নিউজবাংলা: ২৫জুলাই, শনিবার :

ঢাকা: বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দুই দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলন শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হয়েছে। ২৮ তম এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উদ্বোধন করেন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক প্রধান ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্ষমতার দুই মেয়াদেই ছাত্রলীগের নানা কর্মকান্ডে সমালোচনার মুখে পড়া প্রধানমন্ত্রী কথা বলেন সাংগঠনিক সহ বিভিন্ন বিষয়ে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের ছাত্রলীগের নেতারাই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসবে। আমি নিজেও ছাত্রলীগের কর্মী ছিলাম। আমাকে কোনো দিন কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ দেওয়া হয় নাই।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমি দেশের দুঃসময়ে রাজপথে ছিলাম, স্কুলের দেয়াল টপকিয়ে মিছিলে যেতাম, ৬ দফা ঘোষণার সময় ১৯৬৬ সালে বদরুন্নেছা কলেজের ভিপি ছিলাম কিন্তু আমাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখা হয় নাই। তাই সবাইকে ত্যাগের মহিমা নিয়ে ছাত্রলীগ করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে আদর্শ নিয়ে গড়ে উঠতে হবে। আদর্শ না থাকলে কোনো নেতৃত্ব তৈরি হয় না। ছাত্রলীগ মহান মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। বাঙ্গালির যা কিছু অর্জন তা আওয়ামী লীগের মাধ্যমে। এর এই অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ এবং অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে ছাত্রলীগ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি সামরিক শাসনের সময় দেশে যখন রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিলো তখন এই ছাত্রলীগের মাধ্যমেই জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কর্মীরা প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ত্যাগ স্বীকার করে আসছে। ত্যাগের মনোভাব আছে বলেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫-এ জাতির জনককে নির্মমভাবে হত্যার পর ছাত্রলীগ তার প্রতিবাদ জানিয়েছিল। এর পর থেকে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগ প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও অগ্রণী ভূমিকা রাখে। যার ফলশ্রুতিতে আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসে।

তিনি অভিযোগ করেন, আইয়ুব খানের মতো জিয়াও ঘোষণা দিয়ে দেশের ক্ষমতা দখল করেন। ক্ষমতা দখল করেই তিনি যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করেন। স্বাধীনতার চেতনা নস্যাৎ করার জন্য স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত-শিবিরকে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেন।

৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এবং বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের শাসকচক্রের কারাগার থেকে মুক্ত করার সংগ্রামে ছাত্রলীগ মূল ভূমিকা পালন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করতে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন হয়েছিলো ছাত্রলীগের উদ্যোগে।

যারা পড়াশোনায় মনোযোগী ও নিয়মিত ছাত্র ভোটের মাধ্যমে তাদের নেতা নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ভোটোর মাধ্যমে ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচন করতে হবে। কেউ বাধা দিবে না। তবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মনে রাখতে হবে যারা মেধাবী, পড়াশোনায় মনোযোগী এবং নিয়মিত ছাত্র তাদের নির্বাচিত করতে হবে।

ছাত্রলীগ নেতাদের বয়স বাড়লো দুই বছর

ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসা নেতাকর্মীদের বয়স দুই বছর বাড়িয়ে ২৭ থেকে বাড়িয়ে ২৯ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আগে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে আসার বয়স ২৭ করেছিলাম। কিন্তু দুই বছর পর সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও সম্মেলন হচ্ছে ৪ বছর পর। তাই তাদের বয়সের ক্ষেত্রেও মনে হয় একটা ‘গ্রেস’ পিরিয়ড দেয়া দরকার। পরে তিনি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নেতৃত্বের বয়স ২৯ বলে ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণাকে করতালি দিয়ে স্বাগত জানান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

উল্লেখ্য, বয়স জটিলতার কারণে অনেক যোগ্য নেতাই এবার ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসতে পারছিলেন না।

প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রত্যেকটি জেলায় সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং উপজেলায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ছাত্রলীগের মূলনীতি শিক্ষা,শান্তি ও প্রগতি। এর থেকে ভালো কোনো নীতি হতে পারে না।

এ সময় শিক্ষা বিস্তারে তার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে দেশের প্রত্যেকটি জেলায় অন্তত একটি সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন তিনি। এছাড়া প্রত্যেক উপজেলায় অন্তত একটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণাও দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি এলাকায় আমরা স্কুল করে দিচ্ছি। ইতোমধ্যে আমাদের সিদ্ধান্ত প্রতিটি জেলায় সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় করে দেব। যে উপজেলায় কোনো সরকারি স্কুল নাই, সেখানে আমরা সরকারি স্কুলে প্রতিষ্ঠা করবো।

সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দু’বছর পর পর সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও এবার সম্মেলন হচ্ছে চার বছর পর। ছাত্রলীগের সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগের সভাপতিত্বে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম প্রমুখ।

সারাদেশ থেকে আসা নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে দু’দিনব্যাপী সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ছাত্রলীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

 

নিউজবাংলা/একে