নিউজবাংলা: ১৪ আগস্ট, শুক্রবার:
ঢাকা: হজযাত্রীরা হজের মূল আনুষ্ঠানিকতার সময় বাদে সৌদি আরবে অবস্থানকালে মক্কার ঐতিহাসিক স্থানগুলো পরিদর্শন করে থাকেন। আজকের আয়োজনে মক্কা শরিফের দর্শনীয় কিছু স্থানের পরিচিতি তুলে ধরা হলো।

 

জাবালে নূর বা হেরা পর্বত
মক্কার হারাম এলাকার কাছে জাবালে নূর বা হেরা পর্বত অবস্থিত। এই পর্বতে ওঠা-নামা বেশ কষ্টসাধ্য বিষয়। অথচ নবী করিম (সা.) এই পর্বতে ওঠা-নামা করেছেন নিয়মিত। তাকে খাবার দিতে হজরত খাদিজা (রা.) নিয়মিত এখানে যাতায়াত করতেন।

আরবি জাবাল শব্দের অর্থ পাহাড়, আর জাবালে নূরের অর্থ নূরের পাহাড়। এ পাহাড়ের উচ্চতা ৫৬৫ মিটার অর্থাৎ অর্ধকিলোমিটারের কিছু বেশি। জাবালে নূরের শীর্ষে আরোহণ করতে সময় লাগে সোয়া ঘণ্টার মতো, আর নামতে সময় লাগে আধা ঘণ্টা। শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এই গুহায় বসে ধ্যান করতেন এবং পবিত্র কোরআন শরিফের প্রথম আয়াত এখানে অবতীর্ণ হয়। এসব জায়গা দেখতে পাওয়া বেশ সৌভাগ্যের বিষয়। তাই হজের সফরে হাজী সাহেবরা এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না।
জাবালে সাওর বা সাওর গুহা
জাবালে সাওর। এটি কাবা শরিফ থেকে তিন মাইল দূরে অবস্থিত। জাবাল মানে পাহাড়, সাওর অর্থ গুহা। হিজরতের সময় মক্কা থেকে মদিনায় যাওয়ার পথে শত্রুর হাত থেকে বাঁচতে হজরত আবু বকর (রা.)-কে নিয়ে সাওর পর্বতের গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তিন দিন তিন রাত তারা এই গুহায় কাটিয়েছেন। শত্রুরা খুঁজতে খুঁজতে চলে গিয়েছিল গুহার খুব কাছে। কিন্তু গুহামুখে মাকড়সার জাল দেখে ফিরে যায় তারা। এই তথ্য আমাদের অনেকেরই জানা।

এই পাহাড়ের প্রবেশ মুখে একটি বড় সাইনবোর্ডে দর্শনার্থীদের পাহাড়ে উঠতে নিষেধ করা আছে। লেখা আছে, এই পর্বতে আরোহণ করার মধ্যে কোনো অতিরিক্ত সওয়াব নেই। তার পরও হাজী সাহেবরা এখানে আরোহণ করেন বেশ উৎসাহ নিয়ে।
আরাফা ময়দান
মক্কা শরিফ থেকে দক্ষিণ-পূর্বদিকে আরাফা প্রান্তর অবস্থিত। আরাফার উত্তর দিক পর্বত শ্রেণী দ্বারা বেষ্টিত। পবিত্র বায়তুল্লাহ থেকে ১৮ কি.মি. দক্ষিণ পূর্ব কোণে আরাফা। দুনিয়ার বুকে প্রথম মানব হজরত আদম (আ.) ও হজরত হাওয়া (আ.)-এর পুনঃমিলনের স্থান এটা। হজরত ইবরাহিম (আ.) সহ বহু নবী-রাসূল ও তাদের অনুসারীরা এ ময়দানে এসে আল্লাহর নিকট কান্না কাটি করেছেন। আরাফা ময়দান পূর্ব-পশ্চিমে প্রস্থে ৪ মাইল এবং দৈর্ঘে ৭-৮ মাইল। এ বিরাট ময়দান নিম গাছে গাছে ঢাকা ।

মসজিদে নামিরা
আরাফা ময়দানের অন্যতম উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় বস্তু মসজিদে নামিরা। হিজরি দ্বিতীয় শতাব্দীর মধ্যভাগে এটি নির্মিত হয়। আরাফার পশ্চিম সীমানার উপরে এটি অবস্থিত। আরাফার দিনে সম্ভবত রাসূল (সা.) এখানে দাঁড়িয়েই নামাজের ইমামতি করেন। মসজিদটি কয়েকবার পুনঃনির্মাণ এবং বর্ধিত করা হয় শেষ বারে পুনঃনির্মিত হয় সৌদী শাসনামলে। মসজিদের অধিকাংশ অংশ আরাফার মধ্যে এবং পশ্চিমাংশ আরাফার বাইরে রয়েছে। মসজিদটির আয়াতন ১১০,০০০ বর্গমিটার। এই মসজিদে রয়েছে ছয়টি মিনার, দশটি ডোম এবং দশটি প্রধান ফটক। এর নির্মাণ শৈলী বড়ই চমৎকার।
জাবালে রহমত
আরাফা ময়দানের উত্তর-পূর্ব কোণে ছোট্ট একটি পাহাড় জাবালে রহমত। সমতল ভুমি থেকে এর উচ্চতা ৬৫ মিটার এবং মসজিদে নামিরা থেকে ১.৫ কি.মি. দূরে এ পাহাড়টি দাঁড়িয়ে আছে। পাহাড়ের মধ্যভাগে রয়েছে একটি বড় পাথর যেখানে দাঁড়িয়ে রাসূল (সা.) আরাফা দিবসের শেষ প্রহর থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনায় কাটিয়ে ছিলেন। সে সময় রাসূলের উটটি কেবলামুখী হয়েছিল।

জান্নাতুল মোয়াল্লা
জান্নাতুল মোয়াল্লা মসজিদুল হারামের পূর্ব দিকে অবস্থিত মক্কা শরিফের একটি বিখ্যাত কবরস্থান। এই কবরস্থানে কোনো কবর বাঁধানো নয়, নেই কোনো কবরে নামফলকও। এখানে অনেক সাহাবির কবর আছে। আছে নবী করিম (সা.)-এর স্ত্রীদের কবর। এই কবরস্থানে হাজী সাহেবরা জিয়ারতে এসে নিজেদের মতো করে মোনাজাত করে থাকেন। আগে হজ করতে এসে কেউ মারা গেলে এখানে কবর দেওয়া হতো। স্থান সংকুলান না হওয়ায় এখন ভিন্ন কবরস্থানে দাফন করা হয়।
মসজিদে জিন
সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, ইসলামের প্রথম দিকে জিনদের একটি প্রতিনিধি দল এখানে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে একাধিকবার এসেছেন। তারা মুসলমান হয়েছে ও কোরআন শিখেছেন। এখানে খুব সুন্দর একটি মসজিদ রয়েছে। ওই মসজিদকেই মসজিদে জিন বলা হয়।
মক্কা জাদুঘর
কাবা শরিফের কাছে উমরা মসজিদে যাওয়ার পথে অবস্থিত মক্কা জাদুঘর। এই জাদুঘরে প্রবেশের জন্য কোনো ফি নেই। জাদুঘরে আছে সৌদি আরবের প্রাচীন সংস্কৃতি, পোশাক-পরিচ্ছদ, আসবাব, বাদ্যযন্ত্র। আছে আরবি বর্ণমালা বিবর্তনের নিদর্শন। এক কোনায় রয়েছে পানির কূপ, কূপ থেকে পানি তোলার যন্ত্রপাতি। পাশের কক্ষে আছে প্রাচীন ধাতব মুদ্রার সংগ্রহ। মুগ্ধ হওয়ার মতো বেশ কিছু আরবি ক্যালিগ্রাফি আছে একটি কক্ষে। প্রতিটি কক্ষেই পাহারাদার আছেন। রয়েছে হাতে লেখা পবিত্র কোরআন শরিফ। হজরত উসমান (রা.)-এর আমলের কোরআন শরিফও আছে এই জাদুঘরে। আরও আছে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সম্পূর্ণ বংশলতিকা। আছে কুরাইশসহ আরবের বিখ্যাত গোত্র ও বংশের পরিচয়।
কাবার গিলাফ তৈরির কারখানা
মক্কা শরিফের উম্মুল জুদ এলাকায় পবিত্র কাবা শরিফের গিলাফ তৈরির কারখানা। সময় থাকলে এটাও দেখে আসতে পারেন

নিউজবাংলা/একে