বসে সারা রাত গল্প-গুজব করে রাত পার করার দৃশ্যও আর চোখে পরে না। গায়ের ব্যস্ত ও ক্লান্ত মানুষগুলোকে কালের আবর্তে হারিয়ে যাওয়া কিচ্চসা শোনিয়ে

একটু আনন্দ দিয়ে সারা রাত মাতিয়ে রাখতেন চারণ কবি আবু শামা ওরফে বিবিসি। সেই চারণ কবি এখন অসুস্থ হয়ে পড়ে রয়েছেণ। খোঁজ খবর নেয়ার নেই।
টিপ সই জানা মানুষটি মুহূর্তের মধ্যে বাস্তব ঘটনাকে কেন্দ্র করে গল্প বানিয়ে ছন্দের সাথে মিলিয়ে তা মানুষের মাঝে পরিবেশন করতে পারে। বিভিন্ন হাট-বাজার চৌরাস্তা, পাড়া-মহল্লা এমনকি বিয়ে, খাৎনা ও অন্যান্য আয়োজনে সারা রাত গল্প বলে যেন জাদুকরী কায়দায় মানুষকে ধরে রাখার পারদর্শীতা তার রয়েছে। যদিও গেঁয়ো ভাষায় কথা বলে তথাপিও মানুষ এমনভাবে শুনে যে রাত কখন পার হয় তা টেরই পায় না। টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার আউশনারা ইউনিয়নের মলকা গ্রামের মৃত সাহেব আলীর ছেলে আবুল হোসেন (৪৫) পরিবারের লোকজন আবু শামা বলে ডাকে। ভয়েস অব এ্যামেরিকার (বিবিসি) খবরের মতো অনর্গল মানুষের সামনে বলতে পারে বলে, অনেকেই তাকে বিবিসি বলে ডাকে। দুই স্ত্রী ভানু ও আয়েশা এবং চার মেয়ে হনুফা (৩০), খাদিজা (২৫), আম্বিয়া (২০) ও আলেয়াকে (১৮) নিয়ে তার সংসার। বর্ষা মৌসুম ছাড়া প্রায় সারা বছরই গল্প বলে জীবিকা নির্বাহ করে। তার গল্প শুনে লোকজন মুগ্ধ হয়ে তিন শ থেকে শুরু করে এক হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়ে থাকে। গতকাল বৃহস্পতিবার চাপড়ী বাজার শহীদের হোটেলে বসে কথা হয় এই চারণ কবির সাথে। তিনি জানালেন, এভাবে ১৫ বছর বয়স থেকে গল্প বলা শুরু করেছে। সে গাজীপুর মৌচাক, কোনাবাড়ী ওয়েস ঘাট, সখীপুর বড়চওনা, কুতুবপুর, ঘাটাইল, সাগরদিঘী, ধলাপাড়া, মধুপুর, শোলাকুড়ি, ইদিলপুর, গোপালপুর ও ভূয়াপুরের বিভিন্ন জায়গায় গল্পের আসর করেছেন। তিনি জানালেন, চাপড়ী বাজারে বিজলি রেকর্ডিং হাউস এবং ঘাটাইলের মিল্টন আর্ট এন্ড রেকর্ডিং হাউস তার তিনটা গল্পের ক্যাসেট করেছেন। তিনটা ক্যাসেটের জন্য তাকে দেয়া হয়েছে মাত্র এক হাজার।
আকথা, কুকথা চলে যাও বনে, ভাল মন্দ দু’চার কথা আল্লাহ দিও আমার মনে। এই ছন্দ দিয়েই তার গল্প বলা শুরু হয়। তার জনপ্রিয় একটি ছন্দ হলো, বোদাই নাম্বার এক, সাইড পকেটে যে রাখে টাকার ব্যাগ। বোদাই নাম্বার দুই, নদীর পাড়ে যে আবাদ করে ভূই (পাট)। বোদাই নাম্বার তিন, যে করে ঋণ। বোদাই নাম্বার চাইর, ঝাবা বাঁশ দিয়ে যে দেয় ঘরের পাইড়। বোদাই নাম্বার পাঁচ, জোড় সীমানায়ু যে রয় গাছ। বোদাই নাম্বার ছয়, যে বউয়ের কাছে গোপন কথা কয়।
আলাপে পালাপে গগনও দায়, কাইলকার রাইতে বাইশ থান, কাপড় আমার বিলাইয়ে খায়। বাইশ থান কাপড় খাইল মাড়ের গন্দে, আমার বাইশ মন লোহা খাইল কোন সুমন্দে। বাইশ মন লোহা খাইয়া যে বিলাই ঝিয়ে, সে বিলাই পানির পিপাসা মিটায় বাইশ মন ঘিয়ে। প্রথমে এ রকম ছন্দ বলেন, পরে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে সুন্দর সুন্দর গল্প। তিনি জানায়, এ রকম অনেক ছন্দ তার নিজের রচিত। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, অনেক সময় টাকা-পয়সা ছাড়াই গল্প বলে থাকি। অন্যকে আনন্দ দেওয়া আমি নিজেও আনন্দ পাই।

নিউজবাংলা/একে