নিউজবাংলা: মঙ্গলবার, ৩০জুন:
ঢাকা: সমাজসেবা অধিদফতরের চাকরি কপালে জুটছে না সেই কথিত ১২ ‘হিজড়ার’। নিজেদের তৃতীয় লিঙ্গ ‘হিজড়া’ দাবি করে আবেদন ও চাকরির জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হলেও ডাক্তারি পরীক্ষায় তাদের প্রতারণা ধরা পড়েছে। লিঙ্গ নির্ধারণী পরীক্ষায় নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়েছে ওদের কেউই হিজড়া নয়, সকলেই প্রকৃতপক্ষে পুরুষ। হিজড়া সেজে ১২ পুরুষের চাকরি নেওয়ার অপচেষ্টার ঘটনায় সমাজসেবা অধিদফতরে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাদের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় পরীক্ষায় পুরুষ হওয়ার প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন। সাধারণ আর দশটা পুরুষের মতো তাদের লিঙ্গ (Penis), অণ্ডকোষ (Scrotum) ও শুক্রথলি (Testis) রয়েছে। তাদের প্রত্যেকের মুসলমানি হয়েছে।
প্রাকৃতিক নিয়মে নারীদের মতো তাদের কারও মাসিক হওয়ার রেকর্ড নেই। এছাড়া চুলের গড়ন, বুকে, হাতে ও পায়ে লোম থাকার আলামত পাওয়া গেছে।
লিঙ্গ নির্ধারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিকসহ বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এ চঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
নির্ভরযোগ্য ও দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ফরেনসিক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. হাবিবুজ্জামান চৌধুরীকে সভাপতি করে গঠিত চার সদস্যের মেডিকেল বোর্ড লিঙ্গ নির্ধারণী পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ২১ জুন চূড়ান্ত প্রতিবেদন ঢামেক অধ্যক্ষের কাছে দাখিল করা হয়।
সমাজসেবা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ফরেনসিক বিভাগের প্রতিবেদনটি রোববার সমাজসেবা অধিদফতরে পৌঁছেছে। কথিত হিজড়ারা সকলেই পুরুষ পরিচয়ে চাকরি পেতে যাচ্ছিল এ খবরে সমাজসেবা অধিদফতরে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
পুরুষ হয়েও পরিচয় গোপন করে হিজড়া হিসেবে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিতরা চাকরি পাবেন কি-না তা নিয়ে আলোচনার ঝড় বইছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মেডিকেল বোর্ড প্রধান অধ্যাপক হাবিবুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ওরা কেউ হিজড়া নয়, প্রকৃতপক্ষে পুরুষ।
সমাজসেবা অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক পারভীন মেহতাবের সঙ্গে সোমবার বিকেলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার খবর নিশ্চিত করে বলেন, রোববার রিপোর্টটি তাদের হাতে পৌঁছেছে।
তিনি বলেন, ৩০ জুন অর্থবছর শেষ হচ্ছে তাই তারা ব্যস্ত আছেন। খুব শিগগিরই তারা মহাপরিচালককে এ বিষয়ে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এ চাকরি প্রকৃত হিজড়াদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য, পরিচয় গোপন করে কোন পুরুষ এ চাকরি পেতে পারেনা বলে তিনি মন্তব্য করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি সমাজসেবা অধিদফতর হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় অফিস সহায়ক ও দারোয়ান পদে মোট ১৪ জন হিজড়াকে চূড়ান্তভাবে নিবাচিত করে। তাদের মধ্যে কথিত ওই ১২ হিজড়ার লিঙ্গ নির্ধারণের জন্য সমাজসেবা অধিদফতর থেকে ঢামেক অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খানকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেন।
ওই চিঠির প্রেক্ষিতেই চার সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক হাবিবুজ্জামান চৌধুরীকে সভাপতি করে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অন্যান্যরা ছিলেন ঢামেক গাইনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. ফেরদৌসি ইসলাম, অ্যানাটমি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শামীম আরা ও ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. মমতাজ আরা।
গত ২৬ এপ্রিল ওই ১২ কথিত হিজড়া- আনিশা ইয়াসমিন চৈতি, রাকিবুল ইসলাম, বিল্লাল হোসেন, সিরাজ গরামি, হৃদয় ইসলাম, মুন্নী, সোহাগ, মামুনুর রশীদ, তানভীর, মোস্তফা হোসেন, আরিফ হোসেন ও আরিফুল ইসলামের বাহ্যিক ও মেডিকো লিগ্যাল পরীক্ষা করা হয়।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মেডিকেল বোর্ড সদস্য প্রভাষক ডা. মমতাজ আরা জানান, ওরা হিজড়া কি-না তা জানতে প্রথমে স্বাভাবিক শারিরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এছাড়া সম্পুর্ণ পেটের (হোল অ্যাবডোমেন) আলট্রাসনোগ্রাম ও এক্সটারনাল জেনিটাল অরগান পরীক্ষা করা হয়।
ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ, এক্সরে অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগ ও নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। মোট ১৪ জনের মধ্যে ১২ জনের পরীক্ষা ঢামেকে হলেও বাকি দুজনের পরীক্ষা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে সম্পন্ন হয়। ওই পরীক্ষায় ওই দুজনকে পুরুষ হিজড়া হিসেবে রিপোর্ট দেন চিকিৎসকরা।
সমাজসেবা অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক পারভীন মেহতাব বলেন, তিনি দীর্ঘদিন যাবত হিজড়া ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে নিয়ে কাজ করছেন। চট্টগ্রাম চাকরিকালীন সময়ে এক শ্রেণির পুরুষরা পরিচয় গোপন করে হিজড়া সেজে ভালো টাকা পয়সা উপার্জন করেন তার প্রমাণ পান। এ বিষয়টি মাথায় থাকায় এবার তিনি চূড়ান্ত নিয়োগের আগে ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে লিঙ্গ শনাক্তের উদ্যোগ নেন বলে জানান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীতে পুরুষদের হিজড়া বানিয়ে অর্থ উপার্জনের একটি বড় চক্র গড়ে উঠেছে। চক্রের সদস্যরা এলাকা এলাকায় ঘুরে যে সকল পরিবারে মেয়েলি স্বভাবের ছেলে রয়েছে তাদের ফুসলিয়ে ভাগিয়ে নিয়ে হিজড়া পরিচয়ে অর্থ উপার্জনে জড়িত করে। রাস্তাঘাট, বাসে, ট্রেনে ও লঞ্চে রঙ মেখে মেয়ে সেজে টাকা পয়সা দাবি করে। না দিলে মানুষকে হেনস্তা করে।
ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের একজন শিক্ষক জানান, তাদের কাছে একজন হিজড়াদের গুরু এসেছিলেন। কথাবার্তার এক পর্যায়ে তিনি জানান, তার ও স্ত্রী সন্তান রয়েছে।