মোবাইলে প্রেম ও বিয়ে, অতঃপর বাসর ঘরে লাশ
নিউজবাংলা: ২৫জুলাই, শনিবার :
নাটোর : নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্রী মরিয়ম খাতুন। স্বপ্ন ছিল ভালোবেসে ঘর বাঁধার। দীর্ঘ প্রেমের পর স্বপ্ন পূরণে বিয়েও হয় পছন্দের মানুষ জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে।
বিয়ের দিন মরিয়মের ছিল না নববধূর সাজ। বাসর ঘরেও ছিল না কোনো সাজসজ্জা। সাদামাটাভাবেই বিয়ে সম্পন্ন হয়। কিন্তু বাসর ঘরেই যে তার প্রেমের ইতি ঘটবে— কে জানত?
নাটোর জজকোর্টে বৃহস্পতিবার দুপুরে এফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ে হয় মরিয়ম ও জাহাঙ্গীর আলমের। কিন্তু শুক্রবার সকালে বাসর ঘর থেকে লাশ হয়ে ফেরেন নববধূ মরিয়ম।
মরিয়ম খাতুন নাটোরের সিংড়া উপজেলার ঢাকঢোর গ্রামের হুমায়ুন আহমেদের মেয়ে।
এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মরিয়ম খাতুনের সঙ্গে একই উপজেলার গোয়াল বাতান গ্রামের আকবর আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রেমের সম্পর্ক ধরে মাঝেমধ্যেই জাহাঙ্গীর মরিয়মদের বাড়িতে যাতায়াত করতেন। সেই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সকালে জাহাঙ্গীর মরিয়মের সঙ্গে দেখা করতে তাদের বাড়িতে যান। এ সময় মরিয়মের পরিবারের লোকজন জাহাঙ্গীরকে আটকে রেখে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন। একপর্যায়ে জোরপূর্বক দু’জনকে নাটোর জজকোর্টে নিয়ে এফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ে পড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর মরিয়মের বাড়িতে তাদের বাসর ঘরের ব্যবস্থা করা হয়। তবে বাসর ঘরে ছিল না কোনো সাজসজ্জা। নববধূ হিসেবে মরিয়মেরও ছিল না কোনো সাজ। রাতে জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়া নিয়ে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে মরিয়মের ঝগড়া হয়। সকালে ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় মরিয়মের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়।
মরিয়মের বাবা হুমায়ুন আহমেদ অভিযোগ করেন, রাতে জাহাঙ্গীর তার মেয়েকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার জন্য লাশ ঝুলিয়ে রাখে। জাহাঙ্গীরই তার মেয়ের হত্যাকারী।
তবে জাহাঙ্গীর হত্যার কথা অস্বীকার করে বলেন, জোর করে বিয়ে পড়ান নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। অভিমানে রাতের কোনো এক সময় মরিয়ম গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। গভীর ঘুমে থাকায় তিনি বিষয়টি টের পাননি।
সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন মণ্ডল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, খবর পেয়ে পুলিশ মরিয়মের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। জাহাঙ্গীর হোসেনকে আটক করা হয়েছে।
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে বিষয়টি হত্যা না আত্মহত্যা— তা নিশ্চিত হওয়া যাবে। ওই ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে জাহাঙ্গীরকে অভিযুক্ত করে সিংড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন বলেও জানান তিনি।
নিউজবাংলা/একে