নিউজবাংলা: ১৯ জুলাই, রবিবার :
ঢাকা: রুপালি পর্দায় ‘মা’ চরিত্রটিকে তারা দর্শকের কাছাকাছি নিয়ে গেছেন। পর্দার বাইরে মায়ের যে চিরন্তন রুপ, সেটাই তারা ফুটিয়ে তুলেছেন অভিনয়ের দক্ষতায়। কখনো কখনো নায়ক-নায়িকাকে ছাপিয়ে ‘মা’ হয়েছেন গল্পের মেরুদন্ড। মায়ের অভিনয় বক্স অফিসে হুল্লোড় তুলেছে। তারা হয়েছেন পুরষ্কৃত। তবে তাদের সবচেয়ে বড় পুরষ্কার যুগ যুগ ধরে দর্শকের অকৃত্রিম ভালোবাসা। পর্দার বাইরেও মায়ের মতোই সম্মানের আসনে আসীন মা চরিত্রের অভিনেত্রীরা। মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে দেশজোড়া খ্যাতি কুড়িয়েছেন এমন কয়েকজন জনপ্রিয় অভিনেত্রীকে নিয়ে ‘ঢালিউড’ এর এই বিশেষ রচনা।

রাণী সরকার
দরিদ্র, নিম্নবিত্ত মায়ের চরিত্রেই বেশি অভিনয় করেছেন রাণী সরকার। ক্ষ্যাপাটে মায়ের চরিত্রে অনেক ছবিতে তাকে দেখা গেছে। একটু ঝগড়াটে, জীবন সংসারের উপরে বিতশ্রদ্ধ ধরনের চরিত্রে রাণী সরকার নিজেকে সহজে মানিয়ে নিতেন। প্রথম গায়িকা-নৃত্যশিল্পী হলেও পরে মঞ্চ, বেতার, টিভি এবং শেষে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন রাণী সরকার। বিষকন্যা, তানহা, চান্দা, তোমার আমার, কাঁচের দেয়াল, তালাশ, সুতরাং, পয়সে, সঙ্গম, বন্ধন, কাজল, ভাওয়াল সন্ন্যাসী, আগুন নিয়ে খেলা, অভিশাপ, আনোয়ারা, শীত বসন্ত, মোমের আলো, মায়ার সংসার যে আগুনে পুড়ি, অন্তরঙ্গ, মলুয়া, সমাপ্তি, আঁকাবাঁকা, ছদ্মবেশী, লাঠিয়াল, আবার তোরা মানুষ হ, দুই পয়সার আলতা, দেবদাস, চন্দ্রনাথ ইত্যাদি ছবিতে অভিনয় করেন।

মিনু রহমান
সাদাসিধে মধ্যবিত্ত পরিবারের শহুরে মা, গ্রামের শক্ত হাতে সংসার সামলানো গ্রামের মা, যেকোন মায়ের ভূমিকাতেই মিনু রহমান অনবদ্য। রুপালি পর্দায় মায়ের মুখ বললেই যে কয়েকটি চেহারা দর্শকমনে ভেসে উঠে তার মধ্যে প্রথমদিকেই থাকবে মিনু রহমানের মুখ। মিনু রহমান শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে দাসী, গুনাহগার, আগুনের আলো, হারানো মানিক, অনুরাগ, মাটির ঘর, ঘর সংসার, সাম্পানওয়ালা, সোনার হরিণ, চন্দ্রলেখা, রাজার রাজা, অংশীদার, মহানায়ক, দেনাপাওনা, মা ও মেয়ে, কুদরত, জনতা এক্সপ্রেস, লাল সবুজের চম্পা চামেলী, দোস্তী, ছক্কাপাঞ্জা, শাস্তি, নির্দোষ, সখিনার যুদ্ধ, পেনশন, সৎ ভাই, হিমালয়ের বুকে, অত্যাচার ইত্যাদি।

মায়া হাজারিকা
অভিজাত ঘরের অহংকারী মায়ের মুখ বলতেই যার নাম মনে আসে তিনি মায়া হাজারিকা। কূটচাল, ষড়যন্ত্র, শেষ বিচারে মা ছাড়া আর কিছুই যেন মনে হয় না মায়া হাজারিকাকে। ছবির শেষে বরাবরই নিজের ভুল বুঝতে পারেন মায়া হাজারিকা। নিজেকে ভাঙার চেষ্টা কখনোই করেননি। দর্শকের চোখে মায়া হাজারিকার একটাই রুপ। তাই অভিনেত্রী হিসেবে তিনি সমালোচকদের পছন্দের কেউ ছিলেন না। মায়া হাজারিকা অভিনীত ছবির মধ্যে রয়েছে সাত রং, গুনাইবিবি, মিলন, নয়নতারা, এই তো জীবন, সঙ্গম, যে আুগনে পুড়ি, বিনিময়, দিনের পর দিন, কন্যা বদল বাসরঘর, রুপালি সৈকতে, মাটির ঘর, মধুমতি, আরাধনা, স্বামী, বউরাণী, অংশীদার, মৌচোর, সুখের সংসার, মাসুম, ভঙাগড়া, রসের বাইদানী, মনপাগলা, আশানিরাশা, লড়াকু ইত্যাদি।

আয়েশা আখতার
বাংলার স্নেহময়ী মায়ের সাক্ষাৎ প্রতিমূর্তি ছিলেন আয়েশা আখতার। এমন সারল্য, এমন মমতা, এমন সন্তানের জন্য আকুতি কেবল বাস্তবের মায়েদেও মধ্যেই দেখা যায়। পর্দার মা আর বাস্তবের মায়ের মধ্যে কোনো ফারাক চোখে পড়ে না আয়শা আখতারের অভিনয়ে। ‘আসিয়া’ ছবিতে সিতারা সাত্তার নামে প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন আয়েশা আখতার। ঢাকা বেতারের অনুষ্ঠানে ‘মজিদের মা’ নামে পরিচিতি পান। লালন ফকির, দিন যায় কথা থাকে, মাটির ঘর, ঈমান, দি ফাদার, জন্ম থেকে জ্বলছি, রজনীগন্ধ্যা সহ বহু ছবিতে অভিনয় করেছেন আয়েশা আকতার। সোনালি দিনের প্রস্থানের সাথে সাথে আয়েশা আখতারের মতো মমতাময়ী মায়েরাও যেন প্রস্থান নিয়েছেন চলচ্চিত্র থেকে।

নিউজবাংলা/একে