নিউজবাংলা: বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন:

রমজান মাস; রোজা; সেহরি; ইফতার এসবই একসূত্রে গাঁথা। যখনই রমজান মাস আসে; বান্দাহ তখন নিজের মন-মর্জি মতো কোনো কিছু করতে পারে না। তার প্রতিটি কথা, কাজ, সমর্থন, ইশারা-ইঙ্গিত সবই আল্লাহর ইচ্ছাধীন। সুতরাং রমজানের কর্মের ব্যাপারে আল্লাহ হুকুম ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইওয়াস সাল্লামের আনুগত্য করা আবশ্যক। তাইতো রমজানের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদিগুলোর সবগুলোই ইবাদত। এর প্রত্যেকটিরই সময়-সীমা নির্ধারিত। আমরা ইতিপূর্বে রমজান মাস, রোজা, ইফতার, তারাবিহ সংশ্লিষ্ট আলোচনা করেছি। আজ আমরা জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য সেহরি নিয়ে কিছু কথা তুলে ধরবো-



হাদিসে এসেছে- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইওয়াস সাল্লাম বলেছেন, ‘সেহরি খাওয়া বরকতপূর্ণ কাজ। সুতরাং তোমরা তা পরিত্যাগ করো না। এক ঢোক পানি দিয়ে হলেও সেহরি করো। কারণ যারা সেহরি খায় আল্লাহ তায়ালা তাদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন।’ (মুসনাদে আহমদ: ইবনে হিব্বান)

যেহেতু সেহরি খাওয়া বরকতের কাজ। সুতরাং ক্ষুধা লাগুক আর না লাগুক; খেতে ইচ্ছা হোক আর না হোক; তবুও সামান্য পরিমান হলেও খাবার খেয়ে নেয়া বরকতের কাজ। এ ক্ষেত্রে উদর ভর্তি করে খাওয়া আবশ্যক নয়। যদি কেউ শুধু পানি পান করে, শরবত পান করে বা একটি খেজুর খায় তবে কেউ এ বরকত থেকে বঞ্চিত হবে না।

এ সেহরি নিয়ে অগণিত অসংখ্য হাদিস রয়েছে; রাসল সাল্লাল্লাহু আলাইওয়াস সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা সেহরি খাও। কেননা, সেহরিতে বরকত রয়েছে।’ (সহিহ মুসলিম) সুতরাং বোঝা গেল সেহরি খাওয়া সুন্নাত।

ইফতার যেমন তাড়াতাড়ি খাওয়া সাওয়াবের কাজ; তেমনি সেহরি দেরিতে খাওয়া সাওয়াবের কাজ। আর সুবহে সাদেক তথা ভোর রাতের শেষ সময়ে সেহরি খাওয়া মোস্তাহাব বা উত্তম। এর মানে এই নয় যে, ফজরের সময় হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইওয়াস সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ সকল আম্বিয়ায়ে কেরামকে তাড়াতাড়ি ইফতার করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং সেহরি দেরি খাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তাইতো ‘সাহাবায়ে কেরাম আজমাঈন ‘সময় হওয়ার সাথে সাথে (দেরি না করে) ইফতার করতেন এবং সেহরির শেষ সময়ে সেহরি খেতেন।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা)

হজরত জায়েদ ইবনে সাবেত রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইওয়াস সাল্লামের সাথে সেহরি খেলাম, অতঃপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইওয়াস সাল্লাম নামাজের জন্য দাঁড়ালেন। আমি বললাম, আজান ও সেহরির মধ্যে ব্যবধান কী? তিনি বললেন, পঞ্চাশ আয়াত পড়ার পরিমাণ সময়।’ (বুখারি ও মুসলিম)

সহিহ বোখারির অপর এক বর্ণনায় আছে, হজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, ‘ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইওয়াস সাল্লাম ও জায়েদ ইবনে সাবেত রাদিয়াল্লাহু আনহু একসঙ্গে সেহরি খান, যখন সেহরি খাওয়া শেষ করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইওয়াস সাল্লাম নামাজের জন্য দাঁড়ান এবং নামাজ আদায় করেন। আমরা আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললাম, সেহরি ও নামাজ আরম্ভের মধ্যে ব্যবধান কি ছিল? তিনি বললেন, যতটুকু সময়ে একজন ব্যক্তি পঞ্চাশ আয়াত তেলাওয়াত করতে পারে।’

বোঝা গেল সেহরি খাওয়া শুধু খাওয়াই নয়; বরং ইহা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইওয়াস সাল্লামের গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। সুতরাং আমরা যদি সে নিয়মে সেহরি খাই; অন্যান্য নফল ও মান্নতের রোজার সেহরি খাওয়ার চেয়ে অনেকগুণ বেশি সাওয়াব হবে। সুতরাং আমরা সেহরি খাওয়ার এই অনন্য ইবাদত থেকে নিজেদেরকে বিরত না রেখে ইবাদতের নিয়তে স্বতস্পুর্তভাবে সেহরি খাব। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইওয়াস সাল্লামের একটি সুন্নতকে সমাজে জারি করবো। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইওয়াস সাল্লামের এই সুন্নাত জারির উছিলায় আমাদের পরকালের নাজাত তরান্বিত হতে পারে। আল্লাহ  তাআ’লা আমাদের কবুল করুন। আমীন।

তথ্যসূত্র : সহিহ বুখারি, মুসলিম, জামে আত-তিরমিজি, ইবনে হিব্বান, মুসনাদে আহমদ, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা।

আগামীকাল পড়ূন : সাদকায়ে জারিয়া বা যে সাওয়াব চলমান ও গুনাহ থেকে রক্ষার দোয়া।

জাগো নিউজ ২৪ ডটকমের সঙ্গে থাকুন। রমজান সম্পর্কিত সুন্দর সুন্দর ইসলামী আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদীস মোতাবেক আমলী জিন্দেগী যাপন করে রমজানের রহমত, বরকত ও মাগফেরাত অর্জন করুন। আমীন, ছুম্মা আমীন।

 

নিউজবাংলা/একে