নিউজবাংলা: মঙ্গলবার, ৩০জুন:

ঢাকা: গম কেলেঙ্কারির ঘটনায় ফেঁসে যাচ্ছেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। পচা গমে মন্ত্রিত্বের পাশাপাশি দলীয় পদও হারাতে যাচ্ছেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই নেতা। দলের দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, অচিরেই মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন আসতে পারে। পরিবর্তনের তালিকায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রির নামও জোরালো হচ্ছে।

জানা গেছে, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম গম কেলেঙ্কারির ঘটনায় সংসদে যেমন সমালোচিত হচ্ছেন, তেমনি দলের মধ্যেও চাপে পড়েছেন। প্রভাবশালী এই মন্ত্রীর কর্মকাণ্ডে সরকার এবং দল উভয় অসস্তিতে পড়েছে।

১/১১-এর সময় দলীয় আন্দোলন এবং শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখে প্রধানমন্ত্রী ও সংগঠনের মধ্যে বিশেষ আস্থা অর্জন করেন কামরুল। ফলে পুরষ্কার স্বরূপ ২০০৮ সালে ঢাকার একটি আসন থেকে নির্বাচনে মনোনয়ন পান তিনি। নির্বাচনের পর দায়িত্ব পান আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর পদে। পরে ২০০৯ সালে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদেও দায়িত্ব পান।

প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামের দাপটে ওই সময়ে আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ প্রায় কোণঠাসা ছিলেন। নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি সবই হয়েছে কামরুল ইসলামের কথায়। সাব রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ ও বদলিতে একতরফা কর্তৃত্ব দেখিয়েছেন তিনি।

সাব-রেজিস্ট্রারদের দুর্নীতিরোধে মন্ত্রী শফিক আহমেদ ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামের কারণে তা কার্যকর করতে পারেন নি। এ নিয়ে একাধিকবার উষ্মাও প্রকাশ করেছিলেন শফিক আহমেদ। তবে দলীয় মন্ত্রী না হওয়ায় শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে তিনি এসব বিষয়ে নালিশ করার সুযোগও পাননি। উল্টো ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর শফিক আহমেদ মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েন। আর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ দায়িত্ব পান কামরুল ইসলাম। দায়িত্ব পেয়ে আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠেন তিনি। এসময় বিরোধী জোটের বিরুদ্ধে নানা সময়ে তিরস্কার ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আলোচিত-সমালোচিত হতে থাকেন কামরুল।

অভিযোগ রয়েছে দ্বিতীয় মেয়াদে পদোন্নতি পাওয়ার পর থেকেই গম কেনা, নিয়োগ ও বদলিসহ নানা পদক্ষেপে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতে শুরু করে। গেল দেড় বছরে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক পদ থেকে তিন অতিরিক্ত সচিবকে বদলি করিয়েছেন। তার সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নিজেই তার উপর ভীষণ ক্ষুব্ধ বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

তবে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে দলের ভেতরে সমালোচিত হন তিনি। ওই নির্বাচনের পর কামরুলসহ বিতর্কিত ভূমিকা রাখা নেতাদের বিরুদ্ধে অন্যান্য নেতারা নালিশ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সব অবগত আছি। প্রধানমন্ত্রী ওই দিন ক্ষোভও প্রকাশ করেছিলেন। এবার গম কেলেঙ্কারিতে কামরুল ইসলামের প্রতি সেই ক্ষোভ যেন প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে সংসদেও কথা বলেছেন। এতে ক্ষুব্ধ মহাজোটের শরীক নেতারাও। ফলে অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের মন্ত্রিত্বের পাশাপাশি দলীয় পদ হারানো এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

ব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত চারশ’ কোটি টাকার পচা গম আমদানি কেলেঙ্কারির পর খাদ্যমন্ত্রীর কর্মকাণ্ডের বিবরণ এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে। সাবেক এক মন্ত্রী খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গত দেড় বছরের নানা অপকর্ম রিপোর্ট আকারে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে।

প্রধানমন্ত্রীও পচা গম সম্পর্কে পুলিশসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে স্যাম্পলসহ অভিযোগ পেয়ে খাদ্যসচিব মুশফেকা ইকফাৎকে তিরস্কার করেছেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে আমদানিকৃত গমের নমুনা সংগ্রহ করার নির্দেশ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এসব গম কেনায় কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। তবে এত কিছুর পরও নিজের পক্ষে সাফাই গেয়ে চলছেন খাদ্যমন্ত্রী।

এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী জাগো নিউজকে বলেন, গম আমদানির বিষয়ে আমার অবস্থান পরিষ্কার। রোবাবার মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছি। এখানে কোনো দুর্নীতি বা অনিয়মের সুযোগ নেই। যেকোনো ধরনের তদন্ত মোকাবেলা করতে আমি প্রস্তুত রয়েছি।

 

 

নিউজবাংলা/একে