নিউজবাংলা: ১৯ জুলাই, রবিবার :
চট্টগ্রাম: মাত্র দু’দফা ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। শহরে অলিগলি ভাসছে এখন বৃষ্টির জলে। শহরের ৮০ ভাগ এলাকার দোকানে পানি। ঘরে পানি। ডুবে গেছে সড়কগুলোও।

কোথাও কোমর, কোথাও বুক সমান পানি থইথই করছে। বৃষ্টির সাথে বাড়ছে পানির উচ্চতাও। বাড়ছে ক্ষতির পরিমাণও।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টায় ভারী বর্ষণ শুরু হয় রাত ১২ টায় কিছুটা কমে আসে। রাত ২টায় এক ঘণ্টা ধরে আরও একদফা ভারী বৃষ্টি হয়। এতে পানির নিচে তলিয়ে যায় চট্টগ্রাম মহানগর।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, আজ রবিবার ভোর থেকে চট্টগ্রাম শহরের অলিগলিতে পানি বাড়তে থাকে। বৃষ্টি না থামায় নগরীর বিভিন্ন হাট-বাজারের দোকানপাটে পানি ঢুকে কোটি টাকার পণ্য ও মালামাল ভিজে নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরবাড়ির ব্যবহার্য বিভিন্ন জিনিসপত্র। এছাড়া নগরীর ব্যস্ততম সড়কগুলো কোমর পানিতে ডুবে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এতে দুর্ভোগ নেমে এসেছে নাগরিক জীবনে।

সূত্র আরো জানায়, চট্টগ্রাম শহরে খুব কম জায়গা আছে পানিতে ডুবেনি। প্রায় ৮০ ভাগ জায়গার কোথাও কোমর, কোথাও বুক সমান পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। যেখানে হাঁটু সমান পানি সেখানেই শুধুমাত্র রিক্সা চলাচল করছে। বাস থেকে সিএনজি অটোরিক্সা চলাচল বন্ধ রয়েছে। বাস থেকে সিএনজি অটোরিক্সাগুলো রাতে যেখানে রাখা হয়েছিল সেখানেই ডুবে রয়েছে।

লোকজন জানায়, যানবাহন চলাচল না করায় নগরবাসি কোথাও যেতে পারছে না। ফলে ঘরে বসে টেলিভিশনের অনুষ্ঠান দেখেই ঈদের আনন্দ উপভোগ করছেন। কেউ কেউ পানি মাড়িয়ে পরিবারের জন্য শুকনো খাবারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য ছুটোছুটি করছেন।

নগরীর আরাকান সোসাইটির বাসিন্দা ফয়েজুর রহমান (৩৪) জানান, সোসাইটির সবকটি ভবনের নীচ তলা হাঁটু ও কোমর পানিতে ডুবে গেছে। ফলে ঘরে একরকম বন্দি হয়ে আছি।

হালিশহর কে-ব্লকের বাসিন্দা বাবুল সওদাগর (৫১) বলেন, হালিশহরের প্রায় ৯০ ভাগ ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গিয়ে নিত্যব্যবহার্য জিনিস ও আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। পুরো হালিশহর এলাকা কোমর পানিতে ডুবে থাকায় ব্যবসার কাজেও বের হতে পারছি না।

বহদ্দারহাটের মুদির দোকানি মোজাহের আলী (৪৬) বলেন, দোকানে পানি ঢুকে প্রায় ১০-১২ লাখ টাকার পণ্য নষ্ট হয়ে গেছে। পুরো বহদ্দারহাটের প্রায় শতাধিক দোকানের এক কোটি টাকার পণ্য ও মালামাল নষ্ট হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহরের রেয়াজউদ্দিন বাজার, খাতুনগঞ্জ, ফিরিঙি বাজার, কালামিয়া বাজার, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, চকবাজার, কাপাসগোলা, বাঁদুরতলা, কোতোয়ালি, নিউমার্কেট, সদরঘাট, আগ্রাবাদ, হালিশহর বন্দরটিলা, পাহাড়তলি, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, অক্সিজেন ও খুলশীর বিভিন্ন এলাকা বৃষ্টির পানিতে ভাসছে।

নগরবাসির অভিযোগ, শহরের প্রত্যন্ত এলাকার নালা-নর্দমায় ময়লা আবর্জনা আটকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় বৃষ্টির জলে ভাসছে চট্টগ্রাম শহর। দোকানপাট ও ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে নষ্ট হয়েছে কোটি টাকার পণ্য ও মালামাল।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরশেনের চান্দগাঁও ওয়ার্ডের কমিশনার সাইফুদ্দিন খালেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ভারী বৃষ্টির কারনেই চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রায় শত কোটি টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে। দুর্ভোগে পড়েছে নগরবাসি।

প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নগরীর জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের সমস্যা। যা নিরসনের চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছে সিটি-কর্পোরেশন। তবে ভারি বৃষ্টির কারনে এবার চট্টগ্রাম শহরে জলজটের সৃষ্টি হয়েছে। এটি একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ চৌধুরী জানান, শনিবার দিবাগত রাত ১০টা থেকে পরবর্তি ১০ ঘণ্টায় ৯৭.৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। একইভাবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে আরো তলিয়ে যেতে পারে চট্টগ্রাম শহর।

নিউজবাংলা/একে