টাঙ্গাইল পুলিশ রেশন স্টোরের ৭১ লাখ টাকা আত্মসাতের দায়ে সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল মামুনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
নিউজবাংলা: ৩০জুলাই : বৃহস্পতিবার:
বিশেষ প্রতিনিধি, টাঙ্গাইল:
টাঙ্গাইল পুলিশ রেশন স্টোরের সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (বর্তমানে চাকুরীচ্যুত) মোঃ আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে ১২ ব্যক্তির কাছ থেকে ৭১ লাখ ৬০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন গতকাল বুধবার টাঙ্গাইল মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছে। সমন্বিত জেলা কার্যালয়, টাঙ্গাইলের উপ-সহকারি পরিচালক মোস্তফা বোরহান উদ্দিন আহম্মদ বাদি হয়ে দন্ডবিধির ৪২০ ও ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয়ের ২০১৪ সালের ৫ মার্চ ৭১০৫ স্মারকে সমন্বিত জেলা কার্যালয়, টাঙ্গাইলের ই/আর নং-২১/২০১৪-এর অভিযোগের ওপর টাঙ্গাইলের সাবেক উপ-সহকারি পরিচালক কমল কুমার রায় সরেজমিনে অনুসন্ধান করেন। এতে দেখা যায়, মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন (৫৯) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পুলিশ রেশন স্টোর, জেলা পুলিশ টাঙ্গাইল হিসেবে ২০০৫ হতে ২০১২ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। সে সময় অবৈধভাবে পুলিশ রেশন স্টোরের মালামাল কম মূল্যে বিক্রয়ের সুবিধা প্রদানের নামে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে এককালীন টাকা গ্রহণ করেন। এছাড়াও ১৫০ টাকার নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে মাসিক বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে টাকা গ্রহণ করেছেন। যার পরিমাণ আনুমানিক কয়েক কোটি টাকা। এর মধ্যে তার কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় ব্যক্তিদের শালিসী মধ্যস্থতার নামে ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা ফেরত পাওয়ার উদ্দেশ্যে চেক দেন। তার হিসাবে টাকা না থাকায় চেকগুলো ডিজঅনার হয়।
যাদের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ঃ জাতিসংঘ মিশনে আইভরি কোস্টে কর্মরত কনষ্টেবল (৩৮৬) মোঃ ফিরোজ মিয়ার স্ত্রী গোলেনুর বেগমের পুত্র মোঃ শাকিব হোসেনের কাছ থেকে ১৫০ টাকার স্ট্যাম্পে রেশন স্টোরে কর্মরত উচ্চমান সহকারি এ এ এস বজলুর করিমকে সাক্ষী করে মাসিক ৫ হাজার টাকা সুদ প্রদানের শর্তে ২০১০ সালের ৩১ অক্টোবর ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেন। এর মধ্যে ২০ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে অবশিষ্ট টাকা আত্মসাত করেন। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ধুলেরচর গ্রামের শামছুল হকের স্ত্রী শামীমা নাসরিনের কাছ থেকে ১৫০ টাকার স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে অবশিষ্ট ৩ লাখ টাকা আত্মসাত করেন। ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার বাস্তা গ্রামের মৃত মেহের আলীর পুত্র মোঃ ফজলুর রহমানের কাছ থেকে ২০০৭ সালের ২৩ ফেব্র“য়ারি ২ লাখ টাকা নিয়ে আত্মসাত করেন। টাঙ্গাইল সদরের ধুলেরচর গ্রামের মৃত আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী রওশনারা বেগমের কাছ থেকে ৯০ হাজার টাকা, একই গ্রামের মৃত কছিম উদ্দিনের পুত্র আনজু মিয়ার কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা, হাজরাঘাটের মোঃ হুমায়ুন কবীরের স্ত্রী নাজমুন নাহারের কাছ থেকে ১লাখ টাকা, কাগমার গ্রামের মোঃ মজনু মিয়ার স্ত্রী নাছিমা বেগমের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা, সারুটিয়া গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিন সিকদারের পুত্র আবদুল কাদেরের কাছ থেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা, সাব ইন্সপেক্টর আঃ রউফ-এর কাছ থেকে ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা ঋণ হিসেবে নিয়ে আত্মসাত করেন।
এছাড়াও শহরের আকুর টাকুর পাড়ার আলহাজ্ব কে এ রকিব-এর স্ত্রী বিলকিছ রকিব-এর কাছ থেকে ১মাসের মধ্যে পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে ৪০ লাখ টাকা নিয়ে আত্মসাত করেন। মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানার পটিলাপাড়া গ্রামের মৃত সমেজ উদ্দিনের পুত্র টাঙ্গাইল ডিএসবি’র কনষ্টেবল (৪১০) মোঃ মোসলেম উদ্দিনের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা, একই থানার মালসি গ্রামের মোঃ আনোয়ার হোসেনের পুত্র টাঙ্গাইল পুলিশ লাইনের কনষ্টেবল (১৩২৬) মোঃ ছানোয়ার হোসেনের কাছ থেকে ১লাখ টাকা নিয়ে আত্মসাত করেন।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা পুলিশ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা (৬/২০১২) করে, বিভাগীয় মামলার তদন্তের পর তার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ৭১ লাখ ৬০ হাজার টাকা আত্মসাতের ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৪ সালের ৬ মার্চ পুলিশ সুপার তাকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করেন।
আবদুল্লাহ আল মামুন মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার তালুকদারনগর গ্রামের মৃত মোকশেদ আলীর পুত্র। তিনি বর্তমানে মানিকগঞ্জ সদরের পশ্চিম বান্দুরিয়া এলাকার ১২৩ নম্বর বাসায় থাকেন।
নিউজবাংলা/একে