প্রাণঘাতী কেমিক্যাল মিশ্রিত আনারসে সয়লাব

নিউজবাংলা: ২৮জুলাই : মঙ্গলবার
ঢাকা: দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় অধিকাংশ আনারসই আসে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা থেকে। মধুপুর উপজেলার পাঁচটি বাজার থেকে প্রতিদিন সারাদেশে যায় দুইশর বেশি ট্রাক ভর্তি আনারস।

কিন্তু সব আনারসেই রয়েছে ক্ষতিকর কেমিক্যাল। হরমোন, গ্রোথ রেগুলেটর, ফরমালিনসহ আরও অনেক ক্ষতিকর কেমিক্যাল।
এলাকার বেশ কয়েকজন আনারস বাগানীর কাছ থেকে জানা যায়, তিন ধাপে স্প্রে করা হয় কেমিক্যাল। প্রথম ধাপে প্রয়োগ করা হয় হরমোন। আনারসে ফুল আসার সঙ্গে সঙ্গে হরমোন স্প্রে করা হয় যার ফলে আকারে বড় হয়ে বেড়ে উঠে আনারস। দ্বিতীয় ধাপে স্প্রে করা হয় ইথোফেন যা দ্রুত আনারসকে পাঁকিয়ে দেয়। আর তৃতীয় ও শেষ ধাপে স্প্রে করা হয় ফরমালিন যা পঁচনের হাত থেকে রক্ষা করে। আর ট্রাকে বেশিদিন সংরক্ষণ করতেই এমন সব কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাগানের পর বাগানে চলছে আনারসের কেমিক্যাল চক্র। অধিক মুনাফার আশায় ক্ষতিকর দিকটাই বেছে নিয়েছেন আনারস বাগানীরা। বাগানে প্রকাশ্যে আনারসে কেমিক্যাল স্প্রে করার দৃশ্য চোখে পড়লেও বাইরে তার খুবই কম।

মালিকদের সঙ্গে দরাদরি করে বাগানে গিয়েই বড় বড় আনারসে ফরমালিন স্প্রে করা হয়। আর স্প্রে করার একদিনের মধ্যেই কেটে বাজারে আনা হয়।

মধুপুরের জলছত্র ও ২৫ মাইল বাজারে ট্রাক ভর্তি আনারস সবচেয়ে বিক্রি হয়। শতশত সাইকেল, ভ্যান ও ঘোড়ার গাড়িতে করে আনা হয় আনারস যাদের সবগুলোতেই দেয়া থাকে ফরমালিন। আর ফরমালিনযুক্ত ওইসব আনারস দিয়েই ভর্তি হয় দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি ট্রাক।

স্থানীয় আনারস চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশ কয়েকটি হরমোন যেমন- সুপারফিক্স, প্যানোফিক্স, ওকুজিন, ক্রপসকেয়ার এর প্রভাবে ফুল আসার এক থেকে দেড় মাসের মাথায় ফল হয়। অধিকাংশ ফলই ৩ থেকে ৫ কেজি ওজনের আনারসে পরিণত হয়।
আগাম ফলনের জন্যও স্প্রে করা হয় হরমোন। রাইপেন বা টমটম ব্যবহার করা হয় ফলের রং এর জন্য। এগুলোর প্রভাবে এক থেকে তিন দিনের মধ্যে ফলের রং লাল হয়। কিন্তু হরমনোর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কিছুই জানেন না তারা। খারাপ দিক থাকলে বাজারে কোনো কেমিক্যাল থাকতো বলে জানান অনেক বাগানী।

আনারসে হরমোন প্রয়োগের বিষয়ে মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. হযরত আলী  বলেন, আনারসে ইথিলিন বা ইথোফেন দিয়ে ফল পাকালে ফলের স্বাভাবিক কোনো স্বাদ ও গন্ধ থাকে না। তবে সবার আগে সচেতন হতে হবে ভোক্তাদেরকে। ভোক্তারা যদি সচেতন হন তাহলে কৃষকরাও কেমিক্যালমুক্ত আনারস উৎপাদনে উৎসাহী হবে।

ভোক্তাদেরকে সচেতন করার বিষয়ে তিনি বলেন, কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য রাখলে কেমিক্যালমুক্ত আনারস পেতে পারেন ভোক্তারা। সেক্ষেত্রে তাদেরকে লক্ষ্য রাখতে হবে-

১. আনারসের আকার খুব বেশি বড়ও হবে না আবার ছোটও হবে না।

২. প্রাকৃতিকভাবে পাঁকা আনারসের গোড়ার দিকটা হলুদাভ এবং উপরের দিকটা সবুজাভ থাকবে।

৩. পাঁকা আনারসের সুগন্ধ থাকবে।

নিউজবাংলা/একে